একরাম হত্যায় মূল হোতাদের বাঁচানোর চেষ্টা পুলিশের!

SHARE

মূল চক্রান্তকারীদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের তদন্তকে অব্যাহতভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তারা জেলার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের চাপে পড়ে হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল অপরাধীকে চিহ্নিত করার পরিবর্তে স্থানীয় অপরাধীদের গ্রেফতারেই ব্যস্ত রয়েছেন। এমনকি গ্রেফতারকৃতদের চাপ দেয়ার মাধ্যমে নির্দেশ অনুযায়ী সাজানো সাক্ষ্য দিতেও বাধ্য করছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা, অভিযোগ নিহত একরামের পরিবারের এবং স্থানীয়দের।image_85539_0

এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।

নিহত একরামের স্ত্রী তাসলিমা আখতার রোববার এক সাক্ষাৎকারে জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কে দায়ী তা জেলার প্রতিটি মানুষই জানেন, কিন্তু তারপরেও এ ব্যাপারে কিছুই করছেন না তদন্ত কর্মকর্তারা।”

একরাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে পুলিশ গতকাল আরো এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। আটককৃত যুবক আরমান হোসেন কাওসার (১৭) ফেনী সরকারি কলেজের ছাত্র এবং পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল কাইয়ূমের ছেলে।

একরাম হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে কাইয়ূমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের দিন সড়কের মাঝখানে কাইয়ূম একটি ভ্যান ঠেলে দিয়ে পথরোধ করার মাধ্যমে একরামের গাড়ি থামিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশ এ পর্যন্ত প্রায় ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং বাকিরা বিএনপির সমর্থক। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৩ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আরো ২৯ জনকে এখনো খুঁজছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একরামের ওপর হামলাকারীদের একজন-আবিদ তার স্বীকারোক্তিতে অভিযোগ করেন, একরাম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আদিল জড়িত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে আরেকজন- জিহাদ চৌধুরীও এর সঙ্গে আদিলের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে দাবি করেছেন। জিহাদ জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তাকে যাবতীয় নির্দেশনা দিয়েছিলেন যুবলীগ নেতা জিয়াউল মিস্টার এবং এর জন্য জিয়া প্রায় দুই কোটি টাকা খরচও করেছেন। তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আনন্দপুর ইউনিয়নের হারুন-উর-রশীদ মজুমদারের নাম বেশ কয়েকবার উল্লেখ করা ছাড়াও হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরীও এক লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন জিয়া।”

স্থানীয় এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অবশ্য অভিযোগ করেন, এই পুরো বিষয়টিই পুলিশের সাজানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ জিহাদের বক্তব্য তদন্ত কর্মকর্তারা নিজেরাই লিখেছেন। এই অভিযোগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারা বলেন, নিহত একরামেরই ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন হারুন এবং তিনিই একরামকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বসতে সাহায্য করেছিলেন। আর এই কারণেই একরাম ও জিহাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, সংসদ সদস্য নিজামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় আদিল ও মিস্টারের বিরুদ্ধেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পরের এক সপ্তাহ এই দুই ব্যক্তিই প্রকাশ্যে নিজেদের এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও এখন ধারণা করা হচ্ছে, তারা প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন। তারা যেদিন পালিয়ে গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তার দু’দিন পরেই সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করে পুলিশ।

নিহত একরামের বড় ভাই এবং হত্যা মামলার বাদী জিয়াউল হক জসীম বলেন, “আদৌ ন্যায়বিচার পাবো কি-না সে বিষয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে  আছি আমরা, কারণ মূল অপরাধীদের গ্রেফতার ছাড়াই তদন্ত যেকোনো সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। আমরা আশা করছি এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং অভিযুক্তদের প্রত্যেককে গ্রেফতার না করার আগ পর্যন্ত তারা তদন্তের কাজ শেষ করবে না।”

ফেনীর পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ জানান, জিহাদ এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, “আমরা সব তথ্য বিশ্লেষণ করছি এবং এগুলো যাচাইয়ের পরেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

একবার আদিল ও মিস্টারকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেই এই হত্যারহস্যকে ঘিরে থাকা সব ধাঁধাঁর সমাধান করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, “এই দুজনের খোঁজে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে।” সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন।