ট্রাম্পের শুল্ক নীতি: যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ায় শেয়ারবাজারে ধস

SHARE

আমেরিকা ও এশিয়ার শেয়ার বাজারের পতন ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগের কারণে এই পতন ঘটেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

একটি টিভি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি পরিবর্তনের সময়কালে রয়েছে, এর পরেই শেয়ার বাজারে পতনের ঘটনা ঘটেছে।
ট্রাম্পকে তখন সম্ভাব্য মন্দার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। স্থানীয় সময় গত রবিবার ট্রাম্পের এই মন্তব্য সম্প্রচারিত হয়, এরপর থেকেই ট্রাম্পের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং উপদেষ্টারা বিনিয়োগকারীদের ভয় কমানোর চেষ্টা করছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রেকর্ড করা ফক্স নিউজের একটি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কথা স্বীকার করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তখন ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি এই ধরণের ভবিষ্যদ্বাণী করতে ঘৃণা করি।
এখন একটি পরিবর্তনের সময় চলছে, কারণ আমরা যা করছি তা আকারে খুবই বড়। আমরা আমেরিকার সম্পদ ফিরিয়ে আনছি। এটি একটি বড় বিষয়।’

আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিনের শুরুতেই জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পায়, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে যায় এবং অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়।
বৃহত্তম আমেরিকান কম্পানিগুলোর ওপর নজর রাখে এস এণ্ড পি ৫০০।

গতকাল সোমবার (১০ মার্চ) নিউইয়র্ক শেয়ারবাজারে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২ দশমিক ৭ শতাংশ হ্রাস পায়, অন্যদিকে ডাও জোন্স ২ শতাংশ কমে যায়। টেক-হেভি স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য সর্বাধিক পরিচিত ‘ন্যাসডাক’ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ৪ শতাংশ পতন ঘটে।

টেসলার শেয়ার ১৫.৪ শতাংশ কমেছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ জায়ান্ট নাভিদিয়ার শেয়ার কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। মেটা, অ্যামাজন এবং অ্যালফাবেটসহ অন্যান্য প্রধান প্রযুক্তির শেয়ারের মূল্যও তীব্রভাবে কমেছে।

আর্থিক পরিষেবা সংস্থা কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেছেন, ‘ট্রাম্প রাজনৈতিক নেতাদের শুল্ক নিয়ে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে ধারণা নিতে বাধ্য করছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, তিনি বিনিয়োগকারীদেরও এ সম্পর্কে ধারণা করতে বাধ্য করছেন আর এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে বাজারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মন্দা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ব্যবসায়ীদের নিজেদের বাঁচতে হবে, এমন মানসিকতায় ফেলার জন্য যথেষ্ট।’

অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টারা আশ্বস্ত করেন, এসব নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়ছে এবং উৎপাদন পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। দিনের শেষের দিকে একটি পৃথক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই বলেছেন, ‘আসলে শিল্প নেতারা ট্রাম্পের এজেন্ডার প্রতি সাড়া দিয়েছেন, এর মধ্যে রয়েছে শুল্কসহ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি।’

গত সপ্তাহে প্রধান মার্কিন বাজারগুলো আগের স্তরে ফিরে এসেছিল। অর্থাৎ গত নভেম্বরে ট্রাম্পের নির্বাচনী জয়ের আগে দেখা স্তরে ফিরে আসে। প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারীরা কর হ্রাসের আশা করেছিল এবং বাজারে নিয়ন্ত্রন শিথিলের আশা করেছিল।

অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ এল-এরিয়ান বলেন, ‘প্রথম দিকে বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের কর ছাড় ও নিয়ন্ত্রণ শিথিলের পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। তবে এখন তারা বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন।’ তবে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হাসেট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে এবং ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ইতোমধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।

বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, অন্য দেশের পণ্যে ওপর ট্রাম্প শুল্ক বসানোর ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাবে এবং বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। কিলিক অ্যান্ড কোং-এর বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক র‍্যাচেল উইন্টার টুডে প্রোগ্রামকে বলেন, ‘আমার মনে হয় ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করছেন, নিঃসন্দেহে তা ভবিষ্যতে কোথাও না কোথাও মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করবে।’

চীন, মেক্সিকো এবং কানাডাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ মাদক এবং অভিবাসীদের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ এনে ট্রাম্প এই পদক্ষেপগুলো নিয়েছে। তাবে তিনটি দেশ ট্রাম্পের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

সূত্র: বিবিসি