‘লক্ষাধিক মানুষের ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, নোয়াখালীই সেরা’

SHARE

‘ট্রেন থেকে নামতে দেরি হয়নি, চারদিক থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা আমাকে ঘিরে ফেলেছে। ভাই কই থাকবেন? আপনার থাকার- খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে? আমাদের সাথে চলেন। আপনাদের জন্য ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি আমরা। এককথায়, মুগ্ধ হয়েছি আমি। নোয়াখালী এককথায় সেরা।’ কথাগুলো সুদূর ময়মনসিংহ থেকে আসা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু জহিরুল ইসলামের।

রাত পোহালেই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা শুরু। গতবারের ন্যায় এবারো সারাদেশ থেকে আগত ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে অতিথিপরায়ণ নোয়াখালীবাসী।

ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবক মিলিয়ে ইতিমধ্যে সারাদেশ থেকে নোয়াখালীতে এসেছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিনা খরচে আবাসন, খাওয়া, কেন্দ্রে যাতায়াত, প্রাথমিক চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব শহিদ উল্যাহ খান সোহেল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সামছুদ্দিন জেহান, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রাজনৈতিক সংগঠন, জেলা ক্রিড়া সংস্থাসহ সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

নোয়াখালী সদর-সুবর্ণচরের সংসদ সদস্য ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি ভর্তিচ্ছুদের যাতায়াত সহজ করার জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস এবং বিশুদ্ধ পানির বোতলের ব্যবস্থা করেছেন। নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। নোয়াখালী পৌরসভা থেকে ৪০০ জন সবুজ টি-শার্ট পরিহিত স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতায়। রাখা ৬টি বুথ, প্রতিটি বুথে থাকবে ৩০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক। শহরের স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। ১০০টি মোটরসাইকেল থাকবে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সবার জন্য সকালের নাস্তা এবং রাতের খাবারের পাশাপাশি পৌরসভার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা নেওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ সব ধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কাজ তদারিক জন্য এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সড়কে যানজট নিরসন এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবকরা।

পৌর ভবন, পৌর সুপার মার্কেট, পৌর মেয়রের বাসা, বিআরডিবি ভবন, রেড ক্রিসেন্ট গেস্ট হাউজসহ পৌর এলাকার সবগুলো মসজিদে শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রী, ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যে আলাদা আলাদাভাবে থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। সবার জন্য সকালের নাস্তা এবং রাতের খাবারের পাশাপাশি পৌরসভার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা নেওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ সব ধরণের ব্যবস্থা থাকছে এসব কাজ তদারিক জন্য এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সড়কে যানজট নিরসন এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবে।

ভর্তিচ্ছুদের জন্য সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ.কে. এম সামছুদ্দিন জেহান সদর উপজেলা পরিষদে ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নোয়াখালী ইউনিট ভবন, এফপিএবি ভবন, জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন, মহামেডান স্পোটিং ক্লাব এবং শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে নোয়াখালী সরকারি কলেজের পুরাতন হোস্টেল এবং মাইজদী গার্লস একাডেমি ভবনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রেডক্রিসেন্ট ভবন এবং এফপিএবি ভবনে ছাত্রীদের থাকা-খাওয়া এবং বাকিগুলোতে ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিশেষ বুথ খোলা হয়েছে। অনলাইনেও তথ্য সহায়তা পাবে ভর্তিচ্ছুরা।

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নোয়াখালী ইউনিট ভবন, এফপিএবি ভবন, জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে নোয়াখালী সরকারি কলেজের পুরাতন হোস্টেল এবং মাইজদী গার্লস একাডেমি ভবনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রেডক্রিসেন্ট ভবন এবং এফপিএবি ভবনে ছাত্রীদের থাকা-খাওয়া এবং বাকিগুলোতে ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কাজ তদারকির জন্য যুব রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক দলকে প্রস্তুত। স্বেচ্ছাসেবকরা আবাসন, খাওয়া, চিকিৎসার পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলার কাজে সহায়তা করে যাচ্ছেন।

আজ থেকে ৩ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সব ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এসব কাজে চার শতাধিক নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে থাকবে। সড়ক, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, পরীক্ষা কেন্দ্র সব সর্বত্র শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও মাঠে থাকবে।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোনো প্রকার গুজব বা বিভ্রান্তি যাতে না ছড়াতে পারে সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

ভর্তিচ্ছুদের জন্য নোয়াখালীবাসীর নানা আয়োজনের প্রশংসা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার- উল-আলম বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য নোয়াখালীবাসীর এমন আয়োজন গোটা বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ৪৯টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কেউ এমনটা চিন্তাই করতে পারে না। আপনারা কীভাবে যে কী করছেন, এটা চিন্তাই করা যায় না। এটা সত্যিই বিষ্ময়কর, অভিভূত হওয়ার মতো ঘটনা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমি নিজে গৌরব এবং অহংকার অনুভব করি।