‘গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির চেয়েও ভয়াবহ’

SHARE

গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর, প্রলয়ঙ্করী।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি যে ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছিল, গাজায় তার চেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। এমন মন্তব্য করেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিবিদ যোশেপ বরেল।
তিনি সোমবার বলেন, ‘পশ্চিম তীরে চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারদের সহিংসতায়ও’ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আতঙ্কিত। তিনি জেরুসালেমে আরো ১,৭০০ বাড়ি ইউনিট নির্মাণের ইসরাইলি সরকারের সিদ্ধান্তেরও নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ব্রাসেলস মনে করে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
হামাসের আক্রমণটির কারণে গ্রুপটিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় স্থান পাওয়ার উপযুক্ত- এমন কথা উল্লেখ করে বরেল বলেন যে বেসামরিক মৃত্যু এবং বেসামরিক সম্পত্তি ও অবকাঠামো ধ্বংসের আলোকে ইসরাইলি সামিরক বাহিনীর অভিযানও আনুপাতিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের দুর্ভোগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, মোট মৃত্যুর ৬০ থেকে ৭০ ভাগ হচ্ছে বেসামরিক মৃত্যু। আর ৮৫ ভাগ লোক অভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত।
তিনি বলেন, গাজার ভবন ধ্বংস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান নগরীগুলো যে ধরনের ধ্বংসের মুখে পড়েছিল, তার চেয়েও অনেক বেশি।

তীব্র হচ্ছে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ পাল্টাপাল্টি হামলা
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে লড়াইয়ের পাশাপাশি লেবাননের রাজনৈতিক ও সামরিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সাথে ইসরাইলের পাল্টাপাল্টি হামলার মাত্রা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।
রোববার হিজবুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তের কাছে ইসরাইলের সামরিক অবস্থানগুলোতে বিস্ফোরক ভর্তি ড্রোন ও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর জবাবে দক্ষিণ লেবাননের বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রাম ইসরাইলি বিমান হামলায় কেঁপে ওঠে।
৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ ও ইসরাইল পরস্পরের সীমান্তবর্তী লক্ষ্যস্থলগুলোতে পাল্টাপাল্টি হামলা চালাচ্ছে। এর আগে ২০০৬ সালে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে হওয়া মাসব্যাপী এক যুদ্ধের পর থেকে এটিই দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হওয়া সবচেয়ে তীব্র । তবে এ হামলা মূলত দুই দেশের সীমান্ত এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
লেবাননের আইতারুন শহরে ইসরাইলি বিমান হামলায় পাঁচটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরো বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তা আলি হিজাজি জানিয়েছেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ রক্ষা করায় হামলায় কেউ মারা যায়নি। তিন নারী ও দু’জন পুরুষ আহত হয়েছে।’
এ বিষয়ে ইসরাইলের সেনাবাহিনী রয়টার্সের জানানো মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
রয়টার্সের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক হাসান ফাদাল্লাহ জানিয়েছেন, ইসরাইলের বিমান হামলা ‘নতুন করে সহিংসতা বাড়িয়েছে’, হিজবুল্লাহ ‘নতুন ধরনের আক্রমণ’ চালিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এর আগে ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, ‘আকাশপথে সন্দেহজনক লক্ষ্যবস্তু’ লেবানন সীমান্ত অতিক্রম করেছে আর সেগুলোর মধ্যে দু’টিকে বাধা দেয়া হয়েছে। এ হামলায় ইসরাইলের দুই সেনা ‘মাঝারি মাত্রার জখম’ হয়েছে আর অন্য বেশ কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছে।
এর জবাবে ইসরাইলের জঙ্গি বিমানগুলো ‘লেবাননের ভূখণ্ডে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যস্থলগুলোতে ধারাবাহিক ব্যাপক হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। লেবানন সীমান্তের কাছে ইসরাইলের বেশ কয়েকটি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা জানিয়ে সাইরেন বাজানো হয়। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বাসিন্দারা পরিষ্কার নীল আকাশে দুটি যুদ্ধবিমান উড়ে যেতে দেখেছেন, সেগুলো পেছনে ধোঁয়ার সাদা রেখা রেখে যায়।
হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরইলে তাদের হামলার লক্ষ্য গাজা ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানানো। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছেন, হিজবুল্লাহ পূর্ণ যুদ্ধ শুরু করলে বৈরুতকে ‘গাজায়’ পরিণত করা হবে।
দক্ষিণ লেবাননে থাকা জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউএনআইএফআইএল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যে কোনো ভুল বোঝাবুঝির পরিণামে সম্ভাব্য বিস্তৃত একটি সংঘাত শুরু যাওয়ার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।’
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, ইয়ারা শহরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর একটি কমান্ড পোস্টে ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা। পাশাপাশি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কয়েকটি লক্ষ্যে হামলা চালাতে বুরকান (আগ্নেয়গিরি) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কয়েকশ কেজি বিস্ফোরক বহন করতে পারে।