ইমারজেন্সি মেইল সার্ভিসের (ইএমএস) মাধ্যমে ফরেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে অবাধে আসছে সোনার চোরাচালান। বিগত কয়েক বছর ধরে সোন চালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ডাক বিভাগের ফরেন পোস্ট অফিসগুলো। বহুকাল থেকেই সক্রিয় চোরাকারবারী চক্র। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল নেয় চোরাকারবারি চক্র। সরকারের কঠোর নজদারি সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না সোনার অবৈধ চালান।
কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে প্রধান পোস্ট অফিসের (জিপিওর) বৈদেশিক শাখা ও বিমানবন্দর শাখা এখন সোনা চোরাকারবারিদের নিরাপদ পথ। ইমারজেন্সি মেইল সার্ভিসের (ইএমএস) মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অবাধে ঢুকছে সোনার চোরাচালান। কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র ও কর্মকর্তার যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরেই পার্সেল মালপত্রের নামে গাড়ির যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার পার্টস, ইলেকট্রনিঙ পার্টস, বইপত্র, ওষুধ, কাপড়, খেলনা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন মালের কার্টনে আসছে সোনা। মাঝে মধ্যে প্রশাসন ও মিডিয়ার কঠোর নজরদারিরতে দু’-একটা চালান আটক হলেও অধিকাংশ চালান চলে যাচ্ছে পার্সেলের নামে কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই। ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
জিপিও নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বৈদেশিক শাখা একটি চক্রের সহযোগিতায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা সোনার চোরাচালান করছেন অভিনব পদ্ধতিতে। বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠানো পার্সেলের গায়ে যে ঠিকানা ও ফোন নাম্বার থাকে সেটা দেয়া হয় ভুয়া। এ বিষয়ে আগে থেকেই কন্ট্রাক করা থাকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সংকেত হিসেবে ব্যবহার করা হয় গোপন পিন কোড। প্যাকেটটি পৌঁছার পর এসব কর্মকর্তারা সেখান থেকে সোনা বা কোন প্রকার মাদকদ্রব্য থাকলে কাস্টম অফিসারের পরীক্ষার আগেই প্যাকেট থেকে সরিয়ে নেয় অথবা ভুয়া ঠিকানায় সেগুলো খালাস করে। তবে সেটাও করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে। এরপর ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছানো হয় মধ্যবর্তী আরেকটি দালাল চক্রের মাধ্যমে।
সূত্র আরো জানায়, মালেয়শিয়া, দুবাই, হংকং ও সিঙ্গাপুর থেকে বেশি আসে সোনার চালান। কোরিয়া ও চায়না থেকে আসে মোবাইল এঙেসরিজ। এ মোবাইল এঙেসরিজ এর ক্ষেত্রে শুধু বডিটা বাইরে থেকে আনা হয়। দেশে সেটার কাভার তৈরি করে বাজারজাত করা হয় সেই দেশের ব্র্যান্ডিং করে।
সম্প্রতি পরপর কয়েকটি চালান আটকের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ফরেন পোস্ট অফিসের একটি পার্সেল কার্টন (গাড়ির যন্ত্রাংশ) থেকে ২ কোটি টাকা মূল্যের সোনার বার উদ্ধার করে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর আগে বিদেশ থেকে আসা একটি কম্পিউটার যন্ত্রাংশের কার্টন থেকে কোটি টাকার সোনার বার উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ১২ অক্টোবর ঢাকা ফরেন পোস্ট অফিসে ২ (দুই) কেজি সোনা ধরা পড়ে। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে দেখা যায় এসব সোনা ধরা পড়েছে শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারার কোন্দলের কারণে। তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন রেগে গিয়ে সাংবাদিকদের ফোন করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তারা এসে স্বর্ণগুলো আটক করে।
বিমানবন্দর ফরেন পোস্ট অফিসের এপিএমজি শরীফ লতিফ জানান, পার্সেল মালপত্রের নামে আসা প্রতিটি কার্টন যৌথভাবে তল্লাশি করা হয়। বিমানবন্দর পোস্ট অফিস থেকে কোনো মালপত্র ডেলিভারি দেয়া হয় না। সব মালপত্র ঢাকা জিপিওতে পাঠানো হয়। মাঝেমধ্যে পার্সেল মালপত্রের নামে আসা কার্টনে সোনার বার ধরা পড়ে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়টি স্বীকার করে কাস্টমস, শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মইনুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি জানি। নিয়মিত নজরদারি করছি। এখন থেকে আরও নজরদারি বাড়নো হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে প্রধান পোস্ট অফিসের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল (ডিপিএমজি) আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে সম্ভব হয়নি।