করোনার স্থায়ী প্রতিষেধক আবিষ্কারের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের

SHARE

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিরাময়ে এখনও কার্যকর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি আমেরিকান বিজ্ঞানীদের একটি দল গবেষণাগারে নতুন একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। যেটা করোনাভাইরাসের স্থায়ী সমাধান হতে পারে।

তাইওয়ান নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের পথে এটি একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এ গবেষণা থেকে পাওয়া ফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণাগারে পাঠানো হবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এটা এক ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণার সময় তারা হঠাৎ লক্ষ করে দেখেন যে ল্যাবের পরীক্ষণ থালাটিতে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ওপরে এই টিকা কাজ করছে। টিকার সংস্পর্শে ভাইরাসটি অস্থির আচরণ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটস-এ সপ্তাহব্যাপী ঘন্টার পর ঘন্টা এটা নিয়ে গবেষণা করার পরে, ইঁদুরের ওপর মূল পরীক্ষাটি চালানো হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে এই ভ্যাকসিন ইঁদুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

ভ্যাকসিনটির উন্নয়নের নেতৃত্ব দেওয়া এনআইএইচ এর গবেষণা সহযোগী কিজমেকিয়া কর্বেট বলেছেন, যখন তার দল ইতিবাচক ফলাফলের কথা পাঠিয়েছিল, তখন এটি সবার জন্য একেবারে আশ্চর্যজনক ছিল। সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল।

কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য বিশ্বজুড়ে ১২টিরও বেশি বিজ্ঞানী দল কাজ করে চলেছে। এই জন্য তারা গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধরণের ভ্যাকসিনগুলি তৈরির প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে। দ্রুততম সময়ে তারা কিছু একটা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। তারা যে সব ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে নতুন আবিষ্কার হওয়া এই ভ্যাকসিন তারচেয়ে অধিক কার্যকরি হতে পারে বলে আশাবাদি বিজ্ঞানীরা। কিছু কিছু বিজ্ঞানীরা শর্ট কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন যেটা এক বা দুই মাসের জন্য হলেও মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে পারে। তবে নতুন এই ভ্যাকসিনটি করোনার স্থায়ী সমাধান হতে পারে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।

তবে পেন প্রেসবিটারিয়ান মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ডঃ জুডিথ ও’ডনেল সাবধান করে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ না আমরা এগুলি মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করতে পারছি, ততক্ষণ আমাদের এই ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা কী হবে সে সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়।’

প্রথমে অল্প সংখ্যক যুবক, সুস্বাস্থের অধিকারী স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে শীঘ্রই পরীক্ষা করা শুরু হবে। তবে এই পরীক্ষায় যারা অংশগ্রহণ করবেন তাদের শরীরে ভাইরাসটির প্রবেশের কোন সম্ভাবনা নেই, কারণ এই ভ্যাকসিনের মধ্যে ভাইরাসটি নেই। নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করা উচিত যে, মানবদেহে ভ্যাকসিনগুলি কোনও উদ্বেগজনক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখায় কি-না। মানবদেহে ব্যবহারের জন্য এই ভ্যাকসিনগুলি সুরক্ষিত কি-না সেটা বৃহত্তর পরীক্ষায় নির্ধারিত হবে।

প্রথমে এটা সিয়াটেলে ওয়াশিংটন স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরপরে, ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস আগামী মাসে পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ডজন স্বেচ্ছাসেবক এবং মিসৌরির কানসাস সিটিতে একটি পরীক্ষামূলক কেন্দ্রে ভ্যাকসিন প্রার্থীদের ওপর প্রয়োগ করা হবে। তারপরে চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় একই রকম গবেষণা চালানো হবে।

প্রাথমিক সুরক্ষা পরীক্ষা ভাল ফলাফল পাওয়া গেলে, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এটা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যে কোন নতুন ভ্যাকসিন ব্যাপকভাবে ব্যবহারের এই সময় লাগে বলে বলছিলেন এনআইএইচ’র জাতীয় অ্যালার্জি এবং সংক্রামক রোগের বিভাগের পরিচালক ডাঃ অ্যান্টনি ফাওসি।

এটি এখনও পরিক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। প্রস্তুতকারকরা জানেন এটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ভ্যাকসিনটি সত্যিই মানবদেহের জন্য সুরক্ষিত কি-না এবং কোন ক্ষতি করে না এটা নিশ্চিত হতে হাজার হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন হয়।

ইনোভিওর গবেষণা ও উন্নয়ন প্রধান কেট ব্রোডারিক বলেছেন, ‘আমি সত্যিই প্রত্যেকের হতাশা এবং বিভ্রান্তি বুঝতে পারি। কিন্তু আপনি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবকিছু তাড়াহুড়ো করে করতে পারেন না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এটা সঠিক হয়েছে বলা যাবে না।’

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো ধরা পড়া করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত অন্তত ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ২ হাজার ২৩৭ জন, মারা গেছেন ৩ হাজার ৪৯৭ জন।