৩৫তম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের বলে দুই রান নিতেই স্কোরকার্ড জানিয়ে দিল কথাটি। জিততে হলে বাংলাদেশের দরকার আর ৯৮ রান! অর্থাৎ জয় থেকে মাত্র দুই অঙ্ক দূরত্বে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, হাতে ৬ উইকেট। ইনিংসের ১২তম ওভারে এমন কিছুর ভবিষ্যদ্বাণী করলে নির্ঘাত বোকা বনতে হতো! কিন্তু রেকর্ড গড়া এক জুটিতেই প্রায় অসম্ভব কাজ করে দেখালেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। আরও দেখিয়েছেন, কীভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। বিরুদ্ধ স্রোতেও হাল ছেড়ে না দিয়ে কীভাবে শেষ বিন্দু দিয়ে লড়তে হয়।
অ্যাডাম মিলনের গতিময় বলের লাইন মিস করে যখন বোল্ড হয়েছেন মুশফিকুর রহিম, বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩৩। ২৬৫ তাড়া করতে নেমে ৩৩ রানেই ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের। ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কত রানে অলআউট হবে মাশরাফিরা, সে অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। শঙ্কা ছিল এক শর নিচে অলআউট হওয়ারও। কিন্তু বড় উপলক্ষেই তো জ্বলে ওঠেন বড় খেলোয়াড়েরা।
একদিকে মাহমুদউল্লাহ, যিনি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন অপরাজিত সেঞ্চুরি। কদিন আগে আয়ারল্যান্ডেও কিউইদের পেয়ে ব্যাটে শান দিয়ে রেখেছেন। এক ম্যাচে করেছেন ফিফটি, অন্য ম্যাচে অপরাজিত ৪৬ রানে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। অন্যদিকে সাকিব, যিনি নিউজিল্যান্ডকে পেলেই যেন নিজেকে ফিরে পান সব সময়। টেস্টে ম্যাচ জেতানো বোলার হয়ে ওঠা, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক হওয়া—সবই যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই করেছেন সাকিব।
দুজনেরই প্রিয় প্রতিপক্ষ। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমি ফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে তাই জ্বলে উঠলেন দুজন। ভয়ংকর কিছু মুহূর্ত পাড় করলেন ঠান্ডা মাথায়। তারপর প্রতি আক্রমণে গেলেন দুজন। বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন এটা বলা ভুল হবে। কিন্তু যখনই চেপে বসতে চেয়েছে নিউজিল্যান্ডের বোলিং তখনই কোনো না কোনো ভাবে চাপমুক্ত করেছেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। তাতেই আড়ালে চলে গেল টিম সাউদির সে আগুন ঝরানো স্পেল, সে স্পেলে বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের।
ওভাবে খেলতে খেলতেই জুটিতে দেড় শ করে ফেললেন দুজন। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটিটা এত দিন ছিল মুশফিক ও সাকিবের। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪৮ রান করেছিলেন এ দুজন। সেটা নিজের কাছেই রেখেছেন সাকিব, তবে শুধু সঙ্গী বদলে নিয়েছেন।
তবে ৪২তম ওভারে পঞ্চম উইকেটের গন্ডিকেও টপকে গেছেন এ দুজন। তৃতীয় বলে স্যান্টনারকে মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিলেন মাহমুদউল্লাহ। জুটিতে ১৭৯ রান হয়ে গেল সাকিব-মাহমুদউল্লাহর। ওয়ানডেতে যে কোনো উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি ছিল ১৭৮ রানের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে তামিম ইকবালকে সঙ্গী করে এই রান নিয়েছিলেন আজই আরেক রেকর্ড হাতছাড়া করা মুশফিক।
৪৫তম ওভারে অবশ্য সেসব কিছুই ছাড়িয়ে গেলেন দুজন। ওয়ানডেতে কোনো জুটিতে দুই শ রান যে সম্ভব বাংলাদেশের পক্ষে সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরির পর সাকিব (১১৪) আউট হয়ে গেলেও ততক্ষণে বাংলাদেশের জয় নিয়ে আর কোনো সন্দেহ ছিল না। ২২৪ রানের ওই জুটির পর যে নিউজিল্যান্ডের আর কোনো আশা ছিল না ম্যাচের রং বদলানোর। মাহমুদউল্লাহ (১০২*) তো ছিলেনই বাকি কাজটা সারার জন্য!