পর্দার আড়ালে কি হলো- নানা আলোচনা

SHARE

daba0কোথায় কি হলো? নানা হিসাব। কে জিতলেন, কে হারলেন? তারচেয়েও বড় প্রশ্ন খালেদা জিয়া কি পেলেন? আন্দোলন এখন আর নেই। ৯২ দিন কার্যালয়ে অবস্থানের পর বিরোধী নেত্রী ফিরে গেছেন বাসায়। এর আগে আদালতে হাজির হলে দু’টি মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় খুলতে বাধা দেয়া হয়নি। দলটির নিষ্ক্রিয় নেতারা আস্তে আস্তে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন। খালেদা জিয়া তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারতে গেলে এদের অনেককেই দেখা গেছে।

রাজনীতির এ আপাত স্বস্তির পরিবেশের পেছনে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কি কাজ করেছে তা নিয়ে নানা আলোচনা। নানা সূত্রে খবর বেরিয়েছে, পর্দার অন্তরালে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাতজন নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে গোপনে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন কূটনীতিকদের একটি গ্রুপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদও এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ঠিক কি কি বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দু’টি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। প্রথমত, হরতাল-অবরোধসহ সহিংসতা পরিহার। দ্বিতীয়ত, বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। বেগম খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে।
সরকার ও বিরোধীদের এই আপাত সমঝোতায় দেশে এক ধরনের স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। যদিও জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে জামায়াতের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ নিয়ে রুটিনের বাইরে দলটি তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। তাছাড়া, কামারুজ্জামান নিজেও শক্তি প্রয়োগের পক্ষে ছিলেন না। কারাগার থেকে লেখা একাধিক চিঠিতে তিনি জামায়াতকে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণদের দিয়ে নতুন নামে দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন কামারুজ্জামান। যদিও জামায়াত এখন পর্যন্ত সে পরামর্শ গ্রহণ করেনি।
তবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পর্দার আড়ালের তৎপরতায় সরকার ও বিরোধী দুই জোটেই নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। সরকারি দলের নেতাদের অনেকে মনে করেন, সহিংসতার কারণে বিএনপি জোট জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন সমঝোতা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে মাঠে নামার সুযোগ করে দেয়া হলো। অন্যদিকে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটে হতাশা তারচেয়েও বেশি। এ জোটের অনেকেই মনে করেন, তিন মাসের আন্দোলনে ২০ দলীয় জোটকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমেদের মতো নেতা গুম হয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতৃত্ব তেমন কোন জোরালো বক্তব্যও রাখছেন না। এমন আরও অনেক নেতাকর্মীর হদিস মিলছে না। দৃশ্যত যাদের সঠিক হিসাবও বিএনপি নেতৃত্বের কাছে নেই। ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী, পঙ্গু হয়েছেন অনেকে। অন্যদিকে, নিরাপদ দূরত্বে থাকা নিষ্ক্রিয় নেতারা এখন আবার লাইম লাইটে আসার সুযোগ পেয়েছেন। এরচেয়েও বড় ব্যাপার মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি আন্দোলন করলেও সে ব্যাপারে দৃশ্যত কোন সুরাহা হয়নি। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন সংলাপের আহ্বানও আসেনি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশে বিরোধীদের দিন দিন আরও দুর্বল হয়ে যাওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্যাংকার ও রাজনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ যেমনটা বলেছেন, রাষ্ট্র ও সরকার মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে। আগে ছিল বাকশাল। বাকশাল হলো একদলীয় সরকার। আর বর্তমানে চলছে একদলীয় রাষ্ট্র। একদলীয় রাষ্ট্র অনেক বেশি ক্ষতিকর ও আগ্রাসী। এরশাদের নেতৃত্বাধীন অতি সুবিধাবাদী বিরোধী দল, বিএনপির মতো অপরিণামদর্শী দল, দুর্বল প্রশাসন এবং সুবিধাবাদী বাহিনীর কারণে একদলীয় রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে।