সীমান্তে আবার প্রাণঘাতী

SHARE

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে বাহিনীর ভেতর ক্ষোভ ও অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। 83064_1

সম্প্রতি বিএসএফের এক অনুষ্ঠানে বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, আর তুমুল করতালিতে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন বাহিনীর বর্তমান অফিসাররা।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলানি খাতুনের হত্যার পর বিএসএফ ঘরে-বাইরে প্রবল সামলোচনার মুখে পড়ে।

ভারতের হবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিপূর্বে বিএসএফের হাত থেকে অস্ত্র কাড়ার সমালোচনা করেছিলেন; আর বিজেপি নেতারাও এখন ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাদের সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

তিন বছর আগে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদম্বরমের নির্দেশে বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের লেথাল ওয়েপন বা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছিল।

কিন্তু তারপর সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে মাদক বা জাল নোট পাচার, চোরাকারবার সবই অনেকগুণ বেড়েছে বলে বিএসএফের দাবি।

কিন্তু এ সপ্তাহে বিএসএফের প্রতিষ্ঠাতা কে রুস্তমজির নামাঙ্কিত বার্ষিক স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যেভাবে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ সামনে চলে এসেছে, তা বাহিনীতে প্রায় নজিরবিহীন।

বাহিনীর সাবেক এক প্রধান সেখানে বলেন, ‘বিএসএফের লড়াই করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে – যা মেনে নেওয়া যায় না। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিএসএফও যাতে সঠিকভাবে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ডি. দেশরাজ আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে যে অনুপ্রবেশকারীদের গুলি চালাতে নিষেধ করা হয়েছে, তা বাহিনীর মূল নীতিরই পরিপন্থী। ভারী উর্দিতে সজ্জিত জওয়ানরা ছুটে গিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে পারে না, কাজেই ফায়ারিং ছাড়া এখানে উপায় নেই। আর তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশ প্রত্যাহার করাটা জরুরি।’

বিএসএফের এক সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক পি. কে. মিশ্রও জানান,এতে বাহিনীর মনোবল পুরো ভেঙে পড়ছে। বিশেষ করে যে জওয়ানরা পাকিস্তান সীমান্ত থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে আসছে তারা মানিয়ে নিতে পারছে না। অথচ ভারতের পশ্চিম সীমান্তের চেয়ে পূর্ব সীমান্তেই বিপদের হুমকি অনেক বেশি।

বিএসএফের এই সদ্য-প্রাক্তন কর্তারা তাদের ক্ষোভ উগড়ে দেন দেশের উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নেহচল সান্ধু ও বাহিনীর ডিজি ডি কে পাঠকের সামনেই।

হলভর্তি বিএসএফ কর্মকর্তারা যেভাবে তুমুল করতালিতে ওই বক্তব্যে সায় দেন, তাতে বিএসএফ নেতৃত্ব কোনো জবাবই দিতে পারেননি।

কিন্তু পরে একান্ত আলোচনায় তারা বলছেন, লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করতে না-পারায় সত্যিই জওয়ানরা ক্ষুব্ধ এবং দেশের নতুন সরকার এই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করবে বলেই তাদের বিশ্বাস।

হবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই মাসকয়েক আগে হায়দ্রাবাদে এক জনসভায় বলেছিলেন, বিএসএফকে অস্ত্র ব্যবহার করতে না-দিয়ে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঢালাওভাবে ভারতে ঢুকতে দিয়ে দেশের নিরাপত্তার সঙ্গেই আপোস করা হচ্ছে। এটা তিনি কিছুতেই বরদাস্ত করবেন না।

কিন্তু এখন ক্ষমতায় আসার পর মোদির সরকার কি আবার বিএসএফের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে?

ভারতের যে রাজ্যে অনুপ্রবেশ একটি প্রধান নির্বাচনী ইস্যু, সেই আসামে বিজেপির সভাপতি ও লখিমপুরের এমপি সর্বানন্দ সোনোওয়াল বিবিসিকে বলছিলেন, ‘নিশ্চিন্ত থাকুন – অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য ঠিক যেটা করা দরকার সেটাই আমরা করব।’

তার বক্তব্য হল, ‘প্রশ্নটা দেশের সুরক্ষার। কাজেই এখানে আপোস করা যাবে না। একটু অপেক্ষা করুন। আপনারা সবাই দেখতে পাবেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সরকার কী করে।’

প্রকাশ্যে এর বেশি বলতে না চাইলেও বিজেপি নেতারা অনেকেই বলছেন, বিএসএফের মনোবল ভেঙে পড়ে এমন কিছুকে মোদি সরকার মোটেই প্রশ্রয় দেবে না।

আর সেই ভরসাতেই আবার অস্ত্র হাতে ফিরে পাওয়ার আশা করছেন পূর্ব সীমান্তের বিএসএফ জওয়ানরা – বাংলাদেশের ভেতরে তার যতই বিরূপ প্রতিক্রিয়া হোক না-কেন।

সূত্র: বিবিসি