পৃথিবীর দুর্গমতম, উচ্চতম, শীতলতম, শুষ্কতম তথা নির্জনতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। এখানেই দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাতাস চলাচল করে। তবে এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু অজানা তথ্য যা এই মহাদেশ সম্পর্কে নতুন করে ভাবায়।
১. অ্যান্টার্কটিকায় কাজ করতে গেলে শরীর থেকে বাদ দিতে হবে আক্কেল দাঁত ও অ্যাপেনডিক্স। এই মহাদেশে শল্যচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সুতরাং এখানে আসার আগেই ওই দু’টির মায়া কাটিয়ে আসতে হবে।
২. বিশ্বের শুষ্কতম স্থান অ্যান্টার্কটিকা। এই মহাদেশের ড্রাই ভ্যালি অঞ্চল পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে শুকনো এলাকা বলে চিহ্নিত।
৩. বেশ কিছু দেশের মতো (যেমন অস্ট্রেলিয়ার .au বা জার্মানির .de অথবা ভারতের .in) অ্যান্টার্কটিকারও নিজস্ব ডোমেইন রয়েছে। তুষার রাজ্যের ডোমেইন হলো .aq।
৪. ৫.৩ কোটি বছর আগে অ্যান্টার্কটিকার আবহাওয়া যথেষ্ট উষ্ণ ছিল। সেই সময় এখানকার গড় তাপমান ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে সমুদ্রের তীর বরাবর পাম গাছের সারি দেখা যেত।
৫. বিশ্বখ্যাত মার্কিন হেভি মেটাল রকব্যান্ড মেট্যালিকা অ্যান্টার্কটিকায় পারফর্ম করেছিল। তাদের জনপ্রিয় গান Freeze ‘Em All-এর শ্যুটিং হয়েছিল চিরতুষারের দেশে। উল্লেখ্য, মাত্র এক বছরে বিশ্বের সাতটি মহাদেশে অনুষ্ঠান করে নজির গড়ে মেট্যালিকা।
৬. অ্যান্টার্কটিকাতেও রয়েছে পরমাণু চুল্লি। ১৯৬২ সাল থেকে এই মহাদেশের বুকে কাজ করে চলেছে মার্কিন পরমাণু চুল্লি ম্যাকমার্ডো স্টেশন।
৭. অ্যান্টার্কটিকার নিজস্ব দমকল বিভাগ রয়েছে। ম্যাকমার্ডো স্টেশনের ভিতরেই রয়েছে এই দপ্তর। আগুন নেভাতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং পেশাদার দমকলকর্মীরা এখানে মজুত।
৮. চরম আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়া যায় ১১৫০ প্রজাতির ছত্রাক। এদের মধ্যে বেশ কিছু প্রজাতি রীতিমতো নজরকাড়া। আসলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়াতেও নিজেদের অনায়াসে খাপ খাইয়ে নিতে পারে ছত্রাক।
৯. বিশ্বের প্রতিটি টাইমজোন পাওয়া যায় অ্যান্টার্কটিকায়। পৃথিবীর দুই মেরুতে এসে মিলেছে সময় বিভাজনকারী দ্রাঘিমা রেখা। স্বাভাবিকভাবেই এখানে রয়েছে দুনিয়ার সমস্ত টাইমজোনের উপস্থিতি।
১০. চায়নায় যেমন হায়না মেলে না তেমনই অ্যান্টার্কটিকায় পোলার বিয়ার অর্থাৎ মেরু-ভালুক বাস করে না। এদের বসতি আর্কটিক অঞ্চল অথবা কানাডায়।
১১. অ্যান্টার্কটিকায় রয়েছে বিশ্বের দক্ষিণতম পানশালাটি। শীতলতম অবস্থানে একটু উষ্ণ হতে চাইলে ভার্নার্ডস্কাই গবেষণা কেন্দ্র লাগোয়া এই বার-ই ভরসা।
১২. পৃথিবীর বুকে শীতলতম তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয়েছিল অ্যান্টার্কটিকাতেই। ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই অ্যান্টার্কটিকার ভস্তক স্টেশনে রেকর্ড হওয়া তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১২৮.৫৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ মাইনাস ৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৩. অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর পঞ্চম বিশালতম মহাদেশ। এর মোট এলাকা ১.৪ কোটি বর্গকিলোমিটার।
১৪. অ্যান্টার্কটিকার ১৪.৯৯ শতাংশ অঞ্চল বরফে মোড়া। একাধিক হিমবাহের নীচে চাপা পড়েছে মহাদেশের জমি। তুষারের এই স্তরকে বলা হয় বরফ চাদর।
১৫. অ্যান্টার্কটিকার কঠিন বরফ চাদরের গড়ে প্রায় ১.৬ কিলোমিটার পুরু। পৃথিবীর মিষ্টি পানি ভাণ্ডারের প্রায় ৭০ শতাংশই অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত।
১৬. অ্যান্টার্কটিকার মাঝে রয়েছে ট্র্যান্সঅ্যান্টার্কটিক পর্বতশ্রেণী যা মহাদেশকে পূর্ব ও পশ্চিম অংশে ভাগ করেছে। কেপ অ্যাডেয়ার থেকে কোটসল্যান্ড পর্যন্ত এই পর্বতশ্রেণির মোট বিস্তৃতি ৩৫০০ কিলোমিটার।
১৭. ১৮২০ সালে আবিষ্কার হওয়ার আগে পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকাকে দ্বীপপুঞ্জ হিসেবে মনে করা হতো।
১৮. নরওয়ের বাসিন্দা রোয়াল্ড আমুন্ডসেন প্রথম মানুষ যিনি দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছেছিলেন। বৃটিশ অভিযাত্রী রবার্ট স্কটকে পিছনে ফেলে এই মহাদেশে তিনি পৌঁছান ১৯১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর।
১৯. ১৯৫৯ সালে ১২টি দেশ অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি সই করে। চুক্তি অনুসারে, এই মহাদেশকে শান্তিপূর্ণ গবেষণামূলক কাজের জন্য উৎসর্গ করা হয়। বর্তমানে মোট ৪৮টি দেশ এই চুক্তির শরিক।
২০. ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যান্টার্কটিকায় জন্মগ্রহণ করে প্রথম মানবশিশু এমিলিও মার্কো পামা। ঘটনা ঘিরে পরবর্তীকালে তৈরি হয় নানা বিতর্ক। অভিযোগ, তুষারভূমির একাংশ দখল করার উদ্দেশে জেনেশুনে এক সন্তানসম্ভবাকে অ্যান্টার্কটিকায় পাঠিয়েছিল আর্জেন্টিনা।