প্রথম আলো
বিনোদন
বিনোদন
নাট্যাঙ্গনে নির্বাচনের উত্তাপ, লড়ছেন ৫১ শিল্পী
নিজস্ব প্রতিবদেক, ঢাকা
১৬ জুন ২০১৯, ২২:২৩
আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯, ২৩:১০
এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, তুষার খান (আশিকুল ইসলাম খান) ও মিজানুর রহমান (শামীম ভিস্তী)
এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, তুষার খান (আশিকুল ইসলাম খান) ও মিজানুর রহমান (শামীম ভিস্তী)
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন দারুণ জমজমাট রাজধানীর নাট্যাঙ্গন। সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি, বেইলি রোডের মহিলা সমিতি বা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা শুটিং হাউসে এখন সাধারণ আলোচনার বিষয় নির্বাচন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভেসে উঠছে নির্বাচনের নানান আলাপ, ছবি। প্রতিষ্ঠিত অভিনয়শিল্পী বা যশপ্রার্থী শিল্পী, সবাই মেতে আছেন নির্বাচন নিয়ে। নিজের বা নির্বাচনে অংশ নেওয়া পছন্দের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন। পরস্পর দাবিদাওয়া, চাওয়াপাওয়ার হিসাব কষছেন। সব মিলে একটা উৎসব আমেজ নাট্যাঙ্গনে।
মাঝে আর মাত্র ৪টি দিন। ২১ জুন অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচন উৎসব। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত শিল্পকলা একাডেমিতে। ভোট গ্রহণ চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন নাট্যজগতের গুণী ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ। গতকাল শনিবার শিল্পকলা একাডেমিতে প্রার্থী পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন রীতিমতো তারকার মেলা বসেছিল শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে দেখা গেছে, ২১ পদের জন্য ৫১ জন প্রার্থী লড়াই করবেন। একজন ইতিমধ্যে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। নির্বাচনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন, তাঁদের তালিকা প্রকাশ করেছে বর্তমান শিল্পী সংঘ। শিল্পী সংঘ থেকে জানানো হয়, এবার শিল্পী সংঘের ভোটার সব মিলিয়ে প্রায় ছয় শ।
ইতিমধ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে লুৎফর রহমান জর্জ নির্ধারিত হয়ে গেছেন। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ছেন তিনজন তুষার খান (আশিকুল ইসলাম খান), মিজানুর রহমান (শামীম ভিস্তী) ও শহীদুজ্জামান সেলিম। সহসভাপতি পদে তিনটি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন। আজাদ আবুল কালাম, আহসানুল হক মিনু, ইউজিন ভিনসেন্ট গোমেজ, ইকবাল লাবু, তানিয়া আহমেদ, দিলু মজুমদার। নিয়মানুযায়ী এই ছয়জনের মধ্য থেকে জয়ী হবেন তিনজন।
সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন আহসান হাবিব নাসিম ও আবদুল হান্নান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দুটি পদের জন্য লড়ছেন আশরাফ কবীর, আনিসুর রহমান মিলন, এ কে এম আমিনুল হক আমিন, রওনক হাসান (এম এম কামরুল হাসান) ও সুমনা সোমা। অর্থ সম্পাদক হিসেবে একটি পদের বিপরীতে লড়ছেন মুহাম্মুদ নূর এ আলম এবং মাঈন উদ্দিন আহমেদ। দপ্তর সম্পাদক পদে লড়াইয়ে থাকা চার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেন উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, আরমান পারভেজ মুরাদ, গোলাম মাহমুদ, শেখ মেরাজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠান সম্পাদকের একটি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। তাঁরা হলেন জিনাত সানু স্বাগতা, পাভেল ইসলাম ও রাশেদ মামুন অপু। আইন ও কল্যাণ সম্পাদকের একটি পদে লড়ছেন ম ম শিউলী, শামীমা ইসলাম তুষ্টি, শিরিন আলম। প্রচার ও প্রকাশনা পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন প্রাণ রায়, শফিউল আলম বাবু এবং শহিদ আলমগীর। তথ্য ও প্রযুক্তি–বিষয়ক সম্পাদক পদে লড়তে যাচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম ও সুজাত শিমুল।
সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন আহসান হাবিব নাসিম ও আবদুল হান্নান
সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন আহসান হাবিব নাসিম ও আবদুল হান্নান
কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে সাতটি পদের জন্য প্রার্থী ১৮ জন। তাঁরা হলেন সেলিম মাহবুব, বন্যা মির্জা, শামস সুমন, শামসুন নাহার শিরীন (সূচনা সিকদার), আবদুর রাজ্জাক, সনি রহমান, নিথর মাহবুব, জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ওয়াসিম হাওলাদার, মুনিরা বেগম মেমী, মাহাদী হাসান পিয়াল, তানভীর মাসুদ, নাদিয়া আহমেদ, রেজাউল করিম সরকার, নুরুন নাহার বেগম, তারেক মাহমুদ, জাকিয়া বারী মম এবং রাজিব সালেহিন।
শিল্পীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন জানিয়ে সভাপতি প্রার্থী শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘সবার আগে আমি চেষ্টা করব অভিনয়শিল্পী পেশার সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায়ের। একই সঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো টেলিভিশনেও জাতীয় পুরস্কার প্রবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করব।’
কী করবেন বা পরিকল্পনা কী—এ বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলার পক্ষে না সভাপতি প্রার্থী তুষার খান। তাঁর মতে, একটা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো, পরে কোনো কারণে সেটি করা হলো না, এ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির কোনো দাম নেই। বর্তমান কমিটি আসার আগে তিনি সাত বছর নিজের উদ্যোগে সংগঠনটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সব সময় যেমন শিল্পীদের পাশে ছিলাম, তেমনি দায়িত্ব পেলেও পাশে থাকব।’
সভাপতি পদের আরেকজন প্রার্থী মিজানুর রহমান। যিনি মূলত শামীম ভিস্তী নামেই পরিচিত। তিনি বলেন, ‘এখনকার নাটকগুলোতে চরিত্রের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন অসংখ্য শিল্পী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের এবং নাটকে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিভিন্ন চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে নাটক নির্মাণ এবং সেটা প্রচারের জন্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আমরা যদি সম্মিলিতভাবে একটি ওয়েব চ্যানেল কিংবা ইউটিউব চ্যানেল চালুর চেষ্টা করব। তাহলে নিজেরাই স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে ভালো গল্প এবং ভালো ডিরেক্টর নিয়ে নিজেদের প্রোডাকশন বানিয়ে সেখানে আপলোড দিতে পারব এবং ভিউয়ার্স অনুযায়ী একটি স্বল্প ফি মেইনটেন্যান্স খরচ বাবদ দিয়ে বাদবাকি টাকা নিয়ে যেতে পারব।’
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘গেল দুই বছরে ২০টিরও বেশি দৃশ্যমান কাজ আমরা সম্পাদন করেছি। সামনে সুযোগ পেলে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমাদের শিল্পীদের অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা আদায়ে কাজ করতে চাই।’ পাশাপাশি তিনি অভিনয়শিল্পী সংঘের ইতিহাস সংরক্ষণ, সব শিল্পীর অভিনয়ের ভিডিও ক্লিপসহ সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করে তা ওয়েবসাইটে সংযুক্ত করাসহ ১৪টি আলাদা আলাদা কাজের পরিকল্পনার কথা জানালেন।
একই পদে আগেরবারও নির্বাচিত হয়েছিলেন নাসিম। তবে এবার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল হান্নান তুলনামূলক কম পরিচিত। আবদুল হান্নান বলেন, ‘শিল্পীদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে চাই বলেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’
এবারের নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিম জানালেন আজিজুল হাকিম, তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসানসহ তাঁরা চারজন মিলে অভিনয়শিল্পী সংঘের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে ১০৬ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সংগঠনের। মাঝে নানা কারণে বেশ লম্বা একটা সময় নিষ্ক্রিয় থাকার পর সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় অভিনয়শিল্পী সংঘের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এতে মোট ২১টি পদে ৫১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাধারণ ভোটারদের রায়ে সভাপতি হিসেবে শহিদুল আলম সাচ্চু এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আহসান হাবিব নাসিমসহ ২১ জন শিল্পী নির্বাচিত হন।