পদ্মা সেতুতে আজ বসছে বছরের শেষ স্প্যানটি

SHARE

আজ ৩১ ডিসেম্বর। চলতি বছরের শেষ দিন। পদ্মা সেতুতে বসছে এ বছরের শেষ স্প্যান। সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১৮ ও ১৯ নম্বর খুঁটিতে ‘৩এফ’ নম্বরের ২০তম স্প্যানটি মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ার কাছে কুমারভোগের বিশেষায়িত কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে সকালে এটি নিয়ে রওনা দিয়েছে ভাসমান ক্রেন। এখন কেবল বসানোর অপেক্ষা।

আবহাওয়াসহ সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ এটি বসানোর মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালে বসতে যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪টি স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হবে তিন কিলোমিটার বা সেতুর অর্ধেক অবকাঠামো।

এসব তথ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সর্বমোট বাজেট ৩০১৯৩.৩৯ কোটি টাকা। গত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ব্যয় হয়েছে ২১৩১৭.১১ কোটি টাকা বা ৭০.৬০ ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৫.৫০ ভাগ। মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮৫.৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮১.৬০ভাগ।

মূল সেতুর কাজের মূল্য ১২১৩৩.৩৯ কোটি টাকা। আর এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯৭৫১.১৯ কেটি টাকা। নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি ৬৬ ভাগ আর অর্থিক অগ্রগতি ৫২.৪৭ ভাগ। নদী শাসনের কাজের চুক্তিমূল্য ৮৭০৭.৮১ কোটি টাকা। ব্যায় হয়েছে ৪৫৬৯.০৪ কোটি টাকা। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এড়িয়ার কাজ শত ভাগ শেষ হয়েছে। এ খাতে ব্যয় হয়েছে ১৪৯৯.৫১ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশের জন্য মোট ব্যয় হচ্ছে ৪৩৪২.২৬ কোটি টাকা।

অন্যান্য খাত যেমন প্যানেল অব এক্রপার্ট, পরামর্শক, সেনা রিাপত্তা, ভ্যাট ও আয়কর, যানবাহন , তেন ও ভাতাদিসহ অন্যান্য ব্যায় ৩৫১০.৪২ কোটি টাকা।

এ পর্যন্ত ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৩টি স্প্যান চীন থেকে মাওয়ায় পৌঁছেছে। এরইমধ্যে ১৯টি স্প্যান খুঁটির ওপর স্থাপন করা হয়ে গেছে। এছাড়া পাঁচটি স্প্যান মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ও ৯টি স্প্যান পদ্মার চর এলাকায় অস্থায়ী স্টক ইয়ার্ডে রাখা আছে। যা খুঁটির ওপর স্থাপনের অপেক্ষায়। আরো দুইটি স্প্যান চীন থেকে মাদার ভ্যাসেলে করে সমুদ্র পথে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আরো ছয়টি স্প্যান চীনে তৈরি হচ্ছে।

এছাড়া সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ৩৬টি সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ নম্বর খুঁটির কাজ গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। এছাড়া সেতুর ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাজও এগুচ্ছে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ৪২টি খুঁটিতে ৪১টি স্প্যান বসবে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের আরো জানান, পদ্মা সেতুর সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল মাওয়া প্রান্তে কয়েকটি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ নিয়ে। সেসব জটিলতা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন সেতুতে স্প্যান বসানোর মাধ্যমে দ্রুত গতিতে সেতুর কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে ২০২১ সালের জুন মাসেই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সেভাবেই সিডিউল নিয়ে সেতুর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক স্প্যান পিলালের ওপর সফলভাবে বসানো হয়েছে। আজ ২০তম স্প্যানটি বসানো হলে এ বছরই ১৪টি স্প্যান বসানো হয়ে যাবে। আর আগামী মাসে অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে অন্তত চারটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালে একটি, ২০১৮ সালে পাঁচটি এবং ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত ১৩টি স্প্যান বসেছে। এ সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই ১৪টি স্প্যান বসানো হচ্ছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রধান মন্ত্র শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর কাজের উদ্বোধনের পর পদ্মাসেতুতে প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।

স্প্যান ‘৭-বি’ সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৭-সি’ সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১১ মার্চ। স্প্যান ‘৭-ই’ সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১৩ মে। স্প্যান ‘৭-এফ’ সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘১-এফ’ সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারে অস্থায়ীভাবে বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর।

স্প্যান ‘৬-এফ’ সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ই’ সেতুর ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ডি’ সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ। স্প্যান ‘৩-এ’ সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল। স্প্যান ‘৬-সি’ সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল।

স্প্যান’৩-বি’ সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ মে। স্প্যান ‘৩-সি’ সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘৪-এফ’ সেতুর ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৪-ই’ সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর এবং স্প্যান ‘৩-ডি’ সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের ওপর বসে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। ২৬ নভেম্বর সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারে বসে স্প্যান ‘৪-ডি’। ১১ ডিসেম্বর ‘৩-ই’ স্প্যান বসে সেতুর ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের ওপর। ২১ ও ২২ নম্বর পিলারের ওপর এ মাসের ১৮ তারিখে সর্বশেষ ১৯তম স্প্যনটি বসানো হয়।

শিডিউল মতো স্প্যান বসাতে পারলে আগামী বছর জুলাইয়ের মধ্যে সেতুর ৪১টি স্প্যান বসানো সম্ভব হবে। আর ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে আনুসাঙ্গিক কাজ শেষ করে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন ও রেল চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।