কোনো ধরণের চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়েছি

SHARE

হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছয় ঘণ্টা পরপর প্যারাসিটামল, নিয়মিত গরম পানি, লেবু পানি ও আদা পানি পান এবং পারিবারিক সাহচর্য্যে বাসায় থেকেই সুস্থ হলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার আকবর আমিন বাবুল। প্রচলিত ধারার অন্য কোনো ধরণের চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী। একইভাবে সুস্থ হয়েছেন এই আইনজীবীর অফিস সহকারীও।

নিজের সুস্থতা সম্পর্কে এই আইনজীবী বলেন, আমার বড় ছেলে শৈবাল নাফিস লন্ডনে পড়ছে। তার কাছ থেকে গত ২০ মার্চ দেশে ফিরেই অসুস্থ বোধ করতে থাকলাম। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী লায়লা আমিন, দুই ছেলে দাইয়ান আমিন সোয়াদ (১৫) ও জুলকারনাইন আমিন (১৩) এবং অফিস সহকারীও অসুস্থ হয়ে পড়ল। প্রত্যেকের শরীরে জ্বর জ্বর ভাব ও শরীর ব্যাথার মত উপসর্গ ছিল। এ কারণে সকলেই ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে যাই। ১৪ দিন শেষে ৪ এপ্রিল সপরিবারে এবং অফিস সহকারী আইইডিসিআর-এ গিয়ে করোনার পরীক্ষা করাই। আমার এবং অফিস সহকারীর রিপোর্ট আসে করোনা পজিটিভ। আমার স্ত্রী ও দুই ছেলের রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। এরপর আমি ও অফিস সহকারী বাসায় ফিরে আইসোলেশনে চলে যাই। আইইডিসিআরের চিকিৎসকরা বিশেষ করে ডা. নওরোজের তদারকি ও সহযোগিতায় আমরা সুস্থ হয়ে উঠেছি। তিনি বাসায় এসে দেখে যেতেন। এ ছাড়া ডাক্তার মোস্তাক আহমেদের সহযোগিতা ভুলবার নয়।

তিনি বলেন, আমার করোনা আক্রান্তের খবর শোনার পর আইনজীবীরা যেভাবে আমাকে সাহস দিয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে আমি তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। আবারও প্রমাণিত হয়েছে আইনজীবীরা একটি পরিবার।

আইসোলেশনে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, দেখুন আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্র জীবনেই অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছি। ১৯৭০ সালে সামরিক আদালতের বিচারের মুখোমুখি হয়েছি। জেল খেটেছি। আমি একজন লড়াকু মানুষ। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশি মুষড়ে পড়ি। বাসায় একটি কক্ষে আমি। আমার দরজার সামনে স্ত্রী এসে খাবার রেখে যাচ্ছে। ৫ মিনিট পর দরজা খুলে খাবার নিয়ে খেয়েছি। আমার বিয়ের ২৫ বছরের জীবনে বিশেষ কারণ ছাড়া স্ত্রীকে আলাদা বিছানায় শুতে হয়নি। আর এখন তাকেই কিনা খাবার রেখে যেতে হচ্ছে দরজার পাশে।

তিনি বলেন, আমার দুটি সন্তান আমার কলিজার টুকরা। দরজা খুললেই দৌড়ে এসেছে। কিন্তু আমার কাছে আসতে পারেনি। তাদের বলেছি, দরজার সাতফুট দূরে থাকতে। তারা দুরে দাঁড়িয়েই আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো। তারা আমার সঙ্গ পেতে চাইতো। তখনকার অনভূতি বোঝাতে পারবো না।

তিনি বলেন, এই যুদ্ধে জয়ী আমি। মহান আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। আমার পরিবারকে রক্ষা করেছেন। এই একমাসেরও বেশি সময় একটি কক্ষে আলাদা আলাদা থাকতে কি যন্ত্রণা তা বোঝানো যাবে না। আমার চারপাশে সব আছে। আবার কিছুই নেই। আমি একা। এই সময়ে কোরআন পড়ে, নামাজ পড়ে, মাঝে মাঝে দেশত্ববোধক গান শুনে সময় কাটিয়েছি। বিশেষ করে ‘বিরহ বড় ভাল লাগে’ গানটি বারবার শুনতাম।

সুস্থ হয়ে ওঠা সম্পর্কে তিনি বলেন, বিমেষ কোনো ওষুধ খাইনি। ৬ ঘণ্টা পরপর প্যারাসিটামল খেয়েছি। এ ছাড়াও নিয়মিত গরম পানি, লেবু পানি, আদা পানি খেয়েছি। আমার স্ত্রী ও সন্তানরা নির্ধারিত নিয়ম মেনে সার্বক্ষণিকভাবে পরিচর্যা করেছে। এভাবেই সুস্থ করেছেন রাব্বুল আলামীন।

ব্যারিস্টার আকবর আমিন বাবুলের করোনায় আক্রান্তের খবর সকলের সামনে আনেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টি সকলকে জানান। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘বাবুল ভাইয়ের ধারণা, তিনি লন্ডন থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকায় অবস্থানরত তাদের অফিস সহকারী তার মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন। এ অবস্থায় তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয় ২ এপ্রিল। ৪ এপ্রিল সপরিবারে বাবুল ভাই এবং অফিস সহকারী আইইডিসিআর এ গিয়ে করোনা টেস্ট করান। এরমধ্যে বাবুল ভাই এবং অফিস সহকারীর করোনা ধরা পড়ে। অর্থাৎ করোনা পজিটিভ। তার স্ত্রী এবং দুই ছেলের রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। ফলে বাবুল ভাই এবং অফিস সহকারী দুজনই বাসায় আইসোলেশনে চলে যান। তিনি কোনো হাসপাতালে ভর্তি হননি। কিন্তু আইইডিসিআর এর ডাক্তাররা তাকে এবং তার অফিস সহকারীকে নিয়মিত পরীক্ষা করেছেন বাসায় এসে। উপসর্গ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বাবুল ভাই বলেন যে, তার জ্বর হতো এবং তার গায়ে প্রচন্ড ব্যথা হতো। তিনি চিত হয়ে শুতে পারতেন না। বাম দিকে কাত হয়ে শুলে তার বেশ শ্বাসকষ্ট হতো। তবে ডান দিকে কাত হয়ে শুলে তিনি অনেকটা ভালো বোধ করতেন।’

ব্যারিস্টার আকবর আমিন বাবুলের সর্বশেষ করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আজ মঙ্গলবার ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! করোনা যোদ্ধা, সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী, ব্যারিস্টার আকবর আমিন বাবুল করোনা মুক্ত। গতরাতে (সোমবার) তিনি রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন। কিছুক্ষণ আগে বাবুল ভাই ফোন করে সুসংবাদটি জানালেন।