সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি মানবতা লঙ্ঘন কীভাবে হয় : প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর

SHARE

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আদালত দ্বারা দোষী ব্যক্তি, তাও এতিমের টাকা আত্মসাতের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি কীভাবে মানবতা লঙ্ঘন হয়। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলেই বলা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ঐতিহাসিক কপিলমুনি মুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঐতিহাসিক কপিলমুনি মুক্ত দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি।

স্বাধীনতা বিরোধীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, তারা মানবতার কথা বলে। কথায় কথায় বলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ৩০ লাখ মানুষ মারলো তাদের দাফন-কাফনও তো করায় নাই। সেই সময় মানবতা লঙ্ঘিত হয় নাই! মানবতার লঙ্ঘন হয় এখন?

মোজাম্মেল হক বলেন, বাঙালির ওপর নানা অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। বাংলা রাষ্ট্রভাষায় কথা বললে ইসলাম থাকবে না। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টকে নৌকা মার্কায় ভোট দিলে বউ তালাক হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মা-বোনদের বলা হয়েছে তারা গণিমতের মাল। এত মুনাফেক বেইমান ছিল তারা। আমাদের পবিত্র ধর্মকে তারা চরমভাবে অবমাননা করেছে। এখনো এই স্বাধীন দেশেও তারা ধর্মের নামে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ওই শক্তি এখনো ধর্মের অব্যাখ্যা করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তারা বিশ্বাস করে না।

তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে মূলত দু’টি ধারা। এক ধারায় আমরা আরেক ধারায় আওয়ামী লীগকে বিরোধিতা করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিরোধিতা করার জন্য তারা সবাই মিলে একত্রিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অ্যান্টি আওয়ামী লীগ এই দুটি ধারায় তারা বিভক্ত হয়েছে। এটা কাম্য নয়। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিভিন্ন মতের লোক থাকবে, ধারা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ধারাটা যদি আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে অর্জন সেটাকেই স্বীকার না করা হয়, আমাদের যে চার মূলনীতি সেটাকেই স্বীকার না করা হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা তা আমরা মনে প্রাণে ধারণ করবো না।

মন্ত্রী বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় কিছুদিন আগে ক্রিকেট খেলার সময় নিজ দেশকে বাদ দিয়ে যাদের হাতে রক্তের দাগ রয়েছে তাদের পতাকা নিয়ে সমর্থন করা হলো। এর আগে কখনো এমন দেখিনি।

স্বাধীনতাবিরোধীদের উদ্দেশে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, পরাজয়ের গ্লানি কেউ ভুলতে পারে না। সেজন্যই এখনো তারা ও তাদের উত্তরসূরিরা তা ভুলতে পারে না।

ঐতিহাসিক এই দিনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে স্মরণ করে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ভারতের বীর জনতা এবং সৈন্যরা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে, জীবন দিয়েছে। সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সেভেন সিস্টারের যত ভারতের বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী আছে বাংলাদেশ তাদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র ছিল। অনুপ চেটিয়া, ১০ ট্রাক অস্ত্র দিয়ে তাদের পোষা হয়েছে। ভারতের অপরাধ কী? আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহযোগিতা করেছিল। না হলে তো নয় মাসে আমরা দেশ স্বাধীন করতে পারতাম না। দীর্ঘ সময় লাগতো, আরও অনেক রক্ত দিতে হতো।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারা এসেছে তারা মুক্তিযুদ্ধকেই বিশ্বাস করে না। যদিও নামেমাত্র তারা স্বাধীনতা দিবস পালন করতো। এটা তাদের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কিন্তু মনে-প্রাণে তারা এসব ধারণ করে না। পাকিস্তানিদের পরাজয় ও বাঙালিদের জয় হয়েছে এটা তারা মানতে পারে না।

অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চর্চা হয়। এটা বেশ ভালো উদ্যোগ। এসব বেশি বেশি আলোচনা হওয়া দরকার।

নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, শুকুর আলী সুমন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন মালা, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম প্রমুখ।