স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন ঘিরে দৌড়ঝাঁপ শুরু

SHARE

সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো কাণ্ড আর সরকারের শুদ্ধি অভিযানে আতঙ্ক বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে তাদের সম্মেলন। জোর প্রস্তুতি চলছে নিজের অবস্থান ঠিক করার। সাত বছর পর হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন; তাই নেতৃত্বের পালাবদল ঘিরে পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গেছে।

ক্যাসিনোকাণ্ডে খড়গ নেমে আসার পর যুবলীগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আরও তিনটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ একসঙ্গে ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। এছাড়াও গত ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন।

প্রায় ১০ বছর পর সম্মেলন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। নানা কারণে যারা দুর্নাম কুড়িয়েছে, এমন নেতারা এবার বাদ পড়বেন বলেও তাদের আশা।

১৯৯৭ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি হয়। পরে ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন বাহাউদ্দিন নাছিম, সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেব নাথ।

সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছিল। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটিই এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসায় কাওসারকে অব্যহতি দেয় এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সংগঠনের সব কাজ কাজ বিরত থাকতে বলা হয় ।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি দেখভাল করছেন সাবেক সভাপতি বাহাউদ্দিন নাছিম। ফলে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তার প্রভাব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকার দুই শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে লড়াইয়ে অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা রয়েছেন বলে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

বর্তমান চার সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ শাকিব বাদশা, আব্দুল আলীম বেপারী রয়েছেন কেন্দ্রীয় শীর্ষ পদের লড়াইয়ে এছাড়াও রয়েছে অনেকেই।

এছাড়া কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সাচ্চু, সহ সভাপতি মতিউর রহমান মতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, পানি সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ইন্জিনিয়ার মাহাবুবুর রহমান হেলাল তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনও কেন্দ্রীয় পদের লড়াইয়ে আছেন।

খায়রুল হাসান জুয়েল বলেন, ‌‌‌এক-এগারোতে নেত্রীর কারা মুক্তির আন্দোলনে এক বছর জেলে থেকেছি। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বার বার হামলার শিকার হয়েছি, মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি। সততা স্বচ্ছতা কমিটমেন্ট এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দলের জন্য সব সময় নিয়োজিত রেখেছি। আমি মনে করি, নেতৃত্বে যেই আসুক, তার যেন অবশ্যই সততা, স্বচ্ছতা, কনট্রিবিউশন এবং কমিটমেন্ট থাকে।

এদিকে, ইন্জিনিয়ার মাহাবুবুর রহমান হেলাল যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছা সেবকলীগের পানি সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি তার বাবা ছিলেন প্রয়াত আলহ্বাজ আব্দুল মালেক ,জামালপুর ৪ ,১৪১ সরিষাবাড়ি আসনে বঙ্গবন্ধু পার্লামেন্টের দুই দুই বারের জনগনের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সাংসদ, মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩১ মে। উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হন মোবাশ্বের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হন ফরিদুর রহমান খান। ইরান এখন ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তখন দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক হন আরিফুর রহমান টিটু।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন ইতিমধ্যে হয়ে গেলেও নতুন নেতৃত্বের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১৬ তারিখ পর্যন্ত বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মহানগর দক্ষিণে নেতৃত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, মো. মোস্তাফিজুর ইরান, ইসহাক মিয়া ।

এবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতৃত্বের জন্য লড়াইয়ে রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ, কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক।

উত্তরে নেতৃত্ব পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান ইরান, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক, সহ সভাপতি মো. গোলাম রাব্বানী।

দক্ষিণে পদপ্রত্যাশী কামরুল হাসান রিপন বলেন, দলের দুঃসময়ে যারা জীবন বাজি রেখে দলের জন্য কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন করেছেন, তারাই যেন নেতৃত্বে আসে।