নজিবুল মাইজভান্ডারীর শোভাযাত্রার গতিপথ পাল্টে দিলো আ.লীগ

SHARE

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ফটিকছড়িতে ১৪ দলীয় জোটের শরীক তরকিত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপির সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। গত ৪ অক্টোবর প্রকাশ্যে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পথসভার মঞ্চ ভাঙচুরের পর আজ নজিবুল বশরের মোটর শোভাযাত্রা ও পথসভার গতিপথ পাল্টে দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার সকালে ফটিকছড়ির নাজিরহাট টু মাইজভান্ডার সড়কের নামফলক উন্মোচন করেন তরকিত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান। পরে নাজিরহাটের ঝংকার মোড় থেকে মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে উত্তর ফটিকছড়ির দিকে যেত চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয়সহ নাজিরহাটের কুম্ভারপাড়া, ফটিকছড়ি সদর ও ফেলাগাজীর দীঘির মোড়ে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়।

বিপরীত দিকে নাজিরহাট ঝংকার মোড়ে সমাবেত হয় সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সমর্থিত আওয়ামী পরিবারের নেতাকর্মীরা। এতে উভয় পক্ষে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা সৃষ্টি হয়। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জলকমান নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন। অবস্থা বেগতিক দেখে সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী মোটর শোভাযাত্রার গতিপথ পাল্টে বিকল্প নাজিরহাট-সুয়াবিল-কাজীরহাট সড়ক হয়ে হেয়াকোর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নামফলক উন্মোচন করা হবে, অথচ উপজেলা আওয়ামী লীগকে জানানো হয়নি। জনবিচ্ছিন্ন নেতারা মোটর শোভাযাত্রার নামে ফটিকছড়ির রাজনীতিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পথসভায় বর্তমান সাংসদের সমর্থকরাই আমাদের পথসভার মঞ্চ ভাঙচুর করেছে।’

ফটিকছড়ি থানার ওসি বাবুল আকতার জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচনের অনুষ্ঠান ছিল। সাংসদের গাড়ি প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার সময় প্রতিপক্ষের লোকজন রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছিল, পরে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করা হয়। এসময় দুপক্ষে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ালেও পুলিশ বুদ্ধিমত্ত্বার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।’

উল্লেখ্য, ফটিকছড়িতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত। গত দুই বছর ধরে একটি উপজেলা আওয়ামী লীগ অপরটি আওয়ামী পরিবার নাম দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। আওয়ামী পরিবার হলো মূলত স্থানীয় এমপি তরকিত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর অনুকূলে।

গত ৪ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পথসভার আয়োজন করা হয়। পথসভার প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু ফটিকছড়ির আজাদী বাজার ও নাজিরহাট ঝংকার মোড় এলাকায় আওয়ামী পরিবার সমর্থিত স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেই পথসভার মঞ্চ ভাঙচুর করে।

jagonews

এ ঘটনার পরদিন ৫ অক্টোবর দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এই হামলার পেছনে ১৪ দলীয় জোটের স্থানীয় এমপি তরকিত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর ইন্ধন আছে বলে দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, বর্তমান এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ১৯৯১ সালে ফটিকছড়ি থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। পরে ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এরপর নিজেই তরিকত ফেডারেশন গঠন করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বাধেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনি নির্বাচিত হন।