একটা বয়সের পর যে কারও জন্যই কোলেস্টেরল দুশ্চিন্তার কারণ। রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে বাড়ে স্ট্রোকের সম্ভাবনাও। কিন্তু, কোলেস্টেরলকে খাদ্যতালিকা থেকে পুরোপুরি বাদও দিতে পারবেন না। কারণ, রক্তের সঙ্গে মিশে থাকা এই চর্বি হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, মেমব্রেনের ক্রিয়াকলাপেও কোলেস্টেরলের একটা ভূমিকা থেকে যায়। তাই, যেটা করতে হবে, ঠিকঠাক খাবার বেছে নেওয়া। কোলেস্টেরল থাকবে, অথচ সেটা হাইকোলেস্টেরল হবে না। এবং সেটার জন্য নিম্নে উল্লিখিত ১০টি খাবার যতটা সম্ভব আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
ডিমের কুসুম: যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি রয়েছে, বা কোলেস্টেরলের ভয়ে রয়েছেন, আগে ডিমের কুসুমটি বাদ দিন। তবে, ডিমের সাদা অংশটি নির্ভাবনায় খেতে পারেন। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একটা ডিমের শুধু কুসুমেই আপনি পাবেন ২১০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। যেখানে গোটা ডিম খেলে শরীরে ২১২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল যাবে। এ থেকেই পরিষ্কার, ডিমের কুসুমেই রয়েছে অধিক পরিমাণে কোলেস্টেরল। সুতরাং, কোনো দিন সকালে যদি প্রাতঃরাশে ডিম খান, তা হলে চেষ্টা করুন সারাদিনে বার্গার বা চিজ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলার।
লিভার: ডিমের কুসুমের মতোই মুরগির লিভারে প্রভূত পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে। শুধু মুরগির লিভার বলে নয়, খাসির লিভারেও হাই কোলেস্টেরল রয়েছে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০০ গ্রাম লিভারে ৫৪৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল আছে। রোজ যতটা দরকার, তার থেকে ১৮৮ শতাংশ বেশি। আমেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশানের দাবি, একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক ৩০০ মিলিগ্রামের কম কোলেস্টেরলের প্রয়োজন।
মাখন: ভারতীয়রা মাখন খেতে কিন্তু খুবই ভালোবাসেন। সকালে পাঁউরুটিতে মাখন মাখিয়ে খাওয়া তো রয়েছেই। এ ছাড়াও কেক থেকে পরোটা, কোনো কিছুতেই মাখন বাদ নেই। ১০০ গ্রামের মাখনে ২১৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল রয়েছে।
চিংড়ি: চিংড়ি মাছের মালাইকারির নাম শুনলে, যতই লালাঝোলা ঝরুক, খাওয়ার সময় সাবধান থাকবেন কিন্তু। ১০০ গ্রাম চিংড়িতে ১৯৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। একটু বড় মাপের একটা চিংড়িতেই থাকে ১১ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। সামুদ্রিক কিছু খাবারও আপনার শরীরের পক্ষে ভালো। কিন্তু কিছু কিছু সি-ফুডে খাবারে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে। তাই চেষ্টা করবেন, যেকোনো সামুদ্রিক খাবার রান্নার আগে একবার গরম পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানিটা ফেলে রান্না করতে। তাতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমবে।
চিকেন: বলা হয় চিকেনে লো ফ্যাট রয়েছে। কিন্তু, এটা নির্ভর করে আপনি কী ভাবে চিকেন রান্না করছেন। দেখা গিয়েছে, একটা মুরগির লেগপিসে কিন্তু আইসক্রিমের তুলনায় বেশি ফ্যাট ও কোলেস্টেরল থাকে।
ফাস্ট ফুড: ফাস্ট ফুড খাওয়া আর কোলেস্টেরল খাওয়া সমার্থক। ডিম থেকে চিজ, কোলেস্টেরলে ভরপুর সবকিছু একসঙ্গে পেয়ে যাবেন ফাস্ট ফুডে। ১০০ গ্রাম পরিমাণ ফাস্ট ফুড খেলে, শরীরে ১৭২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল যাবে। অতএব, রোল-চাউমিন বা চপ-কাটলেট খাওয়ার আগে সাবধান।
চিজ: যারা নিরামিষাশী, তাদের জন্য প্রোটিনের অন্যতম উৎস হলো চিজ। শুধু প্রোটিনই নয়, শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদাও মেটায়। কিন্তু, হলে কী হবে, এই চিজই আবার হাই কোলেস্টেরলেরও আঁতুড়ঘর। ১০০ গ্রাম চিজে থাকে ১২৩ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল।
মাংসের আইটেম: যেকোনো মাংসেই আপনি কোলেস্টেরল পাবেন। সেই কোলেস্টেরলের মাত্রা নির্ভর করবে, আপনি মাংস কী ভাবে রাঁধবেন, তার ওপর। তাই মাংস মেপে খান।
চিজ বার্গার: ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, একটা চিজ বার্গারে কম করে ১৭৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকেই। তাই বার্গার খেলে, চিজ ছাড়া বার্গারের অর্ডার দিন।
আইসক্রিম: জানেন কি, একটা কাপ আইসক্রিমে যে পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে, সেটা হ্যামবার্গারের চেয়ে বেশি? তাই আইসক্রিমের বদলে অন্য কিছু খান। পারলে রোজ ফল খেতে পারেন। ফল খেলে কোলেস্টেরল কমে।