খনিজ না দিলে ইউক্রেনে স্টারলিংক বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

SHARE

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ পাওয়ার জন্য কিয়েভের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। মার্কিন আলোচকেরা ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে দেশটিতে ইলন মাস্কের গুরুত্বপূর্ণ স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের প্রাথমিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
এরপর মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের আলোচনায় স্পেসএক্সের মালিকানাধীন স্টারলিংকের ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের বিষয়টি উঠে আসে। স্টারলিংক যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করে।

বৃহস্পতিবার মার্কিন বিশেষ ইউক্রেন দূত কিথ কেলগ এবং জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকের সময় এই বিষয়টি আবারও উত্থাপিত হয়েছে বলে আলোচনা সম্পর্কে অবহিত এক সূত্র জানিয়েছেন। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, বৈঠক চলাকালীন ইউক্রেনকে বলা হয়েছিল, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বিষয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে পরিষেবাটি (স্টারলিংক) বন্ধ হয়ে যাবে।

সূত্রটি জানায়, ‘ইউক্রেন স্টারলিংকের ওপর নির্ভরশীল। তারা এটিকে তাদের নর্থ স্টার বলে মনে করে। স্টারলিংক হারানো … একটি বিশাল আঘাত তাদের কাছে।’

যুদ্ধকালীন সাহায্যের জন্য ওয়াশিংটনকে ফেরত দেওয়ার জন্য ইউক্রেন থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদের দাবি করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
কিন্তু এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকা কোনো নির্দিষ্ট নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেয়নি।’

গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় দল একটি চুক্তিতে কাজ করছে। ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘তিনি আশা করেন শিগগিরি একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।’

এর আগে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ধ্বংস হয়ে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনের জন্য মাস্ক হাজার হাজার স্টারলিংক টার্মিনাল ইউক্রেনে পাঠিয়েছিলেন।
ইউক্রেনে তাকে তখন নায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। তবে পরে অন্তত একবার তিনি দেশটিতে তার কম্পানির পরিষেবা সীমিত করেন। তখন তিনি কিয়েভের যুদ্ধ পরিচালনা কৌশল নিয়ে সমালোচনামুখর ছিলেন।

ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত অবসান ঘটানোর জন্য ট্রাম্পের প্রচেষ্টা নিয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতারা দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কেউ হাজার হাজার ফেডারেল কর্মীকে হত্যা এবং ফেডারেল সংস্থাগুলো বন্ধ করার জন্য মাস্কের দ্রুত প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আটলান্টিক কাউন্সিলের একজন সিনিয়র ফেলো মেলিন্ডা হ্যারিং বলেছেন, ইউক্রেনের ড্রোন পরিচালনার জন্য স্টারলিংক অপরিহার্য ছিল। এটি তাদের সামরিক কৌশলের একটি মূল স্তম্ভ।

তিনি আরো বলেন, ‘স্টারলিংক হারানো একটি গেম চেঞ্জার হবে। ড্রোন ব্যবহার এবং আর্টিলারি শেলের ক্ষেত্রে ইউক্রেন এখন রাশিয়ার সঙ্গে ১:১ সমতায় রয়েছে।

ইউক্রেনের বিভিন্ন ধরণের ড্রোন ক্ষমতা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সমুদ্র ড্রোন এবং নজরদারি ড্রোন থেকে শুরু করে দূরপাল্লার মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী যান। ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইউক্রেনীয় দূতাবাস হোয়াইট হাউস এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।

স্টারলিংক পরিচালনাকারী স্পেসএক্সও তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। জেলেনস্কি গত সপ্তাহে এক বিশদ মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ওয়াশিংটন ও মার্কিন কম্পানিগুলো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদের ৫০ শতাংশ মালিকানা চায়।

এসব খনিজের মধ্যে গ্রাফাইট, ইউরেনিয়াম, টাইটানিয়াম এবং লিথিয়াম উল্লেখযোগ্য। এরপর থেকে দুই নেতার মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প গত বুধবার জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত একনায়ক’ বলেও অভিহিত করেন।

সূত্র: রয়টার্স