‘উত্তরপাড়ার কথা বলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করেছেন প্রধানমন্ত্রী’

SHARE

salahuddin8বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী উত্তরপাড়ার ক্ষমতা দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করেছেন। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে দখলকৃত অবৈধ ক্ষমতা হারানোর শঙ্কা ও আসন্ন নির্মম পরিণতির ভাবনার কথাই তাতে প্রকাশিত হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই।

তিনি বলেন, “সংবিধানই শেষ কথা নয়, কোনো সংবিধানই অপরিবর্তনযোগ্য নয়, জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন বর্তমান সময়ের দাবী। সংবিধানই শেষ কথা নয়,  জনগণের জন্যই সংবিধান, সংবিধানের জন্য জনগণ নয়।”

সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন,  “রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ক্ষমতার বাইরে গণশক্তির ক্ষমতার ধারণা এদেশের জনগণ ১৯৬৯, ৭১ এবং ৯০’-এ প্রমাণ করেছে। রাষ্ট্রীয় শ্বেতসন্ত্রাস ও গণহত্যার বিরুদ্ধে আজ গণশক্তির বহুমাত্রিক উত্থান হয়েছে। সেই গণশক্তির প্রচণ্ড সুনামিতে আওয়ামী লীগের অবৈধ ক্ষমতার মসনদ ভেসে যাবে অচিরেই।”

তিনি বলেন, “১৯৯৫-৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নিয়ে আমরা সংবিধান সংশোধন করেছিলাম। সেই দাবিতে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে জামায়াত-জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখলের সুবিধার্থে সেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এবং সংবিধানের এক তৃতীয়াংশ অপরিবর্তনযোগ্য করে ভবিষ্যত সংসদের ক্ষমতা হরণ করা হয়েছে, যা সরাসরি বেআইনি। অতএব সেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাও বেআইনি। কোনো সংবিধানই অপরিবর্তনযোগ্য নয়, জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন বর্তমান সময়ের দাবি।”

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রোববার উত্তরপাড়ার ক্ষমতা দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করেছেন। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে দখলকৃত অবৈধ ক্ষমতা হারানোর শঙ্কা ও আসন্ন নির্মম পরিণতির ভাবনার কথাই তাতে প্রকাশিত হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। এদেশের জনগণ জানে-আওয়ামী লীগের পক্ষে তিনি ১৯৮২ সালে সামরিক সরকারকে স্বাগতম জানিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৭ম সংশোধনীর মাধ্যমে এরশাদের স্বৈরশাসনকে বৈধতা দেন। তিনিই ২০০৭ সালের মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের ১/১১ এর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন-তাদের লগি-বৈঠার নরহত্যার আন্দোলনের ফসল ছিল সেই সরকার এবং তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পুরোপুরি বৈধতা দেন। সেই মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকারের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো। বলা বাহুল্য, তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি বরং তাদের পুরস্কৃত করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। সুতরাং কারা অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক শক্তিকে বারবার আহবান করেছে, স্বাগত জানিয়েছে এবং বৈধতা দিয়েছে সেই ইতিহাস এদেশের জনগণ জানে।”

তিনি বলেন, “আমরা বলতে চাই-বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী দেশের একটি নিয়মতান্ত্রিক সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। অগণতান্ত্রিক কোনো পন্থাকে বিএনপি কখনো স্বীকৃতি দেয়নি। বরং আওয়ামী লীগের স্বৈরতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক ও নৈরাজ্যকর মানসিকতা ও কর্মকান্ডের কারণেই অগণতান্ত্রিক শক্তির উদয় হয়েছে প্রতিবার। দেশ ও জাতির গর্ব সেনাবাহিনী তাদের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী জাতীয় সেনাবাহিনীকে আমরা কখনোই বিতর্কে জড়াতে চাইনা।”

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল দরজা বন্ধ করে, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বাজেয়াপ্ত করে, গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে, বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণ ও কুক্ষিগত করে শুধুমাত্র বন্দুকের নল ব্যবহার করে অবৈধ সরকার প্রকারান্তরে অগণতান্ত্রিক শক্তি ও উগ্রবাদকে উৎসাহিত করছে। যার পরিণামে গণতন্ত্রের যাত্রা ব্যাহত হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।”

তিনি বলেন, “গতকাল মিরপুর থানা পুলিশ মিরপুর ১০ নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতিকে থানায় ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে ক্রসফায়ারের গল্প সাজিয়েছে। আরো তিন জনকে একইভাবে গুলি করে হত্যা করার পর গণপিটুনির কাহিনী সাজিয়েছে মিরপুর থানা পুলিশ। আমরা এ ধরণের ঘৃন্য নরহত্যার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। ”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “গণপিটুনি, ছিনতাইকারী ইত্যাদি নাম দিয়ে মূলত বিচারবহির্ভুত হত্যার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে সরকারি বাহিনী। কিন্তু প্রত্যেকটি হত্যার হিসাব রাখা হচ্ছে এবং সময়ের পরিবর্তন হলেএর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত আদালতে বিচারের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, রোববার কেরানীগঞ্জে র্যাবের হাতে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর হোসেন পেট্রবোমাসহ ধরা পড়লেও এ বিষয়ে সরকারের কোনো বক্তব্য নেই। ইতোপূর্বে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেট্রলবোমা, আগ্নেয়াস্ত্র ও ককটেলসহ হাতে নাতে ঘটনাস্থল থেকে ধৃত আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আটক করা হলেও তাদেরকে উপরের নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সরকারি পরিকল্পনায় পরিচালিত নাশকতার ষড়যন্ত্র এখন জনগণের সামনে দিবালোকের মতো পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রী র্যাব-পুলিশ-বিজিবিকে রক্ষীবাহিনী স্টাইলে গণহত্যার হুকুম দিয়ে তার দায়ভার নিজের কাঁধে নিলেও কেউই গণহত্যার বিচার থেকে রেহাই পাবে না।”

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আজ প্রত্যেক ঘরে ঘরে গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলন গড়ে উঠেছে। অবরুদ্ধ ও বিলুপ্তপ্রায় গণতন্ত্রের মুক্তির সংগ্রাম ভোটাধিকার, মৌলিক মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত জনগণের ন্যায্য আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”