লন্ডনের পাতাল রেলের আকর্ষণের শেষ নেই

SHARE

কলকাতা থেকে শুরু করে আজ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক শহরে মাটির নীচে মেট্রো রেল চালু হয়ে গেছে৷ তবে পাতাল রেলের জন্মস্থান লন্ডনের নেটওয়ার্ক একাধিক কারণে আজও তার আকর্ষণ হারায়নি৷

একাধিক কারণে নজর কাড়ার মতো৷ ৪০২ কিলোমিটার জুড়ে মোট ১১টি রুটে ২৭২টি স্টেশন রয়েছে৷ প্রতিদিন ৫০ লাখ মানুষ ‘টিউব’ ব্যবহার করেন৷

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন পাতাল রেলের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে ভালোবাসেন কর্মী অ্যান গ্যাভাগ্যান৷ তাঁর মতে, ‘‘অনেক কারণেই টিউব যাকে বলে আইকনিক৷ প্রতি বার টিউবে চড়ার সময়ে কোনো কিছু আমার মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে৷”

অ্যান আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া শহরের মানুষ৷ প্রথমবার লন্ডনে এসে তিনি টিউবের অনুরাগী হয়ে পড়েন৷ ২০১২ সাল থেকে তিনি লন্ডনের পরিবহণ সংস্থা টিএফএল-এ কাজ করছেন৷

১৮৬৩ সালের ১০ই জানুয়ারি লন্ডনে প্রথম পাতাল রেল চলেছিল৷ সে যুগে এক স্টিম ইঞ্জিন সুড়ঙ্গের মধ্যে ট্রেনের ওয়াগন টানতো৷ গ্যাসের বাতি দিয়ে সেই ট্রেনে আলোর ব্যবস্থা করা হতো৷ প্রথম দিকে সুড়ঙ্গ ভূপৃষ্ঠের বেশি গভীরে ছিল না৷ বেকার স্ট্রিট স্টেশনে অ্যান স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটা আমাদের নেটওয়ার্কের সবচেয়ে পুরানো স্টেশনগুলির একটি৷ ১৮৬৩ সালে মেট্রোপলিটন রেলওয়ের মূল রুটের অংশ হিসেবে এই স্টেশন চালু করা হয়েছিল৷ এটাই বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো মেট্রো সিস্টেম৷ প্যাডিংটন থেকে ফ্যারিংডন পর্যন্ত মেট্রোপলিটন রেলওয়ের মূল রুটে সাতটি স্টেশন ছিল৷ বেকার স্ট্রিট সেগুলিরই একটি৷ ১৯৮০-র দশকে এই প্ল্যাটফর্মগুলি ১৮৬৩ সালের মতো করে আবার গড়ে তোলা হয়েছিল৷”

আনুষ্ঠানিক নাম লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড হলেও রুটের মাত্র ৪৫ শতাংশ মাটির নীচে রয়েছে৷ বিশেষ করে শহরের কেন্দ্রস্থলের বাইরের অংশে ট্রেনগুলি মাটির উপরেই চলে৷ শহরের উত্তরে কিছুটা পাহাড়ি এলাকায় সবচেয়ে গভীর স্টেশনটি রয়েছে৷ হ্যাম্পস্টেড স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ৫৫ দশমিক দুই মিটার গভীরে অবস্থিত৷

সেটা অবশ্য বিশ্ব রেকর্ড ছুঁতে পারে না৷ বিশ্বের গভীরতম পাতাল রেল স্টেশন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রয়েছে৷ আর্সেনালনা স্টেশন ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০৫ দশমিক পাঁচ মিটার গভীরে অবস্থিত৷

বিশ্বের অনেক মেট্রো সিস্টেম লন্ডনের একটি বৈশিষ্ট্য নকল করেছে৷ সেটা হলো নেটওয়ার্কের নক্সা৷ সেই ম্যাপের বিশেষ ডিজাইনের ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট বা দূরত্বের বাস্তব প্রতিচ্ছবিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ অ্যান গ্যাভাগ্যান বলেন, ‘‘আসলে ১৯৩০-এর দশকে হ্যারি বেক নামের এক ইলেকট্রিকাল ড্রাফটসম্যান সেটি ডিজাইন করেছিলেন৷ তিনি এই মানচিত্র তৈরি করেন৷ প্রথমে তিনি অনেক প্রতিরোধের মুখে পড়েন৷ প্রায় দুই বছর পর আন্ডারগ্রাউন্ড সেটি গ্রহণ করে৷ তারা সেটির ব্যবহার শুরু করে৷ এখন এটি আইকন হয়ে উঠেছে৷”

পুরানো এই ম্যাপগুলি লন্ডন টিউবের বাস্তব রুট ফুটিয়ে তোলে৷ কিন্তু সেই রুট প্রায়ই আঁকাবাঁকা পথে অবস্থিত৷

সুড়ঙ্গের আকারের কারণে পাতাল রেলকে ‘টিউব’ অর্থাৎ নল বলা হয়৷ ১৮৯০ সালে সেই ডাকনামের প্রচলন ঘটে৷ অতীতে জমির উপরের রাজপথ বরাবর লাইন পাতা হতো৷ তবে রেলের ওয়াগনগুলি দীর্ঘ ও সোজা হওয়ার কারণে বিপজ্জনক ফাঁক সৃষ্টি হতে লাগলো৷ স্টেশন এমব্যাংকমেন্টে সেই ফাঁকগুলির আকার বেশ বড়৷ ১৯৬৯ সালে প্রথম বারের মতো বিখ্যাত সাবধানবাণী শোনা যায়৷ ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’ বা প্ল্যাটফর্ম আর ট্রেনের মাঝে ফাঁকা অংশ সম্পর্কে সাবধান করে দেওয়ার স্বয়ংক্রিয় সতর্কতা আজ সবার জানা আছে৷
সূত্র : ডয়েচে ভেলে