ডালমিয়ার কাছে পাত্তাই পাচ্ছেন না শ্রীনি

SHARE

আইপিএলে ফিক্সিং কেলেঙ্কারির জেরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদ হারান এন শ্রীনিবাসন। পরবর্তী বোর্ড সভাপতির দায়িত্বে আসেন শ্রীনিবাসনেরই ‘বন্ধু’ জগমোহন ডালমিয়া। ফলে সভাপতির পদ হারালেও ডালমিয়াকে দিয়েই বোর্ডে নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন শ্রীনিবাসন। তবে তা আর হচ্ছে কোথায়? ডালমিয়ার কাছে পাত্তাই পাচ্ছেন না শ্রীনিবাসন!

সোমবার আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজীব শুক্লাকে। এদিন উপ-কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে শ্রীনিবাসন বিরোধীদেরই স্থান করে দিয়েছেন ডালমিয়া। যে সৌরভ গাঙ্গুলিকে শ্রীনিবাসন টেকনিক্যাল কমিটি প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।

সেই সৌরভকে সসম্মানে ফেরত আনা হয়েছে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে। এছাড়া বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি কমিটি প্রধানের পদ আইপিএল, ফিন্যান্স আর মার্কেটিং। তিনটিতেই ডালমিয়া বসিয়েছেন শ্রীনি বিরোধী শিবিরের লোক।

এ নিয়ে ‘শ্রীনি-বিরোধীতে বোর্ডের কমিটি ভরে দিয়ে প্রকাশ্য আক্রমণাত্মক ডালমিয়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার দুপুরেও ভারতীয় ক্রিকেট মহলে কেউ আঁচ পাননি সল্টলেকে আইপিএল উদ্বোধনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে নিভৃতে যে এমন মারকাটারি কিছু ঘটতে চলেছে! অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন গত ৩০ মার্চ আনন্দবাজারের খেলার পাতার পূর্বাভাস অনুযায়ী রাজীব শুক্লা আইপিএলের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এ দিন ঘোষিত হবেন। কিন্তু কেউ ভাবেনি রাজীব-সহ বাকি কমিটি নির্বাচনে এ ভাবে শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে হা-রে-রে-রে করে নেমে পড়বেন ডালমিয়া।

ভারতীয় ক্রিকেট মহল সোমবার বিস্ফারিত হয়ে লক্ষ্য করল, কমিটি নির্বাচনে সম্পূর্ণ শ্রীনির বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন ডালমিয়া। সৌরভ গাঙ্গুলিকে বিনা বাক্যব্যয়ে শ্রীনি টেকনিক্যাল কমিটি প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।  সে সৌরভই আবার সসম্মানে ফেরত এলেন আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে। রবি শাস্ত্রী স্বপদে বহাল রইলেন। সরানো হল গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথকে।

ক্রিকেট বোর্ডে সবচেয়ে লোভনীয় তিনটি কমিটি প্রধানের পদ আইপিএল, ফিনান্স আর মার্কেটিং। তিনটিতেই ডালমিয়া বসিয়েছেন শ্রীনি বিরোধী শিবিরের লোক। তিন কমিটির প্রধানের মধ্যে আরও মিল, এরা প্রত্যেকেই শ্রীনি মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এ বারের নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। এরা হলেন- রাজীব শুক্লা, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, চেতন দেশাই।

শ্রীনি চেয়েছিলেন সুনীল নারিনের বিরুদ্ধে চাকিংয়ের অভিযোগ অব্যাহত রাখতে। নারিন যাতে আইপিএল না খেলতে পারেন। ডালমিয়া উল্টো ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান স্পিনারকে।

শ্রীনি চেয়েছিলেন আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিনিয়র লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে বহালের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে তুলে নিক ডালমিয়া। শ্রীনি মনে করেন ঊষাবাবু নানা ভাবে আদিত্য বর্মাকে সাহায্য করেছেন। এমনকী টেলিভিশন অনুষ্ঠানে শ্রীনির বিরুদ্ধে বলেছেন। ডালমিয়া পাত্তাই দেননি। ঊষাবাবুকে সরানওনি।

আবার শ্রীনি চেয়েছিলেন বিশ্বরুপ দে-কে এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট করতে। কিন্তু তাকে করা হয়েছে মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান। তাকে ডালমিয়া ফিন্যান্স কমিটিতেও রেখেছেন কিন্তু ওই পদটা দেননি। সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ও আগের বারের মতোই আইপিএল কাউন্সিলে আছেন। গতবার কমিটিতে বাংলার অবস্থান মোটেই সন্তোষজনক ছিল না। সেখানে এ বার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির হেড ডালমিয়া নিজেকেই রেখেছেন। মার্কেটিং কমিটিতে রেখেছেন চিত্রক মিত্র এবং গৌতম দাশগুপ্তকে।

শ্রীনি চেয়েছেন এখনই বোর্ড ঘোষণা করুক যে, মুস্তফা কামালের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাংলাদেশ সফর বাতিল করলাম। কিন্তু ডালমিয়া চিরকাল বাংলাদেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলেছেন। তিনি এমন সিদ্ধান্ত হুড়ুম-ঢুড়ুম নিতে যাবেন কেন?

তাই নির্বাচনে শ্রীনির আশীর্বাদ-ধন্য হলেও জিতে উঠে তার একটা অনুরোধও (নির্দেশ পড়া যেতে পারে) মানছেন না ডালমিয়া। এতে প্রচন্ড চটে থাকা শ্রীনি ক’দিন আগে বোর্ড প্রেসিডেন্টকে শাসান যে, তেমন হলে তিনি এই সর্বোচ্চ চেয়ারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন। বোর্ডের সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ জন সদস্য মিলে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন। এর পর সেটা পাস করাতে হয় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন-সহ। শ্রীনির ১৫-১৬ ভোট থাকলেও দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন নেই।

কিন্তু আপাতত ডালমিয়ার ওপর তিনি এতই ক্ষুব্ধ যে, দিন তিনেক আগে ঘোষিত শত্রু  শারদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক অবধি করেছেন। ঘনিষ্ঠমহলে শ্রীনি তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছেন ডালমিয়া-পুত্র অভিষেক সম্পর্কেও। বলেছেন, ডালমিয়ার হয়ে ইদানীং তিনিই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। পাওয়ার আর তিনি একজোট হয়ে গেলে ডালমিয়াকে সেপ্টেম্বর বা তারও আগে সরানো শুধু সময়ের অপেক্ষা, এমনই মনে করেন শ্রীনি।

সমস্যা হল, শশাঙ্ক মনোহরকে কিছুতেই রাজি করানো যাচ্ছে না। তিনি পাওয়ারকে বলে দিয়েছেন, শ্রীনির সঙ্গে কিছুতেই জোট বাঁধবেন না। আর সচিব অনুরাগ ঠাকুরও এই শ্রীনিবিরুদ্ধবাদে পুরোপুরি ডালমিয়ার সঙ্গে। এত উগ্রবাদী সিদ্ধান্তের সেটাও একটা ব্যাখ্যা।

আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদনটিতে মন্তব্যে বলা হয়- অবস্থাটা এমন যে, পারলে শ্রীনি বর্তমান প্রেসিডেন্টকে আজই সরাতে চান অনাস্থা প্রস্তাব এনে। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তার নিজের সেপ্টেম্বরের পর আইসিসি চেয়ারম্যান পদে থাকাই না বিপন্ন হয়ে যায়।