‘ভারতে যৌথ হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইএস-আল কায়দা’

SHARE
is alkaidaআল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) যৌথভাবে ভারতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
রাজনাথ সিংকে উদ্ধৃত করে বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কলকাতার প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।
তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সূত্রে খবর এসেছে, সুকৌশলে পুরনো কর্মপদ্ধতি বদলে এই সংগঠন বিশেষভাবে সন্ত্রাসের জন্য ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে ফেলেছে। এই জিহাদি গোষ্ঠীগুলি সিরিয়া ও ইরাকে বিশেষভাবে সক্রিয়। প্রায় ১৭ হাজার জিহাদি এই গোষ্ঠীগুলিতে যুক্ত হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা এবং উপসাগরীয় এলাকায় এরা সক্রিয়। আল কায়েদার নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে আইএসআইএসের সঙ্গে নিজেদের সংযুক্তি ঘোষণা করেছে। এরপর আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াতে যেমন ওরা ছড়িয়ে পড়েছে; তেমনই ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানেও এরা ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজনাথ সিং বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির কাছে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হওয়ার পর জঙ্গিদের মধ্যে হতাশা এসেছে। সেই হতাশা কাটানোর জন্য উপত্যকায় একটা বড় ধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলার চেষ্টা চলছে।’
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, অতীতে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ভারতে ছায়াযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। জিয়ার তত্ত্ব ছিল ভারতকে হাজারটি টুকরো করা। কিন্তু শুধু কাশ্মীর নয়। মুম্বাই বিস্ফোরণের সময় স্থানীয় মাফিয়া দাউদ ইব্রাহিমের মতো ব্যক্তিকেও কাজে লাগানো হয়। তখন একটা কৌশল বদলায়। ভারতীয় এজেন্ট প্রোভোকেটরদের কাজে লাগানো শুরু হয়।
রাজনাথ সিংহ বলছেন, ‘এখন পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে আইএসআইএস তাদের কৌশল আবার বদলাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘টুইটার এবং ফেসবুককে ছদ্মনামে ব্যবহার করা হচ্ছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রায় দু’হাজার আইএসআইএস সমর্থকের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বিশেষত আরব জগতে ২০১০ থেকে এই গোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।’
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জিহাদ নামক শব্দটিতে কোরআনে অন্যভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই পৃথিবীতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য একটি বিশেষ কাজ হল জিহাদ। কিন্তু এই জিহাদ নামক শব্দটি অপব্যবহার করে জঙ্গিরা এ দেশে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করছে।’
আনন্দবাজার জানিয়েছে, সম্প্রতি ডিজি এবং আইজি-দের সম্মেলন হয়। সেখানেও এই সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৩-এর ২০ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ইরাকে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তারপর ২০০৩-এর ৯ এপ্রিল মার্কিন সেনাবাহিনী সাদ্দাম হুসেনের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপরেই জারকোয়াই-এর নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী ইরাকে জিহাদি কার্যকলাপ শুরু করে। ২০০৩-এর অগস্ট মাসে ওই জারকোয়াই গোষ্ঠী বাগদাদে রাষ্ট্রসঙ্ঘের দফতরে বোমা ছোড়ে। ২০০৪-এ জারকোয়াই বিন লাদেনের আনুগত্য স্বীকার করে এবং ইরাকে আল কায়গা গোষ্ঠী তৈরি করে। বিন লাদেনের মৃত্যুর পর কিছু দিন চুপচাপ ছিল সে। ২০১৩-র ২৪ জুলাই ইজরায়েল সেনাগোয়েন্দা অধিকর্তা প্রথম খবর দেয় সিরিয়া কিন্তু বিশ্ব জিহাদের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠছে। ২০১৪-য় আইএস-র সমস্ত ফেসবুক-ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
রাজনাথ সিং বলেন, ‘এই আইএস-র কার্যকলাপ সম্পূর্ণ আধুনিক। এরা ২০১৪-র জুলাই মাসে ডাবিক নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা বের করেছে। খবর এসেছে, কাশ্মীর ও কেরলের মতো রাজ্যে এই পত্রিকা বেআইনিভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এরা এখন সোশ্যাল মিডিয়া, পত্রিকার মাধ্যমে সন্ত্রাসের মনস্তত্ত্বকে মতাদর্শের মাধ্যমে বিক্রি করার চেষ্টা করছে।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বরাতে আনন্দবাজার জানিয়েছে, সিরিয়াতে শিশু-কিশোরদের মগজধোলাই হয়েছে; যাতে দীর্ঘ মেয়াদে আনুগত্য পাওয়া যায়। এ বার ওরা কাশ্মীরে কিছু অল্পবয়সী ছেলেদের এই একইভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। ভারতে যে সব শহরগুলিতে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য, সেখানে এরা বেশি সক্রিয়।