ঢাবিতে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ছাত্রদলের

SHARE

du satrodol‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত না করা এবং সহ-অবস্থান নিশ্চিত না করতে পারায় ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকে’র পদত্যাগের দাবিতে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসান।

শনিবার দুপুরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের দফতর সম্পাদক মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ ধর্মঘটের ডাক দেয় সংগঠনটি।

বিবৃবিতে নেতারা বলেন, ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ে সহাবস্থান এখন নির্বাসিত। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আলটিমেটাম দিলেও তার কোনো সুফল সরকারী ছাত্র সংগঠন ব্যাতীত অন্য কেউ পায়নি। এর অন্যতম কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন একজন দলকানা ভিসির তত্ত্বাধানে পরিচালিত হচ্ছে।

ছাত্রলীগের আজ্ঞাবহ এবং ছাত্রলীগের অপকর্মের দোসর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিএখন ছাত্রলীগকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকত্ব না করে ছাত্রলীগের অভিভাবক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালাচ্ছেন।

তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক দশকের ইতিহ্য হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ বা সংগঠনের কোনো ছাত্র আহত হয়ে হাসপাতালে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে দেখতে যায় এবং সান্ত্বনা দেয়। কিন্তু আওয়ামী অন্তপ্রাণ বর্তমান এই ভিসি ছাত্রলীগ ব্যাতীত অন্য কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই মনে করে না। তাই তাদেরকে দেখতে যাওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন না।

আমরা বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারক লিপি দিয়েছি ও আহবান জানিয়েছি আমাদের শত শত শিক্ষার্থীর হলে অবস্থান এবং রা্জনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু সরকারের এজেন্ডায় এবং ভিন্নমত দমনের অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভিসি আমাদের কোন দাবি আমলে নেননি। তাই নেতৃদ্বয় অবিলম্বে দলকানা এবং ছাত্রলীগের দোসর ভিসি পদত্যাগ দাবি করেন।

তারা বলেন, এই ভিসি যতদিন পর্যন্ত পদত্যাগ না করবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।

তারা আরো বলেন, এখন আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধান অন্তরায় সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী এই ভিসি। আমরা মনে করি এই ভিসি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে উনার অপ্রতুল জ্ঞানের কারণে উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবেগ অনুভূতি ঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারছেন না।

নেতৃদ্বয় বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ছাত্রলীগের অব্যহত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরন ও খুনের ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনসহ সরা দেশ এখন মৃত্যুপুরী। বিগত আওয়ামী সরকারের পাঁচ বছর ও ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনে গঠিত অবৈধ সরকারের এক বছরে নিজেদের অভ্যন্তরীন কোন্দলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই খুন হয়েছে প্রায় ৫০ জনের অধিক মেধাবী ছাত্র।

শুধু তাই নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিচ্ছিন্ন ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদেরকে তাদের দলীয় কর্মসূচিতে যেতে চাপ প্রয়োগ করছে। সত্য প্রকাশের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগে মেধাহীন ছাত্রলীগের ক্যাডারদেরকে নিয়োগ দিচ্ছে প্রশাসন।

নেতৃদ্বয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকল অন্যায় ও প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থল। ১৯৫২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাই আমরা  যারা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী তারা কেমন করে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায়, অবিচার আর অগণতান্ত্রিক পরিবেশ মেনে নিতে পারি।

দেশের মানুষ যেখানে আমাদের কাছ থেকে ন্যায়, নিষ্ঠা আর সহমর্মিতা আশা করে সেখানে কিভাবে আমরা একটি জঙ্গি ছাত্র সংগঠনের কাছে জিম্মি হয়ে যেতে পারি। ছাত্রলীগ আজ অবৈধ সরকারকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে পেট্রোল বোমা আর ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। তাই নেতৃদ্বয় সবার প্রিয় বিদ্যাপীঠকে এখনই রক্ষায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান এবং ঘোষিত ধর্মঘটে একাত্মতা প্রকাশের অনুরোধ করেন।

তারা বলেন, কিন্তু এই নৈরাজ্য আর চলতে দেয়া যায় না।এখন সময় এসেছে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারো পৈতৃক সম্পতি নয়। এখানে অধিকার রয়েছে সকল মতের ছাত্রদের সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করার। তাই যতদিন পর্যন্ত সকল সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের ছাত্র ধর্মঘট চলবে।