আইসিসিবিকে হাসপাতালে রূপান্তর ৬০-৭০% সম্পন্ন

SHARE

ধাতব ফ্রেমে তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট আইসোলেশন কক্ষ। এসব কক্ষে থাকবে রোগীর শয্যা ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের এখানে পৃথকভাবে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিকে (আইসিসিবি) করোনা হাসপাতালে রূপান্তরের এই কাজ চলছে জোরেশোরে। ইতিমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এখানে চিকিৎসা শুরুর পরিকল্পনা সংশ্লিষ্টদের।

আইসিসিবির এক্সপো জোনে গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে হাসপাতাল স্থাপন নিয়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চোখে পড়ে। বিশাল আঙিনাজুড়ে তৈরি করা হচ্ছে একের পর এক কক্ষ। আইসিসিবির কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে বিরামহীন কাজ করছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ট্রাক ভরে আসছে নির্মাণ উপকরণ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই হাসপাতালে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। তবে বিদেশ থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম আসতে দেরি হলে দু-এক দিন বিলম্ব হতে পারে। কনভেনশন সিটির ট্রেড সেন্টারকে হাসপাতালে রূপান্তর করতে প্রয়োজনীয় কাজের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’ স্লোগানের আলোয় পথচলা বসুন্ধরা গ্রুপ করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালে দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে এসেছে। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিসাপেক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল আইসিসিবি পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এখানে আইসিইউসহ দুই হাজার ৭১ শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে প্রয়োজন দেখা দিলে তা পাঁচ হাজার শয্যায় উন্নীত করা যাবে। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে করোনা রোগীদের জন্য দেশের বৃহত্তম এই হাসপাতালের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

কভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন আইসিসিবিকে এই রোগে আক্রান্তদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল নির্মাণের অগ্রগতি প্রসঙ্গে গতকাল স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকার সব মার্কেট বন্ধ থাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় দোকানপাট খুলে মালপত্র কেনা হচ্ছে। পরে পুলিশের পাহারায় সেসব এখানে আনা হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে আমরা একটি প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করছি। তা না হলে কাজের অগ্রগতি আরো বেশি হতো।’ তিনি আরো বলেন, ‘আইসিসিবির এক্সপো ট্রেড সেন্টার ও আরো তিনটি কনভেনশন হলে মোট দুই হাজার আইসোলেশন বেড স্থাপন করা হবে।

এ ছাড়া বড় কনভেনশন হলটিতে ৭১টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বেড স্থাপন করা হবে। আশা করছি ১৫ দিনের মধ্যে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু করতে পারব। আইসিইউর কিছু বেড ও সরঞ্জাম আমদানি করতে হচ্ছে। সে কারণে এটি স্থাপনে কিছুটা দেরি হতে পারে। ট্রেড সেন্টারটিতে এত বড় হাসপাতাল স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট ছিল না। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত টয়লেট নির্মাণকাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে।’

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ঢাকা সিটি বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলম, আইসিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিনসহ অন্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আজ (গতকাল) পঞ্চম দিনের মতো হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে। আশা করছি, ১৫ দিনের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করতে পারব এবং চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে দু-এক দিন বেশি লাগতে পারে। আইসিসিবির প্রকৌশল বিভাগও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। কনভেনশন হলগুলো প্রস্তুত করাই আছে। শুধু বেড স্থাপন করতে হবে।