সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড

SHARE

kawsarএকাত্তর সালে পাক হানাদার বাহিনীর পক্ষে গড়ে তোলা কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মো. কায়সারকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২  তার ফাঁসির আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
সকাল দশটা ৫৫ মিনিটে কায়সারকে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এরপর এগারটার দিকে তিনজন বিচারপতি এজলাসে প্রবেশ করেন।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এটা ট্রাইব্যুনাল-২ এর অষ্টম রায়। এ মামলায় সহযোগিতা করার জন্য প্রসিকিউশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান।
এ রায়টি মোট ৪৮৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত মোট ১৬৬১ প্যারায় প্রণীত হয়েছে।
আদালতে রায়ের সংক্ষিপ্ত কপি চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিজেই পাঠ করেন।
কায়সারের বিরুদ্ধে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দুটিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ১৪টি প্রমাণিত হয়েছে।
প্রমাণিত অভিযোগের মধ্যে ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
এছাড়া ১, ৯, ১৩ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ২ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর, ৭ নম্বরে সাত বছর ও ১১ নম্বরে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে এ অভিযোগগুলোতে কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি।
এ সময় আসামি সৈয়দ কায়সার কাঠগড়ায় বসেছিলেন। তার সামনের আসনে বসেছিলেন তার দুই ভাই এবং এক সন্তান।
গত ২০ আগস্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনাল অপেক্ষমাণ রাখেন। একই সঙ্গে কায়সারের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
কায়সারের বিরুদ্ধে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দুটিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ও রানা দাশগুপ্ত পাল্টা আইনি পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
গত ৭ আগস্ট থেকে কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। একই দিনে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ষষ্ঠ কার্যদিবস কায়সারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।
২৩ জুলাই প্রসিকিউশনের ৩২তম সাক্ষী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মনোয়ারা বেগমের জেরা শেষে আদালতের নির্দেশে প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত কায়সারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। ওই দিন থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত মোট ছয় কার্যদিবস আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।
এর আগে এ মামলায় ৩১ জন সাক্ষী কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষ তাদের জেরাও করে। তবে ট্রাইব্যুনালে এই প্রথম কোনো আসামি হিসেবে কায়সারের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষ্য দেয়া হয়নি।
২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল-২। গত বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় আদালত।
এ বছরের ৪ মার্চ কায়সারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য প্রদান করে প্রসিকিউশন। ৯ মার্চ থেকে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত বছরের ১৫ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। এর পর ২১ মে কায়সারকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।