প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রাজবাড়ী থেকে এক তরুণীকে ফুঁসলিয়ে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে এনে বিক্রি করেছে প্রেমিকরূপী দালাল তুষার আহমেদ ওরফে মজনু। পরে বিক্রির পাওনা টাকা আনতে গিয়ে রোববার রাতে স্থানীয় জনতার হাতে ধরা পড়ে ওই দালাল মজনু। এ সময় স্থানীয় জনতা তাকে বেদম গণপিটুনি দিয়ে তাকে স্থানীয় থানা পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ পতিতাপল্লীর বাড়িওয়ালী শাহানাজ বেগমের ঘর থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই ফিরোজ আহমেদ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উদ্ধারকৃত ওই তরুণী রাজবাড়ী সদর থানার আটদাপুনিয়া গ্রামের এক দিনমজুরের মেয়ে। মজনু (২৫) একই থানার চন্দনি উত্তরপাড়া গ্রামের আব্দুস ছাত্তার শেখের ছেলে। তিনি একজন অটোরিকশা চালক। গত দুই মাস আগে অটোরিকশার যাত্রী হওয়ার সুবাদে ওই তরুণীর সঙ্গে মজনুর প্রথম পরিচয় হয়। তখন কৌশলে মজনু তার মোবাইল নাম্বারটি রেখে দেয়। এরপর থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা হতে থাকে। এক পর্যায়ে অটোরিকশাচালক মজনুর কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়ে মেয়েটি তাকে ভালোবেসে ফেলে। গত শুক্রবার বিকেলে বিয়ে করার কথা বলে মজনু তার প্রেমিকা তরুণীকে পাশের ‘প্রেমের বটতলা’নামক এলাকায় আসতে বলে। ভারেঅবাসার টানে মেয়েটি বাড়ি ছেড়ে প্রেমের বটতলায় ছুটে যায়। সেখানে মেয়েটি আসার পর ‘চলো আমরা বিয়ে করবো’- এ কথা বলে মজনু ওই মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে অটোরিকশাযোগে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে নিয়ে আসে। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ওই দিন সন্ধ্যায় যৌনপল্লীর বাড়িওয়ালী শাহানাজ বেগমের কাছে চল্লিশ হাজার টাকায় প্রেমিকাকে বিক্রি করে মজনু। এ সময় বাড়িয়ালী ১৫ হাজার টাকা বাকি রাখে দুইদিন পরে দেবে বলে
মজনু তখন কোনো কথা না বলে যৌনপল্লী ছেড়ে দ্রুত চলে যায়। এরপর থেকে শাহানাজ বাড়িওয়ালী ওই তরুণীকে দিয়ে জোর করে দেহ ব্যবসা চালানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। কথামত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মজনু পাওনা ১৫ হাজার টাকা আনতে ফের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর শাহানাজ বাড়িওয়ালীর বাড়িতে আসেন। তখন পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না চাইলে এ নিয়ে ওই বাড়িওয়ালীর সঙ্গে মজনুর বাকবিতন্ডা হয়। এবং মজনু বিক্রির টাকা ফেরত দিয়ে তার প্রেমিকাকে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় বিষয়টি টের পেয়ে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তুষার মজনুকে আটক করে বেদম গণপিটুনি দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দালাল মজনুকে গ্রেফতার ও শাহানাজ বাড়িওয়ালীর ঘর থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। এর আগে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়িওয়ালী শাহানাজ বেগম পালিয়ে যান।
উদ্ধারকৃত ওই তরুণী পুলিশ ও সাংবাদিকদের বলেন, “এই মজনু আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। এ কারণে তার হাত ধরে আমি আমার বাবা-মায়ের ঘর ছেড়েছিলাম। অথচ ভারোবাসার নামে সেই মজনু আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।”
গোয়ালন্দঘাট থানার ওসি একেএম নাসির উল্যাহ জানান, এ ব্যাপারে গোয়ালন্দঘাট থানায় মানব পাচার আইনে মামলা হয়েছে। পলাতক শাহনাজ বেগমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।