কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে না এমন ঘোষণা দিয়েও শেষ মুহূর্তে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে সুযোগটি বহাল রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও তিনি এটাকে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সরল পথ হিসেবে দাবি করছেন; কিন্তু অর্থনীতিবিদরা মনে করেন বিশেষ মহলের চাপেই অর্থমন্ত্রী কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি রাখতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের মতে, কার্যকরভাবে অর্থনীতিতে কালোটাকার পরিমাণ কমাতে, আর্থিক খাতের লেনদেনে সমন্বয় ও নজরদারি বাড়ানো দরকার। খবর সময় টেলিভিশনের।
অর্থনীতিতে হাতবদল বা লেনদেনের সবটুকু অর্থই জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে এমন আশা করাটা যেমন বাস্তবসম্মত নয়, তেমনি মোট দেশজ উৎপাদনের অর্ধেক বা তারও বেশি রয়ে যাবে অপ্রদর্শিত এটাকেও যৌক্তিক মনে করেন না অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, অপ্রদর্শিত বা কালোটাকা, নামে যাই হোক স্বাধীনতার পর ১৮ বার সুযোগ দিয়ে মূলধারার অর্থনীতিতে এসেছে প্রায় সাড়ে তের হাজার কোটি টাকা, যা থেকে রাজস্ব এসেছে প্রায় এক হাজার সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা।
জমি, ফ্ল্যাট ও ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ ছিল কালো টাকা থেকে সাদা টাকার রূপান্তরে। বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সুযোগটি না রাখলেও মূল বাজেটে তা বহাল রাখা হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আবাসন খাতে প্রতি বর্গমিটারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদান করলে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগ মেনে নেয়ার বিধানটি কর প্রদান পদ্ধতির সরলীকরণ মাত্র।’
বারবার বলেও অর্থমন্ত্রী নিজেই তার কথা রাখলেন না, যা সরকারের অন্যান্য প্রতিশ্রুতির প্রতিও জনগণের আস্থা কমাবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বাশার বলেন, ‘কোথাও থেকে চাপের সম্মুখীন হয়েছেন বলেই তিনি একটি নমনীয় অবস্থায় চলে এসেছেন। বাংলাদেশে কালো টাকা তৈরি হওয়ার যে প্রক্রিয়াটা সেটাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ আমি যদি জানি যে, একটা সময় কালো টাকা সাদা করতে পারবো তাহলে বৈধ হারে কেন আমি ট্যাক্স দিতে যাব।’
অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ব্যক্তির যতো লেনদেন, তার সম্পদের যে লেনদেন এই সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত যে সমস্ত বড়ো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়ে থাকে সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের মধ্যে একটা সমন্বয় দরকার এবং সে সমন্বয়ের উপর সরকারের একটি পর্যবেক্ষণ কাঠামো থাকা দরকার। তখন হয়তো সরকার আশা করতে পারেন যে এগুলোকে কিভাবে সাদাতে রূপান্তরিত করা যাবে।’
শুধু কালোটাকা সাদা করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আবাসন খাতকে চাঙ্গা করা যাবে না, অর্থনীতিবিদরা বলছেন এজন্য দরকার মধ্যবিত্তের জন্য সহজ শর্তের ব্যাংক ঋণ, ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ফ্ল্যাট তৈরি করা।