আসন্ন উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রার্থীদের জমা দেওয়া এই হলফনামা গতকাল সোমবার রাতে ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য, সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।
এবার ঢাকা উত্তরে ২১ ও দক্ষিণে ২৬ এবং চট্টগ্রামে ১৩ জন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ১ ও ২ এপ্রিল যাচাই-বাছাই এবং ৯ এপ্রিল প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ ১০ এপ্রিল এবং ভোটগ্রহণ ২৮ এপ্রিল।
ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে মোট ২১ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সারাহ বেগম কবরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ আলোচনায় রয়েছেন।
বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে ১৪টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। বিপরীতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অতীত-বর্তমানে কোনো মামলা-মোকাদ্দমা হয়নি।
আবদুল আউয়াল মিন্টু
আবদুল আউয়াল মিন্টু হলফনামায় তার বিরুদ্ধে ১৬টি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। রাজধানীর মতিঝিল, শাহবাগ, পল্টন ও রমনা থানায় করা মামলাগুলোর মধ্যে তাকে দুটিতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর একটিতে হাইকোর্ট ডিভিশনের আদেশক্রমে কার্যক্রম স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত, ৮টি মামলা পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। ৫টি মামলায় তিনি জামিন প্রাপ্ত।
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। মিন্টু লাল তীর সিড লিমিটেড, নর্থ সাউথ সিড লিমিটেডে, এম এফ কনজুমারস লিমিটেড, এ অ্যান্ড এ ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেডসহ ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তিনি এগ্রিকালচার ইকোনোমিক্স ও ট্রান্সপ্রোটেশন ম্যানেজমেন্টে এমএসসি করেন।
আয়ের উৎসের ব্যাপারে আবদুল আউয়াল মিন্টু হলফনামায় জানিয়েছেন, কৃষিখাতে তার বছরে আয় হয় ৩ কোটি ৫০ লাখ ৯৯,৫২২ টাকা। এছাড়া বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া থেকে বছরে পান ৯ লাখ ৪৫০০ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় হয় ৯০ লাখ টাকা। শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে আয় হয় ২৪ লাখ ৩০,০০০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন খাত থেকে বছরে ৪১ লাখ ১০,৮১১ টাকা আয় হয়।
মিন্টু তার হলফনামায় অস্থাবর সম্পত্তিতে দেখিয়েছেন- নিজ নামে নগদ টাকা ৮ লাখ ৫০,৩২০ টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ৭ লাখ ৭৭,৭৪৩ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা ২০০ মার্কিন ডলার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমাকৃত অর্থের পরিমান ৬৮ লাখ ৮৯,২৬৩ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৬২,৯৪২ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার রয়েছে ৪০ কোটি ৫৮ লাখ ৯০,৬৫০ টাকা, স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৯১,১৬৯ টাকা। পোস্টাল, সার্ভিস সার্টিফেকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৭৪ লাখ ৯৩,৬৫৪ টাকা।
বাস, ট্রাক মটরগাড়ি, লঞ্চ, স্টিমার বিমান ও মোটরসাইকেল ইত্যাদি বাবদ নিজ নামে দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৫০,০০০ টাকা। স্ত্রীর নামে ৯ লাখ ৮৩,৬৬২ টাকা। এছাড়া নিজ নামে স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু রয়েছে ২ লাখ টাকার। স্ত্রীর নামে রয়েছে ২৬ লাখ ৫৮,৫৫১ টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৮ লাখ ৮৮,৮৫৮ টাকা। স্ত্রীর নামে ৫ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সমাগ্রী। অন্যান্য সম্পদ রয়েছে ১১ কোটি ৫১ লাখ ৯১,৬৬৩ টাকা। স্ত্রীর নামে ৭১ লাখ ১২,০০০ টাকা।
আবদুল আউয়াল মিন্টুর স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- কৃষি জমি নিজ নামে ৩৫ লাখ ১০,১৬৫ টাকার। অকৃষি জমি ৩ কোটি ৮৫ লাখ ১৪,৮৩০ টাকার। নিজ নামে বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ২৯ লাখ ৮২,৮৫৪ টাকার। এছাড়া স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৯ লাখ ৪১,৪২৩ টাকার।
তিনি কয়েকটি ব্যাংক থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিলেও তিনি ঋণখেলাপী নন বলে হলফ নামায় উল্লেখ করেছেন।
দায়-দেনার ব্যাপারে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন- নিজের ছেলে তাফসির মোহাম্মদ আউয়াল হতে ঋণ গ্রহণ করেছেন ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সিকিউরিটি ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড হতে ঋণ গ্রহণ করেছেন ১ কোটি ৮১ লাখ ৬০,০০০ টাকা। এছাড়া বাড়ি ভাড়া দেয়ার অগ্রিম বাবদ নেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬০০০ টাকা। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৬,৩১৭ টাকা।
আনিসুল হক
ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হকের বিরুদ্ধে বর্তমান ও অতীতে কখনো ফৌজদারী কোনো মামলা নেই। আনিসুল হক সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে মাস্টার্স অব আর্টস (এমএ) করেছেন।
তিনি মোহাম্মদী গ্রুপ লিমিটেড, মোহাম্মদী ফ্যাশন সোয়েটারস লিমিটেড, দি মোহাম্মদী লিমিটেড, টেকনোডিস্তা লিমিটেডসহ ২২টি কোম্পানির মালিক বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
আনিসুল হকের বছরে আয় ৭৫ লাখ ৮২,৯৮৭ টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ২ লাখ ৪০,০০০ টাকা, ব্যবসা থেকে ২৫ লাখ ৯২,০০০ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক জামানত থেকে ১ লাখ ৬১,১৬৫ টাকা। অন্যান্য খাত থেকে ৪৫ লাখ ৮৯,৮৩১ টাকা।
তার স্ত্রীর বছরে আয় দেখানো হয়েছে- ৮৪ লাখ ৯৩,৪৬২ টাকা। তার ছেলে নাভিদুল হকের ব্যবসা থেকে আয় ২৯ লাখ ১০,৫০১ টাকা, কন্যা তয়ামিক উমায়রার আয় ২০ লাখ ৪২,৪৬০ টাকা ও কন্যা তানিশা ফারিয়ার আয় ১ লাখ ৯৬,০০০ টাকা।
আনিসুল হক অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন নগদ ১ কোটি ৯৫ লাখ ১৩,০৩০ টাকা। স্ত্রী রুবানা হকের ৩৩ লাখ ৫৬,৩০৮ টাকা, সন্তান নাভিদুল হকের ১ লাখ ৮৭,৯৪১ টাকা, ওয়ামিক উমায়রার ২০ লাখ ৬৫,২২৯ টাকা, তানিশা ফারিয়ার ১১ লাখ ২২,৪৫০ টাকা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজ নামে রয়েছে ৬ লাখ ৫৮,৭৯৯ টাকা, রুবানা হকের নামে ২৮ লাখ ২৪,৮২১ টাকা, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫,৫০০ টাকা, স্ত্রী রুবানার ৭৪ লাখ ৭৮,০০০ টাকা, ছেলে নাভিদুলের ৫০ লাখ ২৫,০০০ টাকার, ওয়ামিক উমায়রার ৩ লাখ ২৩,০০০ টাকা ও তানিশার ২ লাখ ২৩,০০০ টাকা।
এছাড়া স্বার্ণালঙ্কার ও মূল্যবান ধাতুর বাবদ ১১ লাখ ১২,৭৫০ টাকা সম্পদ দেখানো হয়েছে। রুবানার ৫০,০০০, নাভিদুলের ৫০,০০০, ওয়ামিকার ১০,০০০ ও তানিশার ১০,০০০ টাকার স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে।
এছাড়া ৯ লাখ ৮৩,০০০ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং ১৪ লাখ ৮৪,০০০ টাকা মূল্যের আসবাব রয়েছে। এছাড়া তিনি ৫ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩,০৭৯ টাকা ঋণ প্রদান করেছেন।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিনি নিজের নামে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮,৬৭৫ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি, বাড়ি বাবদ স্ত্রী রাবানার নামে ৭০ লাখ ৬১,৮৮০ টাকার সম্পত্তি এবং এক ছেলে ও দুই মেয়ের নামে ৩.৮৫ কাঠা করে জমি দেখিয়েছেন। তার ৫ কোটি ২৯ লাখ ৪৭,৮৯৭ টাকা জামানতবিহীন দায়-দেনা রয়েছে।
বিভিন্ন স্থায়ী আমানতে আনিসুল হকের বিনিয়োগ রয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৪৫,৬৬৮ টাকা, স্ত্রী রুবানা হকের ৪ কোটি ২৫ লাখ ৩৭,৩১৮ টাকা, নাভিদুলের ৩১ লাখ ৪৯,৪১৫ টাকা ও ওয়ামিক উমায়রার নামে বিনিয়োগ রয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
ববি হাজ্জাজ
ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজ। হলফনামায় বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো ফোজদারী মামলা নেই, অতীতেও ছিল না বলে উল্লেখ করেছেন। পেশা হিসেবে বেসরকারি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভিার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন। আর ডেটকোর পরিচালক তিনি।
ববি হাজ্জাজ শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত হিসেবে দেখিয়েছেন ২,১৩,৫৭২ টাকা। শিক্ষকতা থেকে পান ৪,১৪,০০০ টাকা। নিজের নামে নগদ ৬০,০০০ এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪৫,০০০ টাকা। ডলার আছে ৫৯৮৯, ব্যাংকও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা নিজের ৬৯,৬২৫ এবং স্ত্রীর ২,০৪,১১২ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার আছে ৫০,০০০ টাকা।
ববি হাজ্জাজের স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে একটি ফ্লাট রয়েছে। তিনি কোথাও তেকে কোনো ধরনের ঋণ নেননি বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
সারা বেগম কবরী
হলফনামায় সারা বেগম কবরী নিজেকে অষ্টম শ্রেণি পাস বলে উল্লেখ করেছেন। তার তার অতীতে ও বর্তমানে কোনো ফৌজদারী মামলা নেই। আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন, বাড়ি/দোকান ভাড়া ২,৪০,০০০ টাকা, ব্যবসা ৫,৪২,৪৪২ টাকা, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ২,০১,৭৫০ টাকা, পেশা বাবদ ৪,২৯,০০০ এবং অন্যান্য থেকে ৫,৬৭,০৫৬টাকা।
কবরী সম্পদের বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, নগদ ২,০০,০০০ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ২৮,৩৪,৯৫১ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৭২,৪৪,০৩৫ টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ রয়েছে ১৬,৮৮,৯৫৭ টাকা, ৩৫ রাখ টাকা মূল্যের প্রাডো জিপ রয়েছে, স্বর্ণাঙ্কার ১,২০,০০০, ইলেকট্রনিক্স ও আসবাব সামগ্রী মিলে আছে ২ লাখ টাকা। আর স্থাবর সম্পদ হিসেবে গুলশানে একটি ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। সারা বেগম কবরী কোনো ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণ নেননি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোট ২৬ জন। এদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আবদুস সালাম, নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ খোকন, গোলাম মওলা রনি।
মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ
মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারী মামলা রয়েছে ৩৭টি, অতীতে ছিল ২৪টি। পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা, মির্জা এন্টারপ্রাইজ। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস।
বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন, বাড়ি ভাড়া, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান অন্যান্য ভাড়া বাবদ ১ কোটি ৫ লাখ ৮১,৫৪৩ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে বাৎসরিক আয় ৬ কোটি ২৭ লাখ ১৫,২৯০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৭৪,২৫০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন, নগদ টাকা ৫০ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ১০ লাখ ৬২,১২৩ টাকা; বন্ড ৩৫ কোটি ৬ লাখ ৭৯,১০০ টাকা ও ৪২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫,৮৪৫ টাকা। স্থায়ী আমানত রয়েছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭,১৪৯ টাকা, ৯৭ লাখ ৫০,০০০ টাকার একটি গাড়ি। স্বর্ণাঙ্কার রয়েছে ২ লাখ টাকা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ১০ লাখ টাকা, আসবাবপত্র ৭ লাখ টাকা ও অন্যান্য ৯০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মির্জা আব্বাস প্রায় ১০০ কোটির টাকার মালিক বলে হলফ নামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থাবর সম্পদ: অকৃষি জমি ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, দালান (৮৭১, দক্ষিণ শাহজাহানপুর) ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৮,১২৩ টাকা ও (৯২৫/বি, দ. শাহজাহানপুর) ২ কোটি ৬২ লাখ ৫৯,৬৪৫ টাকা। জমি বায়না বাবদ অগ্রিম ৪ কোটি টাকা। মির্জা আব্বাসের দায়-দেনার পরিমাণ রয়েছে ৭৫ কোটি ৬৫ লাখ ২৫,৯০৩ টাকা।
আবদুস সালাম
বিএনপি নেতা আবদুস সালামের বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা রয়েছে ৩টি, অতীতে কোনো মামলা ছিল না। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস, পেশা ব্যবসা। বাৎসরিক আয় দেকিয়েছেন, বাড়া ও অ্যাপার্টমেন্ট ও অন্যান্য ভাড়া বাদ ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তি নিজ নামে নগদ টাকা ৩২ লাখ ১৯,৩৭৮ টাকা। বাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১৮ লাখ ৫৭,১২১ টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ১২ তোলা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ফ্রিজ ১টি, ডিপ ফ্রিজ ১টি। আসবাবপত্রের মধ্যে সোফা ১ সেট, ডাইনিং ১ সেট ও খাট ৩ সেট।
স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে সালামের নিজ নামে অকৃষি জমি ৪২ শতাংশ, দালান ৬ তালা ১টি, স্ত্রীর নামে ১টি ফ্লাট দেখিয়েছেন। গাড়ী ক্রয় বাবদ ৫ লাখ ১৬,২৫৫ টাকা দায়-দেনা হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন সালাম।
মোহাম্মদ সাঈদ খোকন
শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস। বর্তমানে ফৌজদারি মামলা নেই। অতীতে মামলা ছিল ৫টি। পেশা ব্যবসা। আয়ের উৎস দেখিয়েছেন, বাড়িসহ অন্যান্য ভাড়া বাবদ ৩২ লাখ ৩৪,১৫০ টাকা, ব্যবসা ৮ লাখ ৩২,৬৩০ টাকা। শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ১ লাখ ৮,০০০ টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজ নামে নগদ টাকা ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬,৫৭৮ টাকা। স্ত্রীর নামে ৩০ লাখ টাকা। বাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ নিজ নামে ৪৩ লাখ ৪৭৬ টাকা, স্ত্রীর নামে ২৭ লাখ ২২,৩০৬ টাকা। শেয়ার ১৭ কোটি ৭১ লাখ ৯০,৬৭৫ টাকা ও ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা; মটরগাড়ি-৩৮ লাখ টাকা; আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও উপহার এবং ব্যবসার মূলধন ৩৪ লাখ ৪,৪৮৭ টাকা।
স্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছেন, অকৃষি জমি ২ লাখ ৩০,০০০ টাকা; দালান, আবাসিক, বানিজ্যিক ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯,০০০ টাকা। দায়-দেনা বাবদ দিখিয়েছেন ব্যাংক ঋণ ১৯ কোটি ২৭ লাখ ৭৭,০০০ টাকা।
নাসির আহম্মেদ পিন্টু
তার বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারী মামলা ছিল ২টি এবং বর্তমানে ৪টি। আয়ের উৎস হচ্ছে বাড়ি ভাড়া ১৫ লাখ ৫০,১৪০ টাকা, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে ৭২ লাখ ৭৮,৩৭২ টাকা। অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ৫ কোটি ৯২ লাখ ৬৮,৩২২ টাকা, বন্ড ৪ কোটি ২৫ লাখ। স্থায়ী আমানত ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭,২৮০ টাকা।
১টি জিপগাড়ির দাম ৪৬ লাখ ২৪,২২৪, স্বর্ণ ৮ তোলা, ইলেক্ট্রনিক সামাগ্রী টিভি, ফ্রিজ আসবাবপত্র ২০,০০০ টাকা এবং অন্যান্য ৬১ লাখ ৫৪,৯০৯ টাকা রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন পিন্টু।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছেন, কৃষি জমি, অকৃষি জমি ও অ্যাপার্টমেন্ট মূল্য বাবদ ৩ কোটি ৭২ লাখ ৭১,২৯৮ টাকা। স্ত্রীর ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, নাসিম আহম্মেদের ৭০ লাখ টাকা ও গাড়ি বাবদ ২ লাখ ৪৪,১০৭ টাকা দায়-দেনা দেখিয়েছেন তিনি।
গোলাম মওলা রনি
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মওলা রনি শিক্ষাগত যোগ্যতায় এল এল এম উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো ফোজদারী মামলা নেই। অতীতে তিনটি মামলা ছিল।
তিনি পেশা উল্লেখ করেছেন, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক ফ্রেইড ফরওয়ার্ডিং ও শিপিং, আন্তর্জাতিক জরিপ ও পরিদর্শন, প্রকাশনী ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা এবং আইটি ব্যবসা।
রনি আয়ের উৎস দেখিয়েছেন ব্যবসা থেকে ২০ লাখ ২০,০০০ টাকা, শেয়ার এক লাখ। অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন, ব্যাংকে জমা ৬৫,০০০ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ার ১ লাখ, একটি লেক্সাস মডেলের জিপ গাড়ি, স্ত্রীর নামে ৪০ তোলা স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক্স ও অঅসবাব সামগ্রী।
স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন, বসুন্ধরা ও পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে ২০ কাঠা অকৃষি জমি, ঢাকায় ১০ তলা ও সাভারে ছয়তলা বাড়ি, নিউ মার্কেট এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ও পটুয়াখালীতে বসতবাড়ি।
রনি ঋণ নিয়েছে ৫ কোটি, ৯৬ লাখ, ৪২,৫৩৫ টাকা। তবে তিনি ঋণখেলাপী নন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
সম্পদ বেড়েছে মনজুরের, আয় বেশি নাছিরের
বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলমের অস্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। হলফনামায় এবার তার অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৩০ কোটি ১৬ লাখ ৮৫,০০ টাকা।
২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নির্বাচনের সময় তার অস্থাবর সম্পদ ছিল ১৭ কোটি ৯৮ লাখ ২৫,০০০ টাকার।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের অস্থাবর সম্পদের মূল্য দেখানো হয়েছে সাড়ে ১১ কোটি টাকা। সম্পদের দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও বার্ষিক আয়ে মনজুরের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। তার বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
অন্যদিকে মনজুর আলমের আয় ১ কোটি ৯২ লাখ ৭৫,০০০ টাকা। ২০১০ সালে তার আয় ছিল ৫৬ লাখ ৭৫,০০০ টাকা।
নাছিরের ৮ কোটি ৪৪ লাখ দেনা রয়েছে এবং মনজুর আলমের দেনা ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
গত রবিবার দুই মেয়র প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হলফনামা জমা দেন। সেখানে তাদের আয়, ব্যয়, সম্পদ, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে।
এসএসসি পাস মনজুর নিজেকে শিল্পপতি হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ১২টি প্রতিষ্ঠানের তিনি কোনোটির চেয়ারম্যান, কোনোটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবার কোনোটির পরিচালক। তার বার্ষিক আয় ১ কোটি ৯২ লাখ ৭৫,০০০ টাকা। এর মধ্যে মেয়র হিসেবে তার বার্ষিক সম্মানী ৪ লাখ ৪৯,০০০ টাকা উল্লেখ করা হয়।
স্নাতক পাস আ জ ম নাছির উদ্দিন হলফনামায় ছয় ধরনের ব্যবসাকে তার পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বার্থ অপারেটিং, সোয়েটার কারখানা, ডেভেলপার, ফিশিং ব্যবসা, ঘাট ইজারা ব্যবসা ও তেল পরিবহন ব্যবসা রয়েছে। এসব খাত থেকে তার বছরে আয় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পরিচালক ভাতা হিসেবে বছরে তিনি আয় করেন ৪২ লাখ টাকা।
মনজুর আলমের স্ত্রীও সম্পদশালী। তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৭ লাখ টাকা। নাছির উদ্দিনের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর আলমের। পাঁচ বছর আগে তা ছিল ২৫ লাখ টাকা। ওই সময় তার নামে ব্যাংকে ৯২ লাখ ৭৫,০০০ টাকা থাকলেও এবার ব্যাংক জমা শূন্য দেখানো হয়েছে।
নাছিরের নামে ব্যাংকে জমা আছে ৯১ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে ১ লাখ ৮৪,০০০ টাকা। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার একটি পুরোনো জিপ রয়েছে। অন্যদিকে যানবাহন খাতে মনজুর আলমের ৪ লাখ ৩০,০০০ টাকা দেখানো হয়েছে।
মনজুরের স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৩৪,৮১৮ টাকা। এর মধ্যে অকৃষিজমির মূল্য ৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর নামে অকৃষিজমি রয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার।
অন্যদিকে নাছিরের স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর সম্পদ নেই। নাছিরের নামে ঢাকায় ১০ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে পৈতৃক বাড়ির ছয় ভাগের এক অংশের মালিক তিনি। তবে বাড়িটি কত কাঠার, তা হলফনামায় উল্লেখ নেই।
হলফনামা প্রকাশ করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সহকারী সচিব রাজীব আহসান বলেছেন, ‘নির্বাচনী বিধি অনুসারে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য ইসি প্রকাশ করছে। যার মাধ্যমে সাধারণ ভোটার প্রার্থীদের যাবতীয় তথ্য জানতে পারে। সব কিছু যাচাই-বাছাই করেই ভোটাররা যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করবেন।