চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সুইমিং পুলের জন্য নির্ধারিত স্থানের বেষ্টনি ভাঙতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে এই সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এতে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। তার নাম মো. শরীফ (২৭)। বাড়ি নগরীর লালখান বাজার চানমারি রোডে। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থক।
মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে অন্তত ১৫ জন আহত হন। ছাত্রলীগ নগরীর অন্তত ছয়টি স্থানে সড়ক অবরোধ করে। সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে ৫ পুলিশ আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ কর্মীরা অন্তত ১৫ থেকে ২০টি যানবাহন এবং ১০টি দোকান ভাংচুর করেন। ছাত্রলীগের হামলায় স্থানীয় পত্রিকা পূর্বকোণের আলোকচিত্রী শরীফ চৌধুরী আহত হন।
মাত্র একদিন আগে সোমবার নগরীর শহীদ মিনারে মুজিবনগর দিবস পালন করতে গিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ঘোষণা করেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।’ ওইসময় তিনি সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাত উঁচিয়ে ধরেন এবং দুজনে প্রকাশ্যে আলিঙ্গনও করেন। আর পরেরদিনই মহিউদ্দিনের সমর্থকরা আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণের জন্য দেওয়া টিনের বেড়া ভাঙতে যান। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) এই সুইমিং পুল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আ জ ম নাছির উদ্দীন এই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক। মূলত তিনিই এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
গত ১০ এপ্রিল নগরীর লালদীঘি মাঠে এক জনসভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল তৈরির সমালোচনা করেন। তিনি ওই সুইমিং পুল তৈরির বেস্টনি ভেঙে দিতে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) না ভাঙলে ওই বেস্টনি ভেঙে ফেলার জন্য তিনি ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওইদিন তিনি মেয়র আ জ ম নাছিরের ব্যাপক সমালোচনা করেন এবং তাকে খুনি আখ্যা দেন। এরপর একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন।
অন্যদিকে সুইমিং পুলের বেস্টনি ভাঙতে গত রোববার ছাত্রলীগ ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয়। মঙ্গলবার সেই সময়সীমা শেষ হয়। বিকেল চারটার দিকে সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরা নগরীর কাজীর দেউরি মোড়ে মানববন্ধন করেন। ১৫ মিনিটের মানববন্ধন থেষে তারা সুইমিং পুলের জন্য নির্ধারিত স্থানে দেওয়া টিনের বেড়া ভাঙতে যান। আটটি টিন সরিয়ে ফেলার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পুলিশ ছাত্রলীগকে বাধা দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেন। ফলে সেখানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে। তারা ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে সেখানে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সংঘর্ষের খবর মুহূর্তের মধ্যেই সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর ওয়াসা মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমের সমর্থকরা আ জ ম নাছিরের পক্ষ নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকদের ধাওয়া করে। সেখানে উভয়পক্ষ গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। মাসুমের লোকজন শরীফ নামের এক মহিউদ্দিন সমর্থককে ধরে নিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। আশংকাজনক অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতে তিনি মারা যান। আ জ ম নাছিরের সমর্থকরা লাভ লেইন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে।
অন্যদিকে মহিউদ্দিনের সমর্থকরা কাজীর দেউরি, আলমাস, ওয়াসা, চকবাজার ও গোলপাহাড় মোড়ে ব্যারিকেড দেয়। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার আগে ঘরমুখো মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে।
আহত নগর ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক লিটন চৌধুরী রিংকু আমাদের সময়কে জানান, সুইমপুল নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের (সিডিএ) অনুমতি নেই। আর এই আউটার স্টেড়িয়ামে খেলেই চট্টগ্রাম থেকে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, নাফিজ ইকবাল ও আজকের তামিম ইকবাল সৃষ্টি হয়েছেন। এখানে সুইমপুল নির্মাণ করে ছেলেদের খেলার মাঠকে ছোট করা হচ্ছে। সেটা আমরা হতে দিতে পারিনা। আমরা এই গণবিরোধী সুইমিং পুল নির্মাণ করতে দেব না।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নরুল আজিম রনি আমাদের সময়কে বলেন, খেলার মাঠে সুইমিং পুল নির্মাণ বন্ধ করতে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেধে দিয়েছিলাম। এর অংশ হিসেবে আমার শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়েছে এবং তাদের লাঠিপেটা করেছে। এতে নগর ছাত্রলীগের পদধারি তিন ছাত্রলীগ নেতা গুরুতর আহত হয়েছে। তিনি বলেন, যতদিন পযর্ন্ত খেলার মাঠ দখলমুক্ত না হবে, ততদিন এই আন্দোলন চলবে। আমরা কোন অবস্থাতেই খেলার মাঠে সুইমিং পুল হতে দেব না।
নগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার এসএম মোস্তাইম হোসেন সাংবাদিকদের তাৎক্ষনিকভাবে জানান, ইমরান আহমেদ ইমু ও নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে রাস্তায় প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে তারা মানব বন্ধন শুরু করে। মানববন্ধন থেকে তারা সুইমিং পুলের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন পুলিশের বাধা অমান্য করে ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারা পুলিশের ওপর ইট ছুড়ে মারলে আমরা তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিই। এসময় পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। সে অনুসারে মামলা করা হবে। এই ঘটনায় কেউ যদি উস্কানি দিয়ে থাকে, তকে সেই উস্কানিদাতাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।