খালেদার মামলা নিয়ে সমস্যায় দুদক

SHARE

bodi22বিএনপি চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলাগুলো নিয়ে সংস্থাটি বেশ সমস্যায় আছে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান  বদিউজ্জামান। তিনি বলেন, “আমাদের যে মামলাগুলো আদালতে আছে সেই মামলাগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারলে ইতিমধ্যেই অনেকগুলো ফল দেখা যেতো।  কিন্তু গত কয়েক মাস থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মামলা নিয়ে আমরা বেশ অসুবিধার মধ্যে আছি। মামলাগুলো পরিচালনা করাই যাচ্ছে না। আদালতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, ফলে আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করে যে আদালতে স্বাভাবিকভাবে বিচার করা সম্ভব সেই আদালতে মামলাগুলো নিতে বাধ্য হয়েছি। আদালতপাড়া থেকে মামলাগুলো বিডিআর হত্যা মামলার আদালতের স্থানে নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।”

সোমবার দুপুরে রংপুর মহানগরীর আরডিআরএস মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “উনি দোষী কি দোষী না আমি তা রায় দেয়ার মালিক নই। আমি তদন্ত করে একটি অভিযোগ পেশ করেছি। এখন আপনি বলছেন অভিযোগ মিথ্যা। এখন আপনি বড় বড় উকিল দিয়ে অভিযোগ খণ্ডন করতে পারেন। বড় বড় মামলা থেকে অনেকেই মুক্ত হচ্ছে। আপনি বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে আপনাকে সাজা ভোগ করতে হবে। আর নির্দোষ প্রমাণিত হলে আপনি মুক্ত হবেন। আমি তাদের (খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের) অনুরোধ করবো, আমাদেরকে আপনারা সহযোগিতা করুন। তাহলে নিশ্চিত একটা ফল জাতি দেখতে পাবে।”

খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বারবার করে বলা হচ্ছে মামলাগুলো মিথ্যা। তাহলে আমি বলবো মিথ্যা মামলা  হলেই তো আপনাদের সুযোগ। আপনারা মিথ্যা প্রমাণ করে মুক্ত হয়ে যান। আমি চাই তো সেটা আপনারা করেন। মামলাটা শেষ হয়ে যাক। কিন্তু আপনারাই তো তা হতে দিচ্ছেন না। বারবার কোনো না কোনো অজুহাত তুলে আপনারা মামলা উচ্চ আদালতে তুলছেন। একবার বলছেন বিচারকের প্রতি আস্থা নাই। একবার বলছেন বিচারকের নিয়োগ ঠিক হয়নি। এভাবে নানারকম বাহানা করা হচ্ছে। এজন্য কয়েকবার বিচারকও পরিবর্তন করা হচ্ছে।”

দুদককে টিআইবির দেয়া দায়মুক্তির কমিশন প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন,  “আমি বলি না যে টিআইবির রিপোর্ট একেবারেই মিথ্যা। টিআইবি তারা মুল্যয়ন করেছে। তবে আমার মনে হয় সেটি পুরোপুরি ঠিক নয়।”

তিনি বলেন, “আমরা বড় বড় মামলা করেছি। এগুলো আগে কখনো করা হয়নি। এগুলোও আমাদের কম সাকসেস নয়। এসব বিষয় যদি তারা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতেন তাহলে হয়তো এভাবে তারা বলতেন না। আসলে বাংলাদেশের ট্রান্সপরেন্সি যে সংস্থা আছে এই মূল্যায়নটি তারা করেন না। এটা করা হয় কেন্দ্রীয়ভাবে। বার্লিন থেকে সেটা করা হয়। বিভিন্নভাবে কাগজপত্র দেখে তারা করেন। সেই দেখাতে হয়তো সঠিকভাবে করা হয়নি। আরো কিছু বিষয় মূল্যায়ন করা উচিত ছিল। তাহলে হয়তো ব্যাপারটা অন্যরকম দাঁড়াতো।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “অভিযোগ অনুসন্ধান করলেই তাকে দোষী বলা যাবে না। সেটা প্রমাণ হতে হবে। অনুসন্ধানের পর যদি আমরা সব ঠিকঠাক পাই, তাহলেই তাকে আমরা সেখান থেকে মুক্তি দিই। সুতরাং দুদক দায়মুক্তির কমিশন বিষয়টি ঠিক নয়।”

বিএনপিকে বারবার বিরোধী দল উল্লেখ দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশেষ করে দুর্নীতির বিষয়টিতে যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা একধরনের কথা বলে, যারা বিরোধী দলে থাকে তারা একধরনের কথা বলে। বিরোধী দল যখন সরকারে আসে বা এই দলগুলো যখন সরকারে যাবে, তখন তাদের সুর কিন্তু অন্যরকম হয়ে যাবে। ট্রান্সপরেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবছরই রিপোর্ট দেয়। রিপোর্ট দিলেই দেখা যায়, যারা সরকারে থাকে, তারা এই রিপোর্টটাকে সহজভাবে নিতে পারেন না। আর যারা বিরোধী দলে থাকেন তারা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। কারণ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বিষয় থাকে।”

দুদক চেয়ারম্যান যুক্তি দেখিয়ে বলেন, “গত বছর যখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট আসে তখন বিরোধী দল এতো সোচ্চার ছিল না।  তবে রিপোর্টটি যে একেবারেই ভুল তা আমরা বলবো না। দুর্নীতি যেহেতু আছে তারা সেভাবে করেছে। তবে মূল্যায়ন ঠিক হয়নি। কিন্তু সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হতে পারে কিন্তু বিরোধী দল যেভাবে বলছে ব্যাপারটা তা নয়।”

মন্ত্রীদের বিষযে নতুন করে কোনো তদন্ত নয় উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “এই মুহূর্তে সেরকম কোনো কাজ আমাদের হাতে নেই। যেসব কাজ আমাদের হাতে আছে সেগুলো নিয়েই আমরা এগুচ্ছি। কয়েকদিন আগেই আপনারা দেখেছেন বাংলাদেশের সব চেয়ে ধনী তাকেও আমরা দুদকে এনেছি। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমন ব্যুরো থাকাকালীন সময়ে আমরা শুধু  মামলা মোকদ্দমা করতাম। ২০০৪ সালে কমিশন হওয়ার পর অনুসন্ধান ও তদন্তের সঙ্গে প্রতিরোধ বিষয়টি জোর দেয়া হয়েছে। সেভাবেই আমরা কাজ করছি।”

তিনি আরো বলেন, “দুর্নীতি আছে বলেই জাতিসংঘ চিন্তাগ্রস্ত। সবখানেই দুর্নীতি আছে। যুক্তরাষ্ট্রে আছে, বিশ্ব্যব্যাংকেও আছে। দুর্নীতি কিভাবে কমানো যায় সেটিই আমাদের লক্ষ। কারণ দুর্নীতি দেশের জন্য খারাপ। জনসাধারণের জন্য খারাপ। অর্থনীতির জন্য খারাপ।”