৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মুজিববর্ষ উদ্বোধন ১৭ মার্চ

SHARE

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আগামী ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনি ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে উৎসবমুখর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও বছরব্যাপী দেশে-বিদেশে নানা কর্মসূচি থাকবে।

সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যক্তি হতে অসংখ্য প্রস্তাব পাওয়া গেলেও বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় ২৯৮টি কর্মসূচি রাখা হয়েছে।

আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মুজিববর্ষের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি আরো জানান, এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিশেষ প্রার্থনা এবং জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি’ ও ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ নামে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির অধীনে আটটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ যাচাই-বাছাইয়ের পর সারা বছর দেশে ও বিদেশে মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনায় জন্মশতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ, বঙ্গবন্ধুর নিজের রচনা, ভাষণ, অন্যান্য বিষয় ভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা, দেশে ও বিদেশে সেমিনার, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বইমেলা ও অন্যান্য আয়োজন বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করার কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ইউনেস্কো, জাতিসংঘ ও বিদেশে স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবন নিয়ে প্রচারণা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ ও সংস্থা কর্তৃক উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রম গ্রহণসহ অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বর্তমানে ২৯৮টি কর্মসূচি রয়েছে।

কর্মসূচিগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও খণ্ডচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হবে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জন্মশতবার্ষিকীর বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ‘জুলি ও কুরি’ পদক প্রাপ্তি দিবস উদযাপন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন পালন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন এবং বাংলা ও ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহের উদ্যোগে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করে মুজিববর্ষ উদযাপন, বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা, ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধু’র ছবি, স্কেচ ও আলোকচিত্র নিয়ে বই ‘শেখ মুজিব; লাইফ অ্যান্ড টাইমস’ প্রকাশ করা হবে। এছাড়া বিদেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত ভাষণ ইংরেজি ছাড়াও হিন্দি, উর্দু, ফরাসি, জার্মান, চাইনিজ, আরবি, ফারসি, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, কোরিয়ান ও জাপানি-এই ১২টি ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলা একাডেমী কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম ভিত্তিক ১০০টি গ্রন্থ প্রকাশ করবে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তর, জেনেভায় জাতিসংঘ দপ্তর এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থা ও ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে বঙ্গবন্ধু’র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদেশে পাঁচটি বঙ্গবন্ধুর চেয়ার স্থাপন, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজ বঙ্গবন্ধুর সেন্টার স্থাপন, লন্ডনের মাদাম তুসো জাদুঘর এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শ ভিত্তিক চিত্রকর্ম আলোকচিত্র প্রদর্শন, ওমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং মুসলিম উম্মাহর ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও সকল ধর্মের অধিকার সুরক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করা হবে।

সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শস্য কর্মসূচিসহ বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, পুলিশ, র‌্যাবের নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী অমর একুশে বইমেলা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হবে।

ঢাকা লিট ফেস্ট কর্তৃক ঢাকা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হবে। ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২০’ আয়োজন করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্মরণে সারাদেশে এক কোটি বৃক্ষরোপণ করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবজারভেটোরি স্থাপন করা হবে। বিমান বাংলাদেশের উড়োজাহাজ ও বিমানবন্দর সজ্জিত করবে। শিল্প মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার প্রদান করবে।

সংসদ নেতা জানান, মিডিয়া, প্রচার ও ডকুমেন্টেশন উপ-কমিটি ১১টি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা, স্কাই নিউজ চ্যানেল-২৪ ও এনডিটিভিতে কন্টাক্ট রিলিজ, আন্তর্জাতিকভাবে বহুল প্রচারিত প্রভাবশালী পত্রিকায়, সাময়িকী ও ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশ করা হবে। দেশের সকল জেলা ও থানায় ডিজিটাল স্ক্রিন স্থাপন করে প্রতিদিন ডিজিটাল স্ক্রিনে নতুন নতুন কনটেন্ট সরবরাহ এবং বিদেশে বড় বড় শহরে ডিজিটাল স্ক্রিন স্থাপন করা হবে। আর চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র কমিটি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের জন্য ২৪টি খন্ড ভিডিওচিত্র নির্মাণ, একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণ এবং মানব মুক্তির থিম নিয়ে ডিসেম্বর ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করবে। ইংরেজি ও বাংলায় দুটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর পূর্ণদৈর্ঘ্য বায়োপিক চলচ্চিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।

সরকারদলীয় সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ’র প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ১৭ মার্চ হতে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতিসংঘের শিল্প বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে। শিক্ষা সংস্কৃতি বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখার অনন্যসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কো ২০২০ সালে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দের সংবাদ।

তিনি আরো বলেন, ইউনেস্কো কর্তৃক কোন বিশেষ ঘটনা অথবা কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মবার্ষিকী পালনের অন্যতম শর্ত হলো ইউনিট বিষয়সমূহ শিক্ষা-সংস্কৃতি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বাক-স্বাধীনতা হরণের উক্ত ঘটনার উক্ত ব্যক্তির বিশেষ অবদান থাকা। কোন দেশ এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উপায় আবেদন করলে ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডে ও পরবর্তীতে ইউনেস্কোর সাধারণ সভায় গৃহীত হলে তা ইউনেস্কো কর্তৃক উদযাপিত হয়।

একই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ইউনেস্কোর ম্যান্ডেটভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর অনন্যসাধারণ অবদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে স্কুল জীবন হতে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সচেতনতা ও পরবর্তীতে শিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন কার্যক্রম বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি ভাষার অধিকার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বিশেষভাবে বিবেচনা করেছে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয় বরং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইউনেস্কো উদ্যোগী হয়। বাংলার জনগণের শিক্ষা নিশ্চিত করণ বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বান্ধব দেশ নির্মাণে বঙ্গবন্ধু’র সংগ্রাম উদ্যোগের স্বীকৃতি হলে এই সিদ্ধান্ত।