গাজীপুরের তুরাগ তীরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমা আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। ইজতেমাকে সফল করতে প্রস্তুতিমূলক কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
ইজতেমা ময়দানের বিশাল সামিয়ানা টাঙ্গানো, রাস্তাঘাট মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ চলছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে থাকছে কঠোর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। এরই মধ্যে মাঠের কাজ অনেকটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি।
গতবারের মতো এবারও জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে আলাদাভাবে দু’পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১০ জানুয়ারি ইজতেমা শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্ব। পরে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এই পর্ব।
ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় র্যাব, বিজিবিসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কাজ করবে। সিসিটিভি ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে ইজতেমা ময়দান।
টঙ্গীর তুরাগ তীরের প্রায় ১৬০ একর জমি বিস্তৃত ইজতেমা ময়দানে প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিদের অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে চলছে ময়দানের প্রস্তুতির কাজ। ময়দানে বিশাল চটের সামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বৈদ্যুতিক তার টানানো হয়েছে, দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। মাঠ সমতল করা, রাস্তাঘাট মেরামত, সংস্কার এবং নতুন নতুন রাস্তা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। ইজতেমার জিম্মাদারদের অধীনে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মুসল্লিরা এসব কাজ করছেন।
ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাশ্রমেই ময়দানের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মুসল্লিরা বলছেন, কোনো অর্থের লোভে নয়, বিশ্বের লাখ লাখ মেহমান আসবে তাদের থাকা খাওয়া ও বসার জন্য এবং একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা। মুসল্লীরা জানান, আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তারা ইজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছায় কাজ করতে এসেছেন।
ইজতেমার এক মুরব্বি বলেন, এবারের ইজতেমা সুষ্ঠু ও সফল করার জন্য আলেম-ওলামাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মেহনত করছেন। এজন্য মাঠে গতবারের চেয়ে বেশি মানুষের সমাগম হবে। ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতিতে প্রশাসন ও সরকার তাদের পাশে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যান্য বছরের চেয়ে আরও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা সম্পন্নের জন্য ইতিমধ্যে ময়দানের আশপাশে সিসিটিভি বসানোসহ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। ময়দানে ৪৫০টি সিসিটিভি স্থাপন করার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ চলছে। ময়দানের ভেতর ও বাইরে সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। এছাড়া র্যাবের মোবাইল টহল, গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
গত শনিবার ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জয়নুল বারী। আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। জয়নুল বারী বলেন, মাঠে সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
ইজতেমায় সকল সেবা নিশ্চিতের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রস্তুতির কথা জানিয়ে মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইতিমধ্যে মাটি ভরাট করে ইজতেমা ময়দানকে সমতল করা হয়েছে। ধূলোবালি নিয়ন্ত্রণ ও মশা নিধনে কাজ শুরু হবে। মহাসড়কে ধূলোবালি যাতে না ওঠে সেজন্য প্রয়োজনে বিআরটি প্রকল্পের কাজ যেন বন্ধ রাখা হয় সেজন্য ঠিকাদারকে বলা হবে। পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত ও ভেজালবিরোধী অভিযানসহ যেকোনো অপরাধের তাৎক্ষণিক সাজা দেয়ার জন্য ইজতেমা এলাকায় মোবাইল কোর্ট থাকবে।
নিরাপদ পরিবেশে ইজতেমা আয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এবারের আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অন্যবারের চেয়ে বেশি সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছাড়াও নানা নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখা হচ্ছে।
নিরাপত্তার জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, বিজিবি আমাদের পাশে থাকবে। ইতিমধ্যে ময়দানে তারা কাজ শুরু করেছেন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করছেন। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশন, পুলিশের পৃথক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে।