ফাইনালের মঞ্চে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তানের সামনে ধসে পড়ল পরাক্রমশালী ভারত। ব্যাটিং কিংবা বোলিং- কোনোদিক দিয়েই এদিন পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি বিরাট কোহলির দল।
যে পাকিস্তানের ফাইনাল পর্যন্ত আসার কথাই ছিল না; সেই দলটিই কিনা গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের মত দলকে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ৮ম চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতে নিল! পাকিস্তানের দেওয়া ৩৩৯ রানের টার্গেটের সামনে ভেঙে পড়ল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ! ৩০.৩ ওভারে মাত্র ১৫৮ রানেই শেষ হয়ে গেল কোহলিদের ইনিংস!
রান চেজের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মোহাম্মদ আমিরের বোলিং তোপে পড়ে ভারত। ইনিংসের প্রথম ওভারের ৩য় বলেই এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে ০ রানেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রোহিত শর্মা। ফিরতি ওভারে এসে ভারতের সবচেয়ে ‘বিগ উইকেট’ তুলে নেন আমির। তার বলে ৫ রান করে শাদাব খানের তালুবন্দী হন ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি। আগের বলেও তিনি ক্যাচ দিয়েছিলেন স্লিপে; তবে আজহার আলী তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন। এরপর শিখর ধাওয়ানকে (২২) ফিরিয়ে তৃতীয় শিকার ধরেন মোহাম্মদ আমির।
ভারত একটু সময়ের জন্যও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে শাদাব খানের। তার করা ১৩ তম ওভারের শেষ বলে যুবরাজ সিংয়ের (২২) বিপক্ষে এলবিডাব্লিউয়ের জোরালো আবেদন ওঠে। আম্পায়ার নট আউট ঘোষণা করলে শাদাবের জোরাজুরিতে রিভিউ নেয় পাকিস্তান। রিভিউতে পরিস্কার এলবিডাব্লিউ হওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। পরের ওভারেই হাসান আলীর বলে ইমাদ ওয়াসিমের তালুবন্দী হন ৪ রান করা ধোনি। ৫৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে যায় বিরাট কোহলির দল!
যাওয়া আসার পালা চলতেই থাকে। দলীয় ৭২ রানে কেদার যাদব (৯) শাদাব খানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলে ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে ভারতের। এরপরই প্রতিরোধ গড়েন দুই অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া এবং রবিন্দ্র জাদেজা। ৩২ বলে ৩ চার এবং ৪ ছক্কায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি হাঁকান হার্দিক। দুজনের ৮০ রানের অষ্টম উইকেট জুটিতে কেবল ব্যবধানটাই কমে। ৪৩ বলে ৭৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে হার্দিক আউট হলে শেষ হয় ভারতের প্রতিরোধ। ১৫৮ রানেই শেষ হয় ভারতের ইনিংস।
এর আগে ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির হাইভোল্টেজ ফাইনালে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত সূচনা করে পাকিস্তান। ১২৮ রানের উদ্বোধনী জুটি উপহার দেন আজহার আলী এবং ফখর জামান। সতীর্থের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হওয়ার আগে ৭১ বলে ৬ চার এবং ১টি ছক্কায় ৫৯ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন আজহার। আজহারের বিদায়ের পর ফখর জামানের নতুন সঙ্গী হন বাবর আজম। এর মধ্যেই ৯২ বলে ৫ চার এবং ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন ফখর।
দলীয় ২০০ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ১১৪ রান করা ফখর জামান রবীন্দ্র জাদেজার তালুবন্দী হন। শেষ হয় ১০৬ বলে ১২ চার এবং ৩ ছক্কার দারুণ এক ইনিংস। ভাঙে দ্বিতীয় উইকেটে ৭২ রানের জুটি। তৃতীয় উইকেটেও জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন বাবর এবং শোয়েব মালিক। তবে বাবর আজম ৪৬ রান করে আউট হয়ে গেলে ভাঙে ৪৭ রানের এই জুটি। শোয়েব মালিকও ১২ রান করে ভুবনেশ্বর কুমারের শিকার হন। এরপর ৫ম উইকেটে মোহাম্মদ হাফিজ এবং ইমাদ ওয়াসিমের অবিচ্ছিন্ন ৭১ রানের জুটিতে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রান তোলে পাকিস্তান। ৫৭ রানে হাফিজ এবং ইমাদ ওয়াসিম ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতের হয়ে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমার, হার্দিক পান্ডিয়া এবং কেদার যাদব।