জুতা রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই স্বস্তি

SHARE

পণ্য রপ্তানি নিয়ে স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। দুই মাস ধরে রপ্তানি কমছে। এই অস্থির সময়েও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জুতা রপ্তানিতে ভালো করছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বাজারটিতে এ দেশের উদ্যোক্তারা ১৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার বা দেড় হাজার কোটি টাকার জুতা রপ্তানি করেছেন। ২০১৮ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার। সেই হিসাবে গত বছর জুতা রপ্তানি বেড়েছে ২৭ শতাংশ।

অবশ্য কয়েক বছর ধরেই বাজারটিতে বাংলাদেশের জুতা রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। যেমন ২০১৪ সালে ৬ কোটি ১৪ লাখ ডলারের জুতা রপ্তানি হয়েছিল। সেই রপ্তানি বেড়ে গত বছর ১৩ কোটি ৯২ লাখ ডলারে উঠেছে। তার মানে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে জুতা রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো করলেও সামগ্রিকভাবে চামড়ার জুতা রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৩৩ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬০ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছিল। অন্যদিকে কৃত্রিম চামড়া, কাপড় ও অন্যান্য উপাদানে তৈরি জুতা রপ্তানিতে স্বস্তিতে আছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১৮ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক বেশি।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকেরা বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৫৪৭ কোটি ডলারের জুতা কিনেছেন। ২০১৮ সালে তাঁরা আমদানি করেছিলেন ২ হাজার ৬১৯ কোটি ডলারের জুতা। সেই হিসাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে জুতা আমদানি কমেছে ২ দশমিক ৮৩ জুতা।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৬২ লাখ জোড়া জুতা রপ্তানি করেছে। ২০১৮ সালে পরিমাণটি ছিল ৫১ লাখ জোড়া। তার মানে, গত বছর ১১ লাখ জোড়া জুতা বেশি রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা।

অ্যাপেক্স, বে, লেদারেক্স ফুটওয়্যারসহ এক শর বেশি প্রতিষ্ঠান জুতা রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত আছে। বাংলাদেশের জুতা রপ্তানির ৬০-৬৫ শতাংশের বেশি যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে। তারপরই ১৭-১৮ শতাংশ জুতা রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। জাপানে রপ্তানি হয় ৬-৭ শতাংশ জুতা।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জুতার বড় ব্যবসা করে টিম্বারল্যান্ড। বর্তমানে ব্র্যান্ডটি তাদের ৩০ শতাংশ জুতা বাংলাদেশি কয়েকটি কারখানা থেকে নিচ্ছে। সে জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বাজারটিতে রপ্তানি ভালো হচ্ছে। এসব তথ্য দিয়ে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আবদুল মোমেন ভূঁইয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কয়েকটি ব্র্যান্ড খোঁজখবর নিচ্ছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে জুতা রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জুতা রপ্তানিতে বরাবরের মতোই শীর্ষে রয়েছে চীন। তবে তাদের রপ্তানি কমেছে। ২০১৮ সালে চীন ১ হাজার ৩৮৮ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছিল। গত বছর সেটি ১১ শতাংশ কমে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ডলারে নেমেছে। চীনের পরেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে ভিয়েতনাম। গত বছর ভিয়েতনাম ৬৭৭ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছে, যা ২০১৮ সালের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছিল ৬১৫ কোটি ডলারের জুতা।

ট্রাম্পের দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুতা রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া। গত বছর ১৬৩ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছেন দেশটির উদ্যোক্তারা। ২০১৮ সালের তুলনায় তাঁদের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। বাজারটিতে ইতালি চতুর্থ সর্বোচ্চ ১৫৪ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছে। ২০১৮ সালে তাদের রপ্তানি ছিল ৪৩ কোটি ডলারের। সেই হিসাবে গত বছর তাদের রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো করলেও সামগ্রিকভাবে জুতা রপ্তানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বাংলাদেশের এই খাতের উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) অনুমোদনবিহীন কোনো ট্যানারি থেকে চামড়া কেনে না ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্র্যান্ডগুলো। তবে সেটি অর্জন করতে পারেনি সাভারের চামড়াশিল্প। কারণ, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) কাজই পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। তাই অধিকাংশ জুতা রপ্তানিকারককে আমদানি করা চামড়ার ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিসিক বলেছিল, এলডব্লিউজির অনুমোদনের জন্য ৩১ জানুয়ারিতে আবেদন করবে, কিন্তু তারা সেটি করতে পারেনি। এলডব্লিউজির অনুমোদন না থাকায় কয়েক বছর ধরে আমাদের চামড়ার বড় বাজার হচ্ছে চীন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে চীনা ক্রেতারাও পণ্য নিচ্ছেন না। সব মিলিয়ে কঠিন সময় পার করছি আমরা।’