বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে মন্দিরের সোনা চান মোদি

SHARE

gold110ভারতের স্বর্ণ আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারসাম্যের অভাব মেটাতে প্রখ্যাত মন্দিরগুলির ভাণ্ডারে বহু বছর ধরে জমানো সোনা ব্যাংক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার কথা ভাবছে নরেন্দ্র মোদির সরকার৷ মন্দিরগুলির কর্তৃপক্ষ বা ট্রাস্টগুলি যাতে সুদ পাওয়ার ভিত্তিতে ব্যাংকে সোনা জমা রাখতে উৎসাহী হয়, সে জন্য আগামী মে মাসেই আকর্ষণীয় প্যাকেজ ঘোষণার পরিকল্পনা চলছে৷ ২০১৩-র মার্চে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে বিদেশ থেকে ব্যাপক হারে সোনা আমদানির ঘটনা সে বারের বাণিজ্য ঘাটতির ২৮ শতাংশের জন্য দায়ী৷

কেন্দ্রের দাবি, ব্যাংকে মন্দিরগুলি যে সোনা জমা দেবে, তা গলিয়ে স্বর্ণব্যবসায়ীদের লোন হিসেবে দেওয়া হবে, যাতে তার সাহায্যেই দেশের ভেতরকার সোনার চাহিদা অনেকটা মেটানো যায়৷ এই উদ্যোগ সফল হলে বিদেশ থেকে সোনা আমদানির (যা বর্তমানে বছরে গড়ে ৮০০-১০০০ টন, এবং ১ টন= ১০০০ কেজি) হার এক-চতুর্থাংশ কমানো যেতে পারে৷

তবে বেশি হারে সুদ না-পেলে মন্দির কর্তৃপক্ষগুলি রাজি না-ও হতে পারে৷ মহারাষ্ট্রের সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নরেন্দ্র মুরারি রানে বললেন, ‘রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলিতে সোনা রাখতে আমরা খুশিই হব, যদি সংশ্লিষ্ট পলিসি লাভদায়ক ও সুরক্ষিত হয়৷ সুদের হার অন্তত ৫ শতাংশ হওয়া দরকার৷’

দু’শো বছরের পুরোনো এই মন্দিরে প্রায় ১৫৮ কেজি সোনা জমা আছে৷ বহু বছর ধরে ভক্তদের দেওয়া গয়না, সোনার বাট এবং কয়েন জমা হয়ে এ দেশের মন্দিরগুলি বর্তমানে সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার টন সোনার মালিকে পরিণত হয়েছে, যা মন্দিরগুলির পুরোনো এবং আধুনিক নানা ধরনের ভল্টে রয়েছে৷ ১৯৯৯ সালেও ওই সোনা ব্যাংকে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হলেও, সুদের হার ০.৭৫-১ শতাংশ হওয়ায় এতদিনে মাত্র ১৫ টন সোনা জমা পড়েছে৷

সরকার সাধারণ মানুষকেও ব্যাংকে সোনা রাখতে উত্সাহী করে তোলার চেষ্টা করবে৷ ভারতে ব্যক্তিগত সংগ্রহে প্রায় ১৭ হাজার টন সোনা রয়েছে৷ তবে দেশবাসী ‘ঐতিহ্য’ ভেঙে ব্যাংক তথা বাজারের হাতে তাদের সোনা ছেড়ে দিতে কতখানি রাজি হবে, তা সময়ই বলবে৷ কিছু ঝুঁকিও রয়েছে৷ জনসাধারণ হোক বা মন্দির ট্রাস্ট, তারা যদি এমন সময়ে ব্যাংকে রাখা সোনা তুলে নিতে চান যখন বাজারে তার দাম বাড়ছে, তখন সরকার বিপাকে পড়তে পারে৷ ২০১৩ সালে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১১ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যাওয়ার পরে আমদানি হওয়ার সোনার ওপর শুল্কের হার বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত সরকার৷

অন্য দিকে, ‘ভক্ত’রাও এই উদ্যোগকে কী চোখে দেখবে, সেটাও প্রশ্ন৷ যেমন, মুম্বাইয়ের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘আমি ও আমার বাবা বিগত কয়েক বছরে সিদ্ধিবিনায়ক-সহ বেশ কিছু মন্দিরে প্রায় ২০০ কেজি সোনা দিয়েছি৷ দেবতাকে উৎসর্গ করা ওই সোনা সুদে খাটানো পাপ!’