নেইমার মস্তিষ্ক হলে ডি মারিয়া ফুসফুস!

SHARE

তাজ্জব হওয়ার মতো ব্যাপার! সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গোটা দুনিয়া যে দুটো দলকে চিহ্নিত করেছিল, কাকতালীয়ভাবে, পর পর দুটি খেলায় ওই দুটি দলের দুই স্তম্ভ কি না চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল৷ কে, কাকে, কীভাবে মারল- তা নিয়ে অকারণ শক্তিক্ষয় করে চলেছে ফুটবল-পাগলরা৷

এখন আলোচনা করে কি নেইমার বা ডি মারিয়াকে সুস্হ করে তোলা সম্ভব হবে? কিন্তু আলোচনা চলছে, আসলে দুই প্রিয় দলের দুই প্রিয় তারকা ছিটকে যাওয়ায় দুটো দলই কিন্তু নড়বড়ে হয়ে গেছে বলে মনে করছে তাদের সমর্থকেরা৷ এটা মেনে নিতে হবে যে, নেইমারের অবর্তমানে ব্রাজিল যেমন অনেকটাই অকেজো হয়ে পড়বে, তেমনি ডি মারিয়ার অনুপস্হিতিতে আর্জেন্টিনাও খানিকটা পিছিয়ে থাকবে৷ থাকতেই হবে৷ কারণ, ডি মারিয়া ছিল আর্জেন্টিনা দলের নিউক্লিয়াস৷ বাঁদিক অথবা ডানদিক, অথবা ইনসাইড ফরোয়ার্ড হিসেবে যে অক্লাম্ত পরিশ্রম ডি মারিয়া করছিল, তা তো সবাই এবার বিশ্বকাপে দেখেছেন৷ চমৎকার বল কন্ট্রোল, ছিপছিপে শরীরে গতি, চমৎকার ফুটবল-মস্তিষ্ক– মেসির ছায়ায় থাকতে হয় বলে ডি মারিয়াকে কিন্তু সে ভাবে, আমরাও কৃতিত্ব দিইনি৷ এবার, হল্যান্ডের বিরুদ্ধে বোঝা যাবে ডি মারিয়া কতটা জায়গা জুড়ে দৌড়োদৌড়ি করত৷ নেইমার যদি হয় মস্তিষ্ক, তা হলে ডি মারিয়া হল ফুসফুস!image_89583_0

মনে হয়, মাসচেরানোকে দিয়ে খানিকটা ফাঁক ভরাট করতে চাইবেন আর্জেন্টিনার কোচ সাবেয়া৷ মানেটা বোঝা গেল? মাসচেরানো তো আর্জেন্টিনাকে টানছে৷ যেহেতু ওর পায়ে আক্রমণ করার প্রবণতা আছে, তাই, ওকে ডানপ্রাম্ত থেকে আরও বেশি ওপরে ওঠার পরামর্শ দিতে পারেন আর্জেন্টিনার কোচ৷ যতই ঘিরে রাখা হোক না কেন মেসিকে, ও বেরবেই৷ কিন্তু বেরনোর পথে, ওয়াল খেলার জন্য বা মেসির হিল বোঝার জন্য তো এমন একজনকে চাই, যে এই কাজটা প্র্যাকটিসেও করেছে৷ ডি মারিয়া না থাকায়, মাসচেরানোকে, খানিকটা হলেও, এ কাজে ব্যবহার করা যেতেই পারে৷

হিগুয়েন গোল পেয়েছে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে৷ ফুটবলের সঙ্গে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে, তারা জানে, গোল পাওয়ার পর কিন্তু গোলের খিদে যায় বেড়ে৷ হিগুয়েন যেহেতু খুব বেশি গোল করেনি আম্তর্জাতিক ফুটবলে, তাই ও কিন্তু গোল পাওয়ার জন্য হল্যান্ড ডিফেন্সে বার বার ছোঁকছোঁক করতে করতে পৌঁছে যাবেই৷ এটাও সবাই জানেন, হল্যান্ডের কোচ লুই ভ্যান গাল অম্তত দু-থেকে তিন জন ফুটবলারকে মেসির পেছনে লাগিয়ে দেবেন৷ তখনই তো কাউন্টার অ্যাটাকটা তৈরি করতে হবে৷ হল্যান্ড কিন্তু ওপেন ফুটবলই খেলবে৷ সঙ্গে থাকবে দ্রুত গতি৷ এটা সামাল দেওয়ার জন্য আর্জেন্টিনার কোচ কিন্তু মাঝমাঠের পেছনে একজন হাইন্ড সুইপার রাখতে পারেন৷ যে কি না মিডফিল্ড এবং ডিফেন্সিভ থার্ডের মাঝখানে যে ফাঁকফোকর তৈরি হবে বা ছিটকে আসবে লুজ বল, সেগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ায় হবে তার ভূমিকা৷ জাবালেতাকে এই ভূমিকায় খেলানো যেত৷ কিন্তু, তাকে তো আর রক্ষণ থেকে সরানো যাবে না৷ তাই গাগো বা পেরেজের মধ্যে একজনকে ওই ভূমিকায় ভাবা যেতেই পারে৷ এখন যে উচ্চতায় বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলতে হবে, তাতে কিন্তু গোটা মাঠেই দৌড়ে বেড়াতে হবে অম্তত ৯ জন ফুটবলারকে৷ খুব বেশি আলট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবলের দিকে নজর দিলে হল্যান্ড যে মেসিদের ঘাড়ে উঠে পড়বে, সেটা আমাদের চেয়ে বেশি জানেন সাবেয়া৷ এটুকু বলা যায়, ডি মারিয়া চোট পেয়ে যাওয়ায়, হল্যান্ডের সুবিধাই হবে৷ যেমন সুবিধা হবে জার্মানির, নেইমার না থাকায়৷

প্রবল জাতীয়তাবোধ থেকে যদি ব্রাজিল জেগে না ওঠে, তা হলে অবাক হব৷ খুব ভালো খবর, নেইমারের জন্য এবার বিশ্বকাপ জিততে চাইছে অস্কার, পাওলিনহোরা৷ ওরা সবাই এটাও জানে, ৬২ সালে পেলে চোট পাওয়ার পর গ্যারিঞ্চা নামের এক মহানায়ক একার কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে ব্রাজিলকে সেবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিল৷ স্কোলারির হাতে কোনো গ্যারিঞ্চা নেই ঠিকই৷ কিন্তু, কে বলতে পারে, উগ্র জাতীয়তাবাদের ঢেউয়ে স্কোলারির হাতের সামনে তেমন কোনো পরিত্রাতা উঠে আসবে না? আদতে তো খেলাটার নাম ফুটবল৷ যেভাবেই হোক, জেতার জন্য কখন যে কেউ তারা থেকে মহাতারা হয়ে যায়, তা কে বলতে পারে৷ তবে, এটাও উল্লেখ করতে হবে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলকে কিন্তু ছিটকে দিতেই পারে হল্যান্ড এবং জার্মানি৷ দুটো সেমিফাইনালই দেখতে বসব এই প্রস্তুতি নিয়ে যে, ফাইনাল দেখছি! – ওয়েবসাইট।