তাজিকিস্তানে রাষ্ট্রপতির স্নেহের পরশে…
তাজিকিস্তানে আছি প্রায় সাড়ে চার বছর। এখানে বাংলাদেশি পরিবার আছে মাত্র তিনটি। তবে এই মুহূর্তে শুধু আমরাই আছি। বাকিরা বাংলাদেশে বেড়াতে গেছে। এই দেশে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় সাড়ে চার বছর মোটামুটি অভিভাবকহীন অবস্থায় ছিলাম। প্রায়ই শুনতাম বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রীরা সফরে এসেছেন। শুনে মনটা খারাপ হয়ে যেত; বাংলাদেশ থেকে কেউ আসেন না বলে!
এবার শুনলাম বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আসছেন ‘কনফারেন্স অন ইন্টারেকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস ইন এশিয়া’ (সিআইসিএ) সম্মেলনে অংশ নিতে। শুনেই ভালো লাগল। বেশ একটা উজ্জীবিত ভাব কাজ করছিল আমাদের মাঝে। প্রসঙ্গত, এশিয়ার ২৭টি দেশ নিয়ে সিআইসিএ সম্মেলন হয়। এটা ছিল এই সম্মেলনে পঞ্চম আসর।
রাস্তায় অন্য দেশগুলোর পতাকার সঙ্গে আমাদের লাল-সবুজ পতাকা দেখলাম। কী যে ভালো লাগল! অন্য রকম অনুভূতি। বিদেশের মাটিতে নিজের দেশের পতাকা দেখতে পাওয়াটা যে কতটা আবেগের, ভালো লাগার; তা বোঝানো যাবে না। নিজের আব্বা-আম্মা, আত্মীয়-স্বজন কাউকে এই দেশে আনতে পারিনি এখনো; তাই মনে হচ্ছিল নিজের কেউই আসছেন।
ঢাকায় থাকতে অফিস যাওয়া-আসা করতাম প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দিয়ে। প্রায়ই ভাবতাম—একদিন যদি হুট করে প্রধানমন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, তাহলে কেমন হয়! কিংবা একদিন বিকেলে যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে চা পান করতে করতে গল্প করতে পারতাম! তবে এসব চিন্তাভাবনা যে একদিন বাস্তবে রূপ নেবে, কখনোই ভাবিনি।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাত্র তিন দিনের জন্য আসবেন। অত্যন্ত ব্যস্ত থাকবেন। তাই দেখা করা যাবে কিনা, সেটি নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু স্যার একজন প্রকৃত অভিভাবকের মতো তাঁর কর্মকর্তাদের দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের পরিবার তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেল। আমাদের সঙ্গে বসে এক ঘণ্টারও বেশি সময় গল্প করেছেন তিনি। আমাকে আপ্যায়নের সুযোগ দিয়েছেন। যাওয়ার আগে আমাদের জন্য উপহার পাঠিয়ে অবাক করে দিয়েছেন।
স্যারের সঙ্গে যখন দেখা করার সুযোগ পেলাম, খুব নার্ভাস ছিলাম। রুমে ঢোকামাত্র স্যারের স্মিত হাসি দেখে ভয়টা হঠাৎ করেই পালিয়ে গেল। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তিনি যখন আমাদের সঙ্গে গল্প করছিলেন, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বসে চা পান আর গল্প করছি।
সেই গল্পে উঠে এল কত কী! আমরা এখানে কেমন আছি। এই দেশের আবহাওয়া কেমন, খাবার-দাবার কেমন, মানুষজন কেমন, আমাদের কোনো সমস্যা আছে কিনা—সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন। নিজের জীবনের মজার মজার গল্প শেয়ার করলেন। একটা ঘণ্টা যে কোন দিক দিয়ে পার হলো, টেরই পাইনি।
চলে আসার সময়ে স্যারকে অনুরোধ করলাম স্মৃতি হিসেবে একটা ছবি তুলতে চাই। স্যার সম্মতি দিলেন। স্মৃতি হিসেবে শুধু ছবিই নয়, পেয়েছি তাঁর আন্তরিক ব্যবহারও। বিদায়ের মুহূর্তে স্যার মাথায় হাত রেখে বললেন, আবার দেখা হবে। স্যারের সঙ্গে আবার দেখা করার মতো সৌভাগ্য হবে কিনা জানি না। তবে সেই এক ঘণ্টায় স্যার আমাকে, আমার স্বামী সুমন ও আমাদের একমাত্র মেয়ে বুবুনকে যে ভালোবাসা আর আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, সেটা সারা জীবনের জন্য যথেষ্ট। আসলেই তিনি আমাদের অভিভাবক, একান্ত আপনজন।
নাবিলা ইমাম: তাজিকিস্তান প্রবাসী প্রকৌশলী