গুলশানের রেস্তোরাঁয় জিম্মির ঘটনায় ভেতরে আটকে থাকা একজনের সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের মুঠোফোনে খুদে বার্তার আদান-প্রদান হয়। জঙ্গিদের হাতে জিম্মি থাকা ওই ব্যক্তির সঙ্গে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে একটা থেকে আজ শনিবার সকাল সোয়া ছয়টা পর্যন্ত যোগাযোগ রাখতে পারেন তাঁর ভাই। এরপর থেকে ওই ব্যক্তি রেস্তোরাঁর বাইরে অপেক্ষমাণ তাঁর ভাইয়ের খুদে বার্তার আর কোনো জবাব দেননি।
বাইরে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষমাণ ভাই গোপাল রায় প্রথম আলোকে তাঁদের মধ্যে খুদে বার্তা আদান-প্রদানের তথ্য জানিয়েছেন। তিতুমীর কলেজের বিএর শিক্ষার্থী গোপাল জানান, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় কিচেনে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করেন তাঁর বড় ভাই সমীর রায়। ভাগনে রিন্টু কীর্তনীয়া (১৬) একই রেস্তোরাঁয় কাজ করে। তাঁরা দুজন একই সঙ্গে ভেতরে একটি টয়লেটে জিম্মি হন। তবে সকালে রিন্টুকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও সমীরের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাচ্ছেন না তাঁরা। রাত সাড়ে নয়টায় গোপাল প্রথম ফোন দেন সমীরকে। সমীর ফোন ধরেনি। গোপাল দ্বিতীয়বার ফোন দিলেও সমীর তা ধরেননি। রাত ১টা ৪৪ মিনিটে সমীর গোপালের পাঠানো খুদে বার্তার প্রথম জবাব দেন।
গোপাল ও সমীরের আদান-প্রদান করা খুদে বার্তা থেকে দেখা যায়,
গোপাল: কী অবস্থায় আছেন?
সমীর: আমি ও ভাগনে ভালো আছি। ওরা লক করে দিছে দরজা বাইরে থেকে।
গোপাল: র্যাব সব দেখতেছে, আপনাদের যাতে ক্ষতি না হয়, তাই কিছু করতেছে না।
সমীর: ছোট সুমন জানে আমাদের টয়লেট কোথায়। আমরা সেখানে। পারলে ওয়াল ভাঙ্গো।
গোপাল: ফেসবুক অন করেন। প্লিজ গিভ মি ওয়ান পিকচার।
রাত ২টা ১৫ মিনিটে গোপাল আবার খুদে বার্তা পাঠান।
গোপাল: ওরা কি জানে আপনারা টয়লেটে?
সমীর: হ্যাঁ।
গোপাল: আপনাদের কিছু বলে কি?
সমীর: ঠিক আছি। আমাদের কাছে কিছু চায় না। আমাদের তালা মেরে রেখেছে।
গোপাল: আপনারা টয়লেটে এক সাইড হয়ে বসেন। ওরা ফায়ার করতে পারে।
সমীর: হ্যাঁ, আছি।
ভোর ৪টা ৪৮ মিনিটে গোপাল আবার বার্তা পাঠান সমীরকে।
গোপাল: দাদা, এখন কেমন?
সমীর: এই তো।
ভোর ৫টা ২৮ মিনিটে গোপাল আবারও বার্তা পাঠান।
গোপাল: আমরা সবাই আশীর্বাদ করি সুস্থভাবে আমাদের কাছে ফিরে আসেন।
সমীর: হ্যাঁ, ভাই।
ভোর পাঁচটা ৪৮ মিনিটে সমীর গোপালকে বার্তা পাঠান।
সমীর: এখন হয়তো র্যাব ঢুকবে। তোমরা তাড়াতাড়ি টয়লেটে আসো। এখানে খুব কষ্টে আছি।
গোপাল: আমি এক মেজরকে বলেছি।
সকাল ৬টা ২২ মিনিটে গোপাল বার্তা পাঠান। ‘প্লিজ বলেন এখন কেমন আছেন?’ তবে সমীর ওই বার্তার কোনো জবাব দেননি।
গোপাল জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জোগাড়পাড় গ্রামে। তাঁরা দুই ভাই, তিন বোন। গোপাল নিজেও গুলশানের ৫০ নম্বর সড়কে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন।
ঘটনাস্থলে দেখা যায় সমীরের দু্ই বোন মিতালি ওঝা ও পুতুল পান্ডে ‘আমার ভাই কোথায়? আমার ভাইকে ফিরিয়ে দাও’ বলে আহাজারি করছেন। সকালে ভাগনে রিন্টুকে রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে সমীরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রিন্টুও মামার কোনো খোঁজ দিতে পারেননি।