‘জিয়া লড়াই না করে চিরুনি দিয়ে ঘন ঘন চুল ঠিক করতেন’

SHARE

gaffar n‘জিয়াউর রহমান কখনোই যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করেননি। তিনি শুধু পকেট থেকে চিরুনি বের করে চুল ঠিক করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মেজর জিয়ার সঙ্গে একমাস থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তখন থেকেই আমি জিয়াকে ঘৃণা করি।’

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় যুক্তরাষ্ট্র সফররত কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

প্রধান অতিথি  আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, “মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবর্তন করা যায়। একজন মুসলমান তার ধর্ম পরিবর্তন করে খ্রিস্টান হতে পারেন। কিন্তু জাতীয়তা পরিবর্তন করা যায় না।”

তিনি বলেন, “বাঙালিরা বরাবরই লড়াকু এবং বাংলা ভাষা অসাম্প্রদায়িক।”

তিনি বলেন, “মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষার প্রসার না ঘটলে জামায়াতসহ ইসলামী মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অসম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।  বর্তমান সরকারের দোষ-ত্রুটি আছে। তারপরও বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। দুর্নীতি রোধ করতে পারলে এবং শিক্ষা ও অর্থনীতিতে আরো উন্নয়ন ঘটালে দেশ একটি ঈর্ষণীয় গন্তব্যে পৌঁছুতে পারবে।  বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্রও নানান রূপে দেখা গেছে। মোদ্দা কথা-দেশ ও জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণে সরকার সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারছে কিনা তা দেখা। যতদিন আমাদের ভাষা থাকবে,  রবীন্দ্রনাথ থাকবেন এবং বঙ্গবন্ধু থাকবেন, ততদিন বাংলাদেশকে তালেবানরা ধ্বংস করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ও বাংলা ভাষাই বাংলাদেশকে রক্ষা করবে।”

তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিকল্প নেতা সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে বলেন,  “শেখ হাসিনার পর এই দলের নেতৃত্ব কে দেবেন এটা নির্ধারণ করা হয়নি।এটি নির্ধারণ না হলে বিরোধীরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চলে যেতে পারে।”

তিনি বর্তমান বিরোধী দলকে প্রয়োজনে সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্থ বিরোধী দল তৈরি কঠিন বলেও মন্তব্য করেন গাফফার চৌধুরী।

আব্দুল গাফফার চৌধুরী বক্তব্যের শুরুতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি,  এর ব্যবহার, হাজার বছর আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা বর্জনের ইতিকথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানি শাসকরাই শুধু নয়, অনেক আগে ভারত বর্ষের ব্রাহ্মণরা বাংলা ভাষাকে দমন করার চেষ্টা করেছিল। বৌদ্ধরা চর্যাপদকে রক্ষা করেছিল। ব্রাহ্মণদের নির্যাতনে বৌদ্ধরা বিভিন্ন সময়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। বৃটিশ আমলেও বাংলা ভাষার ব্যবহারকে পরিহার করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “অনেক ভাষার শব্দ এসে মিশে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। কাজী নজরুল ইসলাম তার অনেক কবিতায় আরবি ও ফার্সি শব্দ ব্যবহার করেছেন। এজন্য তাকে সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি রবীন্দ্রনাথও নজরুলের সমালোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ চলিত বাংলার চেয়ে সাধু বাংলার প্রতি সমর্থন করেছিলেন।”

তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের মুখের কথাই আজ বাংলা ভাষার সম্ভার। এই ভাষা বাংলাদেশ থেকে কখনও হারিয়ে যাবে না।”

বাংলাদেশে ধর্মীয় উন্মাদনা ও আচার-আচরণ প্রসঙ্গে গাফফার চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে একটা সময় ইরানের ধর্মীয় আচার-আচরণের প্রভাব ছিল। সম্প্রতিকালে সৌদী আরবের আচার-আচরণ বইছে। আগে খোদা হাফেজ বলতাম,  এখন বলা হয় আল্লাহ হাফেজ। নারীদের উৎসাহিত করা হয় হিজাব পড়তে। হিজাব একটি আরব সংস্কৃতির পোশাক, বাঙালির নয়।”

তিনি বলেন, “বাঙালি নারীরা শাড়ি পড়বেন, কপালে টিপ দেবেন, এটা আমাদের সংস্কৃতি। মওদুদীরা এর ঘোরবিরোধী। নাম রাখার ক্ষেত্রেও তারা আরবি নাম চাপিয়ে দিচ্ছে। বাংলা নামকে বলা হচ্ছে হিন্দু নাম। এসব কথা ছড়াচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে কম জানা অল্পশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মোল্লা-ইমামরা।”

তিনি আরো বলেন, “পৃথিবীর মানচিত্র থেকে পাকিস্তান ও ইসরাইল নামক দু’টি রাষ্ট্র থাকবে না। আমেরিকার শক্তি কমলে এ দু’টি রাষ্ট্র টিকতে পারবে না।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর আর কিছু থাকে না। মেজর জিয়া একটি বাণী পাঠ করলেই স্বাধীনতার ঘোষক হয়ে যেতে পারেন না।”

অনুষ্ঠানে আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ সভাপতি আব্দুল মুসাব্বির, মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবীসহ সাংবাদিক, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনীতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। -বাংলা প্রেস।