ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্র দিতে যাচ্ছে জার্মানি

SHARE

জার্মানির বেসরকারি প্রতিরক্ষা কোম্পানি ‘রাইনমেটাল’ ইউক্রেনকে দ্রুত ভারী সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য সরকারের অনুমতি চেয়েছে৷ জার্মানি দ্রুতই ইউক্রেনে ভারী অস্ত্র পাঠাচ্ছে বলে জানা গেছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) জার্মানির রাইনলান্ড ফাল্জ অঙ্গরাজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানঘাঁটি রামস্টাইনে বিশ্বের ৪০টি দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ খবর জানান জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিনা লাম্বরেখট। এমনকি এসব সমরাস্ত্র চালাতে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দিতেও পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

রাশিয়ার সামরিক অভিযান মোকাবিলা করতে ইউক্রেন আন্তর্জাতিক সহযোগীদের কাছে দ্রুত আরও ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদের আবেদন করে চলেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে আরও সহায়তার উদ্যোগ নিলেও জার্মানি এখনো দ্বিধা ঝেড়ে ফেলতে পারছে না৷ দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার দ্রুত সিদ্ধান্তের অঙ্গীকার করেছে৷ তবে এ ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা স্থির করা হয়নি৷

এবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে অত্যাধুনিক ফাইটার হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া ট্যাংক ও যুদ্ধজাহাজসহ ভারী অস্ত্র সহায়তায় কিয়েভের আবেদনে সাড়া দিতে সোভিয়েত যুগের আর্টিলারি, বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র লেওপার্ড ট্যাংক ও ক্ষেপণাস্ত্র জেপার্ড দিতে যাচ্ছে জার্মানি।

‘রাইনমেটাল’ জানিয়েছে, যে তারা ‘মার্ডার’ মডেলের ১০০টি পুরনো সামরিক যান দ্রুত ইউক্রেনকে সরবরাহ করতে পারে৷ নিয়ম অনুযায়ী জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি পেলেই সেগুলো পাঠানো যেতে পারে৷ চ্যান্সেলর হিসেবে শলৎস সেই পরিষদের প্রধান৷ ‘ডি ভেল্ট’ সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী গত সপ্তাহে অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতির আবেদন করা হয়েছে৷ সেই কোম্পানি সেইসঙ্গে ৮৮টি পুরানো ‘লেওপার্ড ৮৮’ ট্যাংকও পাঠাতে পারে বলে দাবি করেছে সেই সংবাদপত্র৷ রাইনমেটাল অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করে নি৷ উল্লেখ্য, জার্মানির সরকার এভাবে ইউক্রেনকে জার্মানি থেকে সরাসরি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য আর্থিক সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে ভারি অস্ত্রের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমতির নিয়মে কোনো হেরফের হচ্ছে না৷

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী মূলত সোভিয়েত আমলের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে অভ্যস্ত বলে বিপদের সময়ে পূর্ব ইউরোপসহ অন্যান্য উৎস থেকে সে দেশকে সেই ধরনের সরঞ্জাম পাঠানোর উদ্যোগ চলছে৷ এ ক্ষেত্রে জার্মানিও স্লোভেনিয়ার মতো দেশের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে ইউক্রেনকে সহায়তার অঙ্গীকার করেছে৷ অর্থাৎ স্লোভেনিয়া ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় ট্যাংক সরবরাহ করলে সে দেশকে বিকল্প হিসেবে জার্মান ট্যাংক সরবরাহ করবে৷ রাইনমেটাল কোম্পানি সরাসরি ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহ করার অনুমতি পেলে সঙ্গে প্রশিক্ষণেরও প্রস্তাব দিয়েছে৷ যন্ত্রাংশ ও মেরামতির দায়িত্বও পালন করবে সেই কোম্পানি৷ সংবাদ সংস্থা ডিপিএ এই সংক্রান্ত নথিপত্র পরীক্ষা করে এমন দাবি করেছে৷

‘ডি ভেল্ট’ সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী, ‘ক্রাউস মাফাই ভেগমান’ নামের জার্মানির আরেকটি কোম্পানিও ইউক্রেনকে ভারি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে আগ্রহী৷ সরকারি অনুমতি পেলে ১০০টি সেল্ফ প্রপেল্ড হাউইৎসার কামান ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে পারে এই কোম্পানি, যেগুলি ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে আঘাত হামতে পারে৷ উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডসও একই ধরনের ৪০টি কামান ইউক্রেনকে সরবরাহ করছে৷ জার্মান সরকার সেই প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে৷

এদিকে, ইউক্রেনকে ভারী সমরাস্ত্র সহায়তা দেওয়ার কারণে জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পশ্চিমা কোনো সাহায্যই ইউক্রেনকে রুশ বাহিনীর কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না বলেও দাবি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।

প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

৬২ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৬৩তম দিন। কিয়েভ থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। এখ পুরো ডনবাস অঞ্চল তারা দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।