একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালেদা জিয়ার বিচার, তারেক রহমানের ফাঁসির দাবী আওয়ামী লীগের

SHARE

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার এবং তার পুত্র তারেক রহমানের মৃত্যুদন্ড দাবী করেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঘৃন্য এ গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গ্রেনেড হামলার সময় স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এ হামলার দায় এড়াতে পারেন না।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় বিকল্প সরকার ছিল হাওয়া ভবন। এ ভবন থেকেই তারেক রহমান হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এই হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড, প্ল্যানার ও বিকল্প পাওয়ার সেন্টারের মালিক তারেক রহমান। এ মামলার রায়ে তার মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, ডা. দীপুমনি এমপি, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যান সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসে এমন বর্বর হত্যাকান্ড আর হয় নি।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এ ধরনের হামলা আরো হয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল মূলত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো একটি পাপ। এ পাপের সঙ্গে জড়িত ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার।
কাদের বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হাওয়ার ভবনের নিয়ন্ত্রক তারেক রহমান এ হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য শুধু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাই করে নি, তারা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জর্জ মিয়া নাটক সাজিয়েছিলেন এবং দুর্নীতিবাজ বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট প্রহসনের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিলেন।
কাদের বলেন, বর্বর এই গ্রেনেড হামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ফ্লোর চেয়েছিলেন তাকে তা দেওয়া হয় নি। এটিও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। এ সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, উনাকে (শেখ হাসিনা) কে মারতে যাবে। তিনি নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। জবাবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেছিলেন, হ্যা আমি তো আত্মহত্যা করতেই নিয়ে গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, এ হামলা নিয়ে সে সময় তারা যে আনন্দ উল্লাস করেছিল তা কোন সভ্য সমাজ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নজীরবিহীন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, দেশের মানুষ জানে, ২১ আগস্ট সম্পূর্ণ রাষ্টীয় মদদে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। যার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ। তৎকালীন শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাসভবনে এবং তারেক রহমানের হাওয়া ভবনে নারকীয় গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল।
তিনি বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর ও তারেক রহমান এ হামলায় সকল ধরনের সরকারী ও পুলিশী সহায়তা দেন। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তাদের লোকেরাও এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ হামলা কাদের মদতে হয়েছে তা জানা গেছে। সাদিক হোসেন রুমির বক্তব্য থেকে তা জানা গেছে।
তিনি বলেন, যে হামলায় ডিজিএফআই ও এনএসআই প্রধান জড়িত, দু’জন প্রতিমন্ত্রী জড়িত, তারেক রহমানের হাওয়া ভবনে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানবেন না তা কখনো হতে পারে না। এ প্রশ্নের জবাব বিএনপিকেই দিতে হবে।
কাদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যা পরবর্তী সুবিধাভোগী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ইনডেমনিটি জারি করে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার ২১ বছর বন্ধ করে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই ইনডেমনিটিকে পবিত্র সংবিধানের অন্তভূক্ত করেছিলেন।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টেও হত্যাকান্ড একইসূত্রে গাঁথা। আর ১৫ আগস্টেও ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বরের জেলহত্যাকান্ড ঘটেছিল।
বিএনপি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত নয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, তিনি (ফখরুল) যেভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন তা সত্যি দেশের মানুষের কাছে হাস্যকর।
তিনি বলেন, আপনারা যদি জড়িত নাই থাকেন তাহলে গ্রেনেড হামলার আলমত ধ্বংস করলেন কেন, টিয়ারসেল মেরে হামলাকারীদের পালাতে সাহায্য করলেন কেন, বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে তদন্ত করতে দিলেন না কেন, জর্জ মিয়া নাটক সাজালেন কেন, দুর্নীতিবাজ বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করলেন কেন?
তিনি আরো বলেন, আপনারা যতই সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন সত্য ততই উন্মোচিত হয়েছে। শেখ হাসিনার ওপর ২০ বার হামলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার ওপর একবারও হামলা হয়নি। শেখ হাসিনার ওপর ব্যর্থ হামলার চেষ্টা কি অসত্য?
সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, আমরা এ মামলার ন্যায় বিচার চেয়েছি। বিচারকে প্রভাবিত করিনি। বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলেছে। আদালত বিলম্বে হলেও যে রায় দিয়েছে আমরা মনে করি এটি একটি ভাল রায়। এ রায়ে আমরা অখুশি হইনি, আবার পুরোপুরি সন্তুষ্টও হইনি।
তিনি বলেন, এ হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড, প্লেনার ও হাওয়া ভবনের কর্নধার তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড পাওয়া উচিত ছিল। তিনি যা করেছেন সেজন্য আমরা তার মৃত্যুদন্ড দাবি করছি।
তিনি আরো বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কোনভাবেই এ হামলার দায় এড়াতে পারে না। আমরা তার বিচার দাবী করছি। এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
উল্লেখ, দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের রায় হলো। এ রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। বাকী আসামীদের বেশ কয়েকজনকে ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়।