পাঁচ হাজার প্লাস্টিক কারখানায় ১২ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান

SHARE

দেশে প্রায় পাঁচ হাজার প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে ১২ লাখের বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে। দেশে প্লাস্টিকের বাজার ২৫ হাজার কোটি টাকার। দেশে বর্তমানে মাথাপিছু প্লাস্টিকের চাহিদা প্রায় ছয় কেজি। জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধিতে ২০৩০ সালে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৩০-৩৫ কেজি। দেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্য (খেলনা ও গৃহস্থালিসহ একাধিক পণ্য) বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিদেশি উদ্যোক্তারাও এখন বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্য আমদানি করছে। রপ্তানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্লাস্টিক খাতের রোডম্যাপ, নগদ ছাড়, পৃথক শিল্পনগরী, প্যাকেজিং আইন, রপ্তানিতে প্রণোদনা ও কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতা চান এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের এমন বহু দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ খাতকে আরো রপ্তানিমুখী ও বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে প্লাস্টিক খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘এই খাতটি সম্ভাবনাময়, ক্রমেই এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে, কিন্তু এই খাতে কিছু সমস্যা রয়েছে। আরো রপ্তানি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে শিগগিরই বসে আলোচনা করে সমাধান করা হবে।’

গতকাল রবিবার রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলের উৎসব হলে চার দিনের আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক উৎসবের সমাপনীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির উপদেষ্টা ও লুনা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের এমডি এ এস এম কামাল উদ্দিন, সহআয়োজক প্রতিষ্ঠান ইয়র্কার ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস কম্পানি লিমিটেডের সভাপতি জুডি ওয়াং ও সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।

অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার চার দিনের ১৪তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলা-২০১৯ মেলা শুরু হয়। এতে ১৯টি দেশের ৪৬০টি কম্পানি অংশ নেয়। আয়োজকরা বলছেন, এ বছর বিদেশি রাষ্ট্র ও কম্পানির সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এবারের স্টল প্রবৃদ্ধি ৬২.৫ শতাংশ আর কম্পানি প্রবৃদ্ধি ৭.৬৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে প্লাস্টিক মেলায় ১৬ দেশের ৩৬০টি কম্পানি অংশ নিয়েছিল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রপ্তানিতে ১২তম অবস্থানে থাকা প্লাস্টিক শিল্প খাতে অভ্যন্তরীণভাবে ২৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হয়। প্রায় পাঁচ হাজার প্লাস্টিক কারখানার মাধ্যমে ১২ লাখের বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে। সরকার এই খাত থেকে প্রতিবছর সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পায়। দেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, এশিয়ার চীন, ভারত ও নেপালেও রপ্তানি হচ্ছে। প্লাস্টিক খাতের বর্তমান বিশ্বে ৫৪৬ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। যাতে বাংলাদেশের অবদান ০.০৬ শতাংশ। ভবিষ্যতে ৩ শতাংশ অর্জনের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এই খাতের বিকাশ ও আগামী দিনের চাহিদা পূরণে উদ্যোক্তারা নানা ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন বাজার সৃষ্টি ও পণ্য রপ্তানি বাড়াতেও প্রচেষ্টা চলছে। সরকারের নীতিগত সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রাখলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ও প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাবে এই খাত। মেলা আয়োজন কেবল একটি প্রদর্শনীই নয়, এতে প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়, প্রযুক্তি স্থানান্তরে ভূমিকা ও নতুন উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে সহায়তা করে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘প্লাস্টিক শিল্প খাতের পণ্য কাঠের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। একসময় কাঠের চেয়ার ব্যবহার হতো কিন্তু এখন প্লাস্টিকের চেয়ার ব্যবহার হচ্ছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার না হলে বন উজাড় হতো।