বিদেশি মদ পান, ওয়াকিটকি রাখায় হাজী সেলিমের ছেলের জেল

SHARE

নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে মো. ইরফান সেলিম ও তাঁর দেহরক্ষী জাহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ইরফানকে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে এক বছর ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে আরও ছয় মাস কারাদণ্ডাদেশ দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আর জাহিদুলকে অবৈধ ওয়াকিটকি বহনের দায়ে ছয় মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ইরফান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আর জাহিদুল, ইরফানের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করছেন।

আজ সোমবার দুপুরে চকবাজারে হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান করে র‌্যাব। র‌্যাব জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এবং একজন ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত আসামি সাংসদ হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এ সময় সাংসদ বাসায় ছিলেন না। অভিযান শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে গ্রেপ্তার দুজনকে নিয়ে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান অভিযানে অংশ নেওয়া র‌্যাব সদস্যরা।

গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর মিরপুর সড়কের কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে মারধরের শিকার হন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খান।

তাঁর মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি।

এরপর গাড়িটি থেকে কয়েকজন ব্যক্তি নেমে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সকাল পৌনে আটটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার একটি মামলা হয়। হাজী সেলিমের ছেলে ইরফানসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন মারধরের শিকার নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ।

সন্ধ্যায় র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ। তিনি বলেন, অভিযানের সময় বাসা থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ইয়াবা, বিদেশি মদ, ১০ ক্যান বিয়ার, হ্যান্ডকাপ, অনুমোদনহীন ৩৮টি ওয়াকিটকি ও সেল উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ওয়াকিটকি রাখা ও বিদেশি মদ পানের কারণে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক ভাবে গ্রেপ্তার দুজনকে দুটি মামলায় ছয় মাস করে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। আশিক বিল্লাহ বলেন, এই দুজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে আরও দুটি নিয়মিত মামলা করা হবে।

অভিযান প্রসঙ্গে র‌্যাবের পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন, বাসায় ৩৮টি অনুমোদনহীন ওয়াকিটকি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হাই ফ্রিকোয়েন্সি ডিভাইস পাওয়া গেছে তিনটি।

পাশাপাশি ওয়াকিটকির মূল যে সেন্টার সেটিও বাসায় পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান জানিয়েছেন, মূলত তাদের ব্যবসায় এই ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হয়। তবে বিভিন্ন মাধ্যম ও গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে র‌্যাব জেনেছে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এগুলো ব্যবহার হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি বাসা থেকে এয়ারগান, গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গতকাল (রোববার রাতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর) একটি ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর পাশাপাশি র‌্যাব অস্ত্র ও বিদেশি মদ রাখার কারণে আরও দুটি মামলা করবে।

হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চলার মধ্যে বেলা সোয়া তিনটার দিকে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ইরফান ও জাহিদকে র‌্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

ওই বাসা থেকে হেফাজতে নেওয়া দুজনের পরিচয় জানাতে গিয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, ইরফান সেলিম ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল এবং নোয়াখালীর একজন সাংসদের জামাতা। আর জাহিদ হলেন ইরফানের দেহরক্ষী। তিনি বলেন, নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের সময় ঘটনাস্থলে এ দুজনই উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল রোববার রাত পৌনে দিকে রাজধানীর কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে মারধরের শিকার হন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খান। তাঁর মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় সাংসদের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি। এরপর গাড়িটি থেকে কয়েকজন ব্যক্তি নেমে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় আজ সকাল পৌনে আটটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার একটি মামলা হয়। হাজী সেলিমের ছেলেসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন মারধরের শিকার নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খান।

ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) রবিউল ইসলাম বলেন, মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন ইরফান সেলিম, এ বি সিদ্দিক দীপু, জাহিদ, মীজানুর রহমান ও অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজন।

ধানমন্ডি থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল্লাহ জাহিদ বলেন, যে গাড়িটি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিয়েছিল ওই গাড়ির মালিক সাংসদ হাজী সেলিম। অবশ্য ঘটনার সময় সাংসদ গাড়িতে ছিলেন না। তাঁর ছেলে ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। পুলিশ সাংসদের গাড়ি ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তার মোটরসাইকেল ধানমন্ডি থানায় রেখেছে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তিনি রাস্তায় জটলা থেকে মুঠোফোনে ভিডিও করেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আহত এক ব্যক্তি নিজেকে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ বলে পরিচয় দেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি স্ত্রীসহ মোটরবাইকে ফিরছিলেন। ওই গাড়ি তাঁর মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। তিনি তখনই মোটরসাইকেল থামান এবং নিজের পরিচয় দেন। গাড়ি থেকে নেমে দুই ব্যক্তি তাঁকে মারধর করেন।