ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীকে বিএনপি সমর্থন দিলে আরেক দফা ভাঙতে পারে ২০ দলীয় জোট।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিলের পর বিকল্প প্রার্থী হিসেবে দলের সাবেক মহাসচিব ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহি বি চৌধুরীর কথা বিএনপি চিন্তা করলেও এ ব্যাপারে কড়া আপত্তি তুলেছে ২০ দলীয় জোটের বেশ কয়েকটি শরিক দল।
জোটের দ্বিতীয় শক্তি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। অন্য দলগুলোও প্রকাশ্যে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে বিএনপিকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ’র মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির নেতৃত্বে যখন বৃহত্তর জোট গঠন করা হয়, তখন বি চৌধুরী-মাহি বি চৌধুরীরা এলেন না।
বললেন, বিএনপি জোটে যুদ্ধাপরাধী দল (জামায়াত) আছে। তাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসা যাবে না, এক মঞ্চে ওঠা যাবে না। অথচ এখন মেয়র হওয়ার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন পাওয়ার জন্য দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে? এটা সুবিধাবাদের বহিঃপ্রকাশ।
দলীয় সূত্রমতে, মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিলের পর মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে দুই জনকে বিবেচনায় নেয় বিএনপি। এদের একজন বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, অন্যজন আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল।
কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও ছেলেকে প্রার্থী করতে আব্দুল আউয়াল মিন্টু স্বেচ্ছায় ভুল করেছেন- দলের মধ্যে এমন গুঞ্জন থাকায় তাবিথ আউয়ালের পরিবর্তে মাহি বি চৌধুরীরকে সমর্থন দেওয়ার কথা চিন্তা করে বিএনপি।
এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার আব্দুল আউয়াল মিন্টুর রিট-পিটিশন ফায়সালা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকে বিএনপি। এ কারণে রোববার রাতে ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও মাহি বি চৌধুরী গুলশানের বাসায় গিয়ে দেখা করতে চাইলেও খালেদা জিয়া তাদের সময় দেননি।
সূত্র জানায়, উচ্চ আদালত আব্দুল আউয়াল মিন্টুর রিট পিটিশন খারিজ করে দেওয়ায় সোমবার রাতেই বি চৌধুরী ও মাহি বি চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া।
এর পর দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে দুএকদিনের মধ্যেই ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী হিসেবে কাকে সমর্থন দেবেন সেটা ঠিক করবেন তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বেশ কয়েকটি শরিকদল মাহী বি চৌধুরীকে সমর্থন দেওয়ার বিপক্ষে সরসরি অবস্থান নিয়েছে।
এসব দলের নেতারা বলছেন, মাহী বি চৌধুরী ২০ দলীয় জোটের কেউ নন। চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ও তার দল কোনো ভূমিকা রাখেনি। বরং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। কখনো কখনো করেছেন নসিহত।
গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ওই সময় টিভি টক শো’তে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কথাও বলেছেন তিনি। এ ধরনের সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাবাদী ব্যক্তিকে বিএনপি সমর্থন দিলে ২০ দলীয় জোটে আরেক দফা ভাঙন লাগতে পারে।
বিশ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, মাহী বি চৌধুরী ২০ দলের কেউ নন। বাইরের কাউকে প্রার্থী হিসাবে এলডিপি সমর্থন করবে না, করতে পারে না।
শরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে বিএনপি এ ব্যাপারে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে জোটে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। জোটনেত্রী (খালেদা জিয়া) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শরিকদের মনের কথা ভেবে দেখবেন বলে আশা করি।
সূত্র জানায়, এরইমধ্যে ২০ দলের শরিক ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে মাহী বি চৌধুরীকে মেয়র পদে সমর্থন না জানানোর বিষয়ে মত দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার দলীয় জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি পদ ও দল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেন বি চৌধুরী। এখনো তিনি আওয়ামী লীগমুখীই আছেন। সে কারণেই ২০ দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই তার। এখন আবার ছেলেকে মেয়র বানানোর জন্য খালেদা জিয়ার পেছনে ঘুর ঘুর করছেন।
আমি এরইমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাহির ব্যাপারে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।
সূত্র জানায়, আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপাক আলোচনা হয়েছে জোট শরিকদের মধ্যে। কেন তিনি তার প্রার্থিতা ফরমে ঢাকা উত্তরের ভোটার নন-এমন ব্যক্তিকে দিয়ে সমর্থনকারীর স্বাক্ষর নিলেন-এ নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে তাদের।
কেউ কেউ বলছেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হতে চেয়েছিলেন। তাই বিভক্ত ঢাকার মেয়র না হয়ে ছেলেকে সুযোগ করে দিতেই জেনেশুনে ভুলটি করেছেন।
তারপরও আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিলের পর তার ছেলে তাবিথ আউয়ালের বিকল্প হিসেবে ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীকে ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিতে নারাজ জোট শরিকরা।