মাঝ সমুদ্রের রহস্যময় জাহাজে মজুত ছ’মাসের খাবার, নেই দুর্ঘটনার চিহ্ন, অথচ নেই এক জনও!

SHARE

পৃথিবীর বুকে লুকিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য। এমনই একটি রহস্য ঘিরে রয়েছে ‘মেরি সেলেস্ট’ জাহাজকে ঘিরে। কি হয়েছিল এই জাহাজের, যা এই জাহাজকে পৃথিবীতে অন্যতম রহস্যময় ঘটনা হিসেবে উল্লেখযোগ্য করে তুলেছে। জেনে নিন সেই ঘটনা।এই জাহাজটির প্রথম নাম ছিল ‘আমাজন’। ১৮৬০ সালের শেষের দিকে নোভা স্কোশিয়ার ‘বে অফ ফান্দি’-র পাড়ে স্পেনসার দ্বীপে এই জাহাজটি তৈরি হয় ,পরবর্তীকালে এই জাহাজটি মার্কিন এক বণিকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এর নতুন নাম রাখা হয় ‘মেরি সেলেস্ট।১৮৭২ সালের ৭ নভেম্বর ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন ব্রিগস তাঁর স্ত্রী, সন্তান এবং ৭ জন নাবিককে নিয়ে নিউওয়র্ক থেকে জিনোয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।যাত্রা শুরু করলেও মাঝ পথে প্রবল ঝড় এবং ভয়ঙ্কর ঢেউ এর মুখোমুখি হতে হয় মেরিকে। কিন্তু এত বিপদে পড়েও কোনও রকম ক্ষতি হয়নি মেরির।১৮৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্তুগালের তট থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে অতলান্তিক মহাসাগরে আজর দ্বীপের কাছে ব্রিটিশ জাহাজ ‘দি গ্রাসিয়া’ দেখতে পায় মেরিকে।ফাঁকা জাহাজ দেখে সন্দেহ হয় গ্রাসিয়ার নাবিকদের। দেখা যায়, জাহাজটিতে ছয় মাসের খাবার থেকে শুরু করে নাবিকদের জামাকাপড় সবই সঠিক অবস্থায় রয়েছে। নেই শুধু কোনও মানুষের চিহ্ন। আশ্চর্যজনক ভাবে নিখোঁজ ছিল একটি লাইফ বোটও।গ্রাসিয়ার ক্যাপ্টেন পরে জানিয়েছিলেন, এই ভূতুরে জাহাজে তিনি বা তাঁর সহকর্মীরা কাউকেই দেখতে পাননি। শুধুমাত্র জাহাজের নীচে কিছুটা জল জমে থাকতে দেখেন। মেরিকে নিয়েই ‘দি গ্রাসিয়া’ জিব্রাল্টারের উদ্দেশে রওয়ানা হয়।জাহাজটির কোনওরকম ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, অথচ জাহাজটিতে কেন কেউ ছিলেন না, তা নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। সামনে আসতে থাকে নানা তত্ত্ব।
কারও মতে, নাবিকরা নেশাগ্রস্ত হয়ে ভেসে গিয়েছিলেন। আবার কারও মতে জলদস্যুদের হামলায় পড়েছিল মেরি। কেউ আবার খাড়া করেছে সামুদ্রিক দানবের হামলার তত্ত্ব।তত্ত্বগুলির মধ্যে একটি বিস্ময়কর তত্ত্ব ছিল এই যে, জাহাজটিতে কোনও ভাবে মদ থেকে আগুন লেগে যায় এবং সেই ভয়ে সকলে পালিয়ে যান। কিন্তু এই ধারণাগুলোর সমর্থনে কোনও প্রমাণ কোনও দিনই সামনে আসেনি।১৮৮৪ সালে কোনান ডয়েল এই জাহাজকে নিয়ে একটি ছোটগল্প লেখার সময় কিছু নতুন তথ্য সামনে আনেন। কিন্তু সেগুলিও প্রামাণ্য হিসাবে স্বীকৃত হয়নি।২০০২ সালে, তথ্যচিত্রকার অ্যানি ম্যাকগ্রিগর তাঁর তথ্যচিত্রের জন্য নতুন ভাবে তদন্ত শুরু করে নতুন কিছু তথ্য আবিষ্কার করেন।ম্যাকগ্রিগর দাবি করেন, ক্যাপ্টেনের কাছে ভুল ক্রোনোমিটার ছিল এবং গন্তব্য থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে ছিল মেরি। এ ছাড়া জাহাজের পাইপ আটকে জল জমে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ভয়ে তাঁরা সকলে জাহাজ ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তাংরা গেলেন কী করে? খোঁজ তো মেলেনি শুধুমাত্র একটি লাইফবোটের। উত্তর মেলেনি তার।ম্যাকগ্রিগরের এই তত্ত্বকে সঠিক হিসেবে না ধরা গেলেও তাঁর তত্ত্ব তুলনামূলক ভাবে অন্যান্য তত্ত্বগুলির থেকে গ্রহণযোগ্য ছিল কারণ তাঁর কাছে প্রমাণ হিসাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া পাইপটি ছিল।এই ভূতুরে জাহাজ নিয়ে জেন ইয়েলনের ‘দি মেরি সেলেস্ট- অ্যান আনসল্ভদ মিস্ট্রি ফ্রম হিস্ট্রি’ বই এবং ‘দি ট্রু স্টোরি অফ দি মেরি সেলেস্ট (২০০৭)’ এবং ‘ফ্যানটম শিপ’ (১৯৩৫) সিনেমা তৈরি হয়।