‘বাংলাদেশ এখন বড় টিমকেও ধূলায় মিশিয়ে দিতে চাইবে’

SHARE

rubel10বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে পরের ছবিগুলো নয়। আগের একটা দিয়ে লেখা শুরু করছি।

মন দিয়ে ম্যাচটা দেখব বলে একেবারে ওয়ার্ম আপ থেকে বসে গিয়েছিলাম। দেখছিলাম, মাশরফি-সাকিবরা আশ্চর্য রকম ফুরফুরে। নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা চালাচ্ছে। ইয়ার্কি মারছে। অদ্ভুত মেজাজে টিমটা। দেখে কে বলবে, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ওরা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামছে!

সাধারণ গ্রুপের ম্যাচ যেটা নয়। গুরুত্ব ধরলে আদতে বিশ্বকাপের প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল। যেখানে হেরে যাওয়া মানে ব্যাগপত্র গুছিয়ে দেশের ফ্লাইট ধরা। এমন একটা ম্যাচে বড় টিম ও রকম মেজাজে থাকতে পারে। তা বলে বাংলাদেশ? তখন একবার মনে হয়েছিল, এরা আর পাঁচটা বাংলাদেশ টিমের মতো হবে না। এরা লড়বে। পাল্টা দেবে। বড় টিমকেও ধুলোয় মিশিয়ে মাঠ ছাড়তে চাইবে।

বিশাল অঘটন না ঘটলে শেষ আটে ভারত-বাংলাদেশ হচ্ছে। ভারতের দিক থেকে যদি ওপর-ওপর দেখা যায়, বলতে হবে ভালই হলো। ইংল্যান্ড পড়লে ওরা মানসিক সুবিধা পেত। কারণ গত দু’মাসে দু’ বারে দু’ বারই ভারতকে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। কোয়ার্টার ফাইনালে ওদের বিরুদ্ধে নামলে ধোনিদের মনে হয়তো এটা চলত যে, গত দু’মাসে ওদের বিরুদ্ধে তো আমরা জিততে পারিনি। সে দিক থেকে বাংলাদেশ পড়লে ব্যাপারটা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু সেটা হয় প্রতিপক্ষের নাম বিচারে। বাস্তব আলাদা। বাস্তব হলো, প্রতিপক্ষের নাম-টাম ভুলে যেতে হবে। ইংল্যান্ড পড়লে যতটা সিরিয়াস ভাবে নিতে হত ধোনিদের, বাংলাদেশকেও ততটাই নিতে হবে।

না। আরও বেশি।

কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাটা সাকিবদের কাছে বিশাল কৃতিত্ব। ধোনি-কোহলিদের কাছে নয়। ওদের কাছে ব্যাপারটা প্রত্যাশিত। বাংলাদেশ যদি কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেও যায়, তা হলে ওদের দেশে বিক্ষোভ হবে না। বরং ক্রিকেটাররা পিঠ চাপড়ানি পাবে এত দূর আসার জন্য। উল্টোটা হলে কিন্তু ধোনিদের কপালে দুঃখ থাকবে।

বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ পড়া মানে ২০০৭-এর প্রসঙ্গ আসবেই। বলছি না, সেই বিপর্যয় আবার ঘটতে চলেছে। অঘটন এক-আধবারই ঘটে। কিন্তু এটাও সত্যি যে বাংলাদেশের এই টিমটা একটা বা দু’টো স্টারের উপর দাঁড়িয়ে নেই। এই টিমে একটা সাকিব আল হাসানের ততটাই গুরুত্ব যতটা সৌম্য সরকারের। কারণ এটা টিম বাংলাদেশ। এক-আধজনকে ঘিরে ঘুরপাক খাওয়া টিম নয়। যেটা ভারতের সবচেয়ে বড় কাঁটা হতে পারে।

টিমটার ব্যালান্স ভাল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সোমবার ওদের ব্যাটিং শুরুতে ঝামেলায় পড়ল। একশোর মধ্যে চার উইকেট চলে গিয়েছিল। তামিম, সাকিব সবাই আউট। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ আর মুশফিকুর রহিম ঠিক ধরে নিল। মাহমুদুল্লাহ তো সেঞ্চুরি করে গেল! বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম। ওরা দু’জন মিলে স্কোরকে ২৭৫-এ নিয়ে গেল। আর বোলিং? সাকিব কেমন স্পিনার নতুন করে বলার দরকার নেই। পেস বোলিংয়ে মাশরফি মর্তুজা অসাধারণ না হলেও জায়গায় বলটা রেখে যাবে। আর আছে রুবেল হোসেন। ছেলেটা ঘণ্টায় এ দিন ১৪৫ কিমি তুলল! তার সঙ্গে রিভার্স সুইং! স্টুয়ার্ট ব্রড কী ভাবে বোল্ড হল দেখেছেন? ১০ বলে ১৬ চাই, দু’টো উইকেট তুলতে হবে ওই অবস্থায় ও রকম গতিতে রিভার্স করিয়ে দু’টো উইকেট তুলে নেওয়া বোধহয় একটু কঠিন কাজ!

অর্থাৎ, এরা যেকোনো টিমকে চমকে দিতে পারে। এরা বিশ্বাস করে, হারার আগে হার বলে কিছু হয় না। এদের ক্যাপ্টেন টিমের কাছে নিজেকে তুলে আনে। মাশরফির হাঁটুর অবস্থা বেশ খারাপ। তা নিয়েই সোমবার পাওয়ার প্লে-তে বল করল। ডাইভ দিয়ে বাউন্ডারি আটকাল। টিমকে বোঝাল, আমি জেতার জন্য জীবন দিয়ে দেব। বাকি দশ জন তো এ সব দেখে তেতে যাবে। আবেগ, আগুন আর আত্মবিশ্বাস এই তিনটে ব্যাপার মাশরফিদের সম্পদ। ভারতের বিরুদ্ধে পড়লে যারা আরও জেদ নিয়ে নামবে। চাইবে, এমন কিছু করে দিতে যাতে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ কোনো দিন বাংলাদেশকে ভুলতে না পারে!

দীপ দাশগুপ্ত: ভারতের সাবেক ক্রিকেটার