ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার নামে ৫৪ মামলা, বিদ্যমান আইনে কি বিচার সম্ভব

SHARE

২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনেই বিচারের উদ্যোগ নেয় তারা। ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত হয় আইনটি। যদিও ২০১০’র আগে এই আইনে বিচার বা সাজা হয়নি কারও।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সংসদ অধিবেশনে একটি মৌখিক প্রস্তাবও পাশ হয়। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকেও বিচারের আওতায় আনার বিধান যুক্ত করে কিছু সংশোধনী আনা হয় আইনে।

ওই আইনের ৩ এর ১-এ বলা আছে, মানবতাবিরোধী ও শান্তিবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন বিরোধী কাজসহ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা দল, সেনাবাহিনী কিংবা তাদের সহযোগী সশস্ত্রবাহিনীর বিচারের ক্ষমতা আছে ট্রাইব্যুনালের।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এখন পর্যন্ত ৫৪টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’-এর প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, বিদ্যমান সেই আইনের ক্ষমতায় কি ২০২৪-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্ভব? সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও ফৌজদারি অপরাধ বিশেষজ্ঞ এস এম শাহজাহান বলছেন, ৩৭ বছরে যে আইনে বিচার হয়েছে, তার ১৪ বছর পর এসেও বাধা নেই। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধিগুলোও ব্রিটিশ আমলে প্রণীত।

আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, তদন্তকারী সংস্থা যদি তদন্ত শেষ করে তার দোষ পান এবং সেটি আদালতে উপস্থাপন করেন তবে বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব। এই আইনেও অপরাধীকে সাজা দেয়া যাবে।

তবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করেন, এই আইনটি বিশেষায়িত কেবল ১৯৭১ এ সংঘঠিত অপরাধের বিচারের জন্য। এক্ষেত্রে সংশোধন কিংবা সংস্কার প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন, আইনটি তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদরদের সাজা দেয়ার জন্য। আমি এই আইনে সাজা দেয়ার পক্ষে না।

তবে তার এমন মন্তব্য মানতে নারাজ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর। বলেন, ৭৩-এর আইনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা অনুসারে ২৪’র অপরাধও গণ্য।

আইনের তিন নম্বর ধারার ২ এর ‘ক’ উপধারা অনুযায়ী, হত্যা, নির্মূল, দাসত্ব, নির্বাসন, কারাবরণ, অপহরণ, বন্দিকরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ বা কোনো বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যান্য অমানবিক কাজ বা রাজনৈতিক, জাতিগত বা ধর্মীয় ভিত্তিতে নিপীড়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এই ট্রাইব্যুনালে বিচার করা যাবে। অর্থাৎ, আইনের তিন নম্বর ধারার ২ এর ‘ক’ উপধারায় উল্লিখিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্ভব।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, এই আইনের কোথায় সময়সীমা বলা নেই। বরং বলা হয়েছে, এই আইন প্রবর্তনের আগে বা পরে বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় যদি এ ধরনের অপরাধ হয়, যেকোনো ব্যক্তি বা সংগঠন অপরাধ করলে তার বিচার করা যাবে।

কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, সেটির সাজা নির্ধারণ করা নেই আইনে। তবে এখতিয়ার আছে বিচারের। ফলে এটির সংস্কার চান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, সবগুলো ধারাকে সমন্বয়ক করে এই আইনকে যথোপযুক্ত করা হবে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।

প্রশ্নবিদ্ধতা এড়াতে এই ট্রাইব্যুনালে বিচার না করে আন্তর্জাতিক আদালতে শেখ হাসিনার বিচারের দাবিকে অপ্রাসঙ্গিক বলেও মনে করে রাষ্ট্রের এই কৌশুলী বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেই তার বিচার করা সম্ভব।