বোলিংয়ে দুর্বলতা

SHARE


কাল বাংলাদেশের তিন পেসারই একটুর জন্য ফিফটির দেখা পেলেন না। রুবেল হোসেন ৪৫ রানে থেমেছেন। মোস্তাফিজ আটকেছেন মাত্র ২ রানের জন্য। আর তাসকিন আহমেদের জুটেছে ৪০ রান। ব্যাট হাতে তিন পেসার ফিফটি থেকে দূরে থামলে খুশি হয়ে উঠত পুরো দলই। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের তিন পেসারের নামের পাশে থাকা এ সংখ্যাগুলো রান দেওয়ার পরিসংখ্যান।

কাল বাংলাদেশ দল দুর্দান্ত এক জয় পেয়েছে। ২১৫ রানের কঠিন লক্ষ্য ছুঁয়েছে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড জড়ে। এ এমন এক জয়, দুকূলপ্লাবী আবেগ-উচ্ছ্বাস সব যেন ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। আবেগী মন তো হিসেব বোঝে না। তাই হয়তো আড়ালে চলে গেছে কাল বাংলাদেশের বাজে বোলিং।

শ্রীলঙ্কান বোলারদের ওপরও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা চড়াও হয়েছিলেন, উইকেট ফ্ল্যাট ছিল, বোলারদের করার কিছু ছিল না; এসব বলেও আসলে বাংলাদেশের কালকের বাজে বোলিংকে আড়াল করা যায় না। বিশেষ করে তিন পেসারের বোলিং। তিন পেসারের ১১ ওভারেই এসেছে ১৩৩ রান!

রুবেলের অবশ্য এমন কিছুতে অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কথা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচে খরচে বোলিংয়ের রেকর্ড মাশরাফির সঙ্গে ভাগাভাগি করে দখলে রেখেছেন তিনি। এ ছাড়া দুবার পঞ্চাশ পেরিয়েছেন। আরেকবার ৪৯ রানেও আটকা পড়েছেন রুবেল। তবে কাল তাঁকেও পার করে ফেলার সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন তাসকিন।

রুবেল-মোস্তাফিজের চেয়ে কম রান দিয়েছেন, তবে খুব সহজেই এ দুজনকে ছাড়িয়ে যেতে পারতেন তাসকিন। প্রথম ওভারে এক ছক্কা-এক চারের পর দ্বিতীয় ওভারে দুই ছক্কা খেয়েছেন। ওয়াইডেও দিয়েছেন ৫ রান। দুই ওভারে ৩৩ রান দিয়ে প্রথম স্পেলটা শেষ করতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড়। তাসকিন কী পারবেন ফিফটি করতে? ব্যাটে না পারুন, অন্তত বলে!

‘ব্যাটে না পারুক’ প্রসঙ্গটা তাসকিনের সুবাদেই ছড়িয়েছে। ম্যাচের আগে দলের আশার কথা শোনাতে গিয়ে তাসকিন বলেছেন দলের সবার চেষ্টার কথা। সেটা বোঝাতেই বলেছেন, ব্যাটিংয়ে আরও ভালো করতে চান। ভবিষ্যতে বোলিং অলরাউন্ডার হওয়ার ইচ্ছাটাও বলে ফেলেছিলেন। মানুষের খোঁচা দেওয়ার জন্য অস্ত্র তুলে দেওয়া যাকে বলে।

নিজের তৃতীয় ওভারে এসে অবশ্য কিছুটা সামাল দিতে পেরেছেন তাসকিন। প্রথম ৫ বলে মাত্র ৭ রান দিয়েই ক্ষান্ত হননি, শেষ বলে দিনেশ চান্ডিমালকেও আউট করে দিয়েছেন। পরে আরও পাঁচ ওভার বাকি থাকলেও তাসকিনকে আর বোলিংয়ে আনলেন না মাহমুদউল্লাহ। ফলে তিন ওভারে ৪০ রানে থেমেছেন তাসকিন। স্লগ ওভারের ঝড়টাও গেল রুবেল-মোস্তাফিজের ওপর দিয়ে।

২০১৯ বিশ্বকাপ পেস সহায়ক কন্ডিশনে হবে বলে সবগুলো দলই ধীরে ধীরে নিজের পেস আক্রমণ সাজিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশও এখন বোলিংয়ে পেস আক্রমণ নির্ভর এক দল। দলের কান্ডারিও পেস বোলিংয়ের চলমান এক ইতিহাস কিংবা অভিধান। কিন্তু ছাত্রদের ব্যর্থতার দায় কোর্টনি ওয়ালশকে নিতে হচ্ছে। উইকেটে খুব বেশি কিছু ছিল না। কিন্তু এমন উইকেটে কী করতে হবে সেই নির্দেশনা নিশ্চয়ই ছিল। বাংলাদেশে বোলারদের পিচ ম্যাপ দেখলে অবশ্য মনে হতে পারে, লাইন ও লেংথে বোলাররা কাল ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’র (পড়ুন মারো) আনন্দে মেতেছিলেন।

আনন্দের দিনে সমালোচনা হয়তো অনেকেরই ভালো লাগবে না। কিন্তু এও সত্যি, সাফল্যের স্রোতে যে ভেসে যায় না, বরং নিজের ভুলত্রুটিগুলো ভেবে দেখতে হবে, দিন শেষে আরও আরও সাফল্য তাঁকেই ধরা দেয়।