আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের (আইসিবিএম) পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ক্ষেপণাস্ত্রটি গতকাল মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা থেকে জাপান সাগরে গিয়ে পড়ে। উত্তর কোরিয়ার সরকারি টেলিভিশনে এ খবর জানিয়ে বলা হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের যেকোনো জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বলেছে, এটি মাঝারি পাল্পার ক্ষেপণাস্ত্র এবং তাদের জন্য তেমন কোনো হুমকি তৈরি করবে না।
সামপ্রতিক মাসগুলোতে পিয়ংইয়ং বেশ কয়েকটি পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এতে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হলো। এই ঘটনাকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পরিষ্কার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে জাপান। তারা এর জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে। এক দিন আগেই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধের ব্যাপারে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউহাপ জানায়, স্থানীয় সময় ৯টা ৪০ মিনিটে উত্তর পিয়ংগান প্রদেশ থেকে মিসাইলটি ছোড়া হয়। টোকিও বলছে, জাপান সাগরের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হেনেছে।
উত্তর কোরিয়ার টেলিভিশন জানায়, তারা প্রথমবারের মতো হোয়াসং-১৪ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং দেশটির নেতা কিম জং-উন উপস্থিত থেকে এই পরীক্ষা দেখেছেন। খবরে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ৩৯ মিনিট উড়ে ৯৩৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার পর জাপান সাগরের টার্গেটে গিয়ে আঘাত হানে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার ৮০২ কিলোমিটার ওপরে উঠেছিল। দেশটি দাবি করে, তারা এখন পূর্ণমাত্রায় পরমাণু শক্তিধর এবং সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের অধিকারী যা বিশ্বের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম। এর ফলে ‘মার্কিন পরমাণু যুদ্ধের হুমকি ও ব্ল্যাকমেইলের’ অবসান ঘটবে বলে দাবি করে তারা।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানান, চলতি বছর উত্তর কোরিয়া এই নিয়ে ১১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর আগে গত মে মাসেও তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল।
আগামী ৭ জুলাই জার্মানিতে বসতে যাচ্ছে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দুই দেশ জাপান ও চীন সম্মেলনে অংশ নেবে। তারই অংশ হিসেবে গত সোমবার দেশ দুটির সরকারপ্রধানদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাতে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে। আর এর ২৪ ঘণ্টার মাথায় উত্তর কোরিয়া তার জবাব হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘটনা ঘটাল।
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘণ্টা দুয়েক পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, বিশ্ব সমপ্রদায় বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া তা অগ্রাহ্য করছে। তিনি বলেন, ‘জি-২০ সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা উপস্থিত থাকবেন। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে বিশ্ব সমপ্রদায়কে একতাবদ্ধ হওয়ার জন্য জোরালো আহ্বান রাখব আমি। ’
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটার বার্তায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের প্রসঙ্গে লেখেন, ‘উত্তর কোরিয়া এইমাত্র আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র উেক্ষপণ করল। এই ব্যক্তি কি জীবনে এর চেয়ে ভালো কিছু আর করবেন না?’ তবে হোয়াইট হাউস তাত্ক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি।