দুর্গাপূজায় কোনো ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা নেই: ডিএমপি কমিশনার

SHARE

গোধুলি লগ্নে মন্দিরে মন্দিরে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। শুক্রবার ষষ্টী পূজা। ষষ্টী পূজার মধ্য দিয়ে মা দুর্গার মর্ত্যে আগমন ঘটবে। এবার দেবীর আগমন-গমন (বিদায়) দুটোই ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে। মা দুর্গাকে বরণ করতে মন্দিরে মন্দিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্ততি।

এদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মন্দিরের পাশাপাশি সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, পূজার সময়ে কোনো ধরনের হামলা বা সহিংসতার আশঙ্কা নেই। ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপের কোনো তথ্যও পুলিশের কাছে নেই। তারপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুলিশের কন্ট্রোল রুমসহ সব জায়গায় আলাদা ফোর্স থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সারাদেশে মণ্ডপগুলোতে ৫ অক্টোবর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে তিন লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। নারী স্বেচ্ছাসেবক দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-পুলিশও উপস্থিত থাকবে। এছাড়া মণ্ডপে সিসিটিভি, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিক্টেটর থাকবে। পূজামণ্ডপে সমস্যা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকবে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

পূজার দিনগুলোতে জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। বৃহস্পতিবার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূজার সময় রাজধানীর কোথাও জলাবদ্ধতা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ইমারজেন্সি রেন্সপন্স টিম সাথে সাথে মাঠে নামবে। ভারী জলাবদ্ধতা হলেই তাদের মোতায়েন করা হবে।

রাজধানীর মন্দিরগুলোতে পূজার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য মহানগর এলাকার মন্দিরগুলোর প্রতি কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা পথ, প্রতিটি মণ্ডপে কমপক্ষে ১০ জন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকের ২৪ ঘণ্টা তদারকি ও পাহারার ব্যবস্থা, আতশবাজি ও পটকা না ফোটানো, ৮ অক্টোবর রাত দশটার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন, পূজার মন্দির ও সমগ্র এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য সংগীত বাজানো থেকে বিরত থাকা এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ষষ্ঠী পূজার দিন বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করবেন জানিয়ে পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মন্ডল বলেন, পূজাকে সামনে রেখে এবার কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। ১১টি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের ১৩টি ঘটনা ঘটেছে। আগামীতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাঙালিদের কাছে শারদোৎসব নামে পরিচিত দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে। শুক্রবার ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। মন্দিরগুলোতে আগামী শনিবার মহাসপ্তমীতে সকাল থেকে পূজা চলবে, এছাড়া দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনও করা হবে। এদিন দূস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। মহাষ্টমীতে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা, দুপুরে সন্ধিপূজা এবং বিকেলে মহাপ্রসাদ বিতরণ হবে। নবমীতে সকাল থেকে পূজা চলবে এবং সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা হবে। বিজয়া দশমীর দিন সকাল থেকেই পূজা হবে এবং বিকেলে বিজয় শোভাযাত্রা শেষে বিসর্জন হবে। মা দূর্গা স্বর্গালোকে ফিরে যাবেন।

বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, সারাদেশে ৩১ হাজার একশোটি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রাজধানীতে ২৩৭টি মণ্ডপ রয়েছে। যা আগের বছরগুলোর চেয়ে ১০টি বেশি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ঢাকেশ্বরী মন্দিরে থাকছে বর্ণাঢ্য আয়োজন। এছাড়া রাজধানী রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দির, বনানী মাঠ, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, কলাবাগাম মাঠ এবং সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপসহ দেশের বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, দেবীর আবাহনী সঙ্গীত, ধর্মীয় আলোচনা সভা এবং ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান আয়োজন থাকবে।